নানান দেশের মানুষের থাকে নানান রকম হবি। আমাদের দেশের মানুষের অনেকগুলো হবির মধ্যে একটা হলো, পান খেয়ে দাঁত খিলাল করতে করতে মারামারি দেখা, আর মারামারির সময় দু-পক্ষকে উৎসাহ দেয়া। কোথাও তিনজন জড় হলেই একটা মারামারি দেখার আশায় সেখানে ৩০০ জন বাংলাদেশি জড়ো হয়ে উৎসাহ দিতে থাকি, মারামারি না হলে হতাশ হয়ে পড়ি।
সে যাই হোক, অনেক দিন ধরে কোনো উন্নতমানের মারামারি না দেখতে দেখতে হতাশ হয়ে পড়া জাতির জন্য আশার আলো নিয়ে এসেছে বাংলাদেশের স্বনামধন্য দুটি বিশ্ববিদ্যালয়, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি ও নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটি। ফেসবুকে NSU বনাম BRACU মারামারি চাই ইভেন্ট থেকে জানা গেলো, খুব দ্রুতই মারামারি করতে পারে এই দুই ভার্সিটির 'মারামারিপ্রেমী' শিক্ষার্থীরা! ইভেন্টের অথ্য অনুসারে ১৫ ডিসেম্বর, শাহবাগ মোড়ে এই মারামারি অনুষ্ঠিত হবে।
মূলত ফেসবুকে নর্থ সাউথের শিক্ষক পারিসা সাকুর (চিনছেন তো? না চিনলে নাই!) ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির কনভোকেশন নিয়ে রসিকতা করায় দুই বিশ্ববিদ্যালয় এই মারামারির সিদ্ধান্ত নেয়। এমন মারামারির সিদ্ধান্ত কেন নেয়া হয়েছে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির এক গ্ল্যাডিয়েটর জানায়, 'হাত থাকতে কমেন্টে কিসের কথা? খেলা হবে হাতে হাতে! তারা আমাদেরকে পঁচাইছে। আমরা রাজপথে এর জবাব দিতে চাই। ব্র্যাক কতটা ক্র্যাক তারা বুঝবে এবার!'
বুকে বেশ জোরে থাপ্পড় দিয়ে নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য এক গ্ল্যাডিয়েটর বলে, উত্তর-দক্ষিণ জুড়ে আমরা! দরকার হইলে ইস্ট ওয়েস্টরেও দলে আনুম! এরপর তো চারপাশই আমাগো দখলে! হেহে! ইস্পাহানি মির্জাপুর টি ব্যাগ যেমনে লিকার ছড়ায়, তেমনে আক্রমণ হবে চতুর্পাশ থেকে!'
ইভেন্ট থেকে জানা গেলো, এই মারামারি লাইভ দেখানোর জন্য ইতোমধ্যে মিডিয়া পার্টনারও পেয়ে গেছে আয়োজনকারী কর্তৃপক্ষ। বিবিসি, আলজাজিরা, স্টার স্পোর্টস, ইএসপিন সহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জতিক চ্যানেল মারামারিটি লাইভ দেখাবে। বেশি বেশি বিজ্ঞাপন দিয়ে মারামারি দেখা থেকে দেশের মানুষকে বঞ্চিত করতে চায় না বলে কর্তৃপক্ষ কোন ধরণের দেশি চ্যানেলের সাথে এখনো চুক্তিতে যায়নি বলে ধারণা করা যায়!
তবে বেশ কিছু ফেসবুকীয় গোয়েন্দা দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের এই মারামারি থেকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার আশঙ্কারও ইঙ্গিত দিয়েছেন। সরেজমিনে (ইভেন্টের টাইমলাইনে) গিয়ে দেখা যায়, এই মারামারির উৎসব নিয়ে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে উত্তেজনা। সোহানুর রহমান নামে একজন নর্থ সাউথ শিক্ষার্থী ইভেন্টে শামীম ওসমানের 'খেলা হবে' ভিডিও পোস্ট করে বাজিয়েছেন যুদ্ধের দামামা। নিধি ফাইরুজ আনিকার জিজ্ঞাসা, 'মারামারির সময় চিয়ার লেডি হয়ে পছন্দের দলকে উৎসাহ দেবার কোনো চান্স আছে কি? থাকলে কোথায় কিভাবে অবস্থান নিতে হবে, সাহায্য চাইছি।' এর মধ্যে আখলাকুর রহমান সোহেল জানিয়েছেন একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা, 'মারামারির দিন সবাই অবশ্যই আইডিকার্ড সাথে রাখবেন। যুদ্ধক্ষেত্রে যাওয়ার পথেই গার্ড মামারা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে আইডিকার্ডবিহীন যোদ্ধাদের ডিসকোয়ালিফাই করে দিতে পারে।সামান্য একটি কার্ডের জন্য সহযোদ্ধাদের হারাতে চাই না।'
ইভেন্টটির আয়োজক Raiyanism ইভেন্টে জানিয়েছেন, মারামারির আগের দিন অংশগ্রহণকারীদের মোটিভেশনাল স্পিচ দিতে পারেন সবার প্রিয় নাজমুল হাসান পাপন।আশা করা যায়, তিনি একটা স্পিচ দিলেই সবকিছু অটো হবে, অটো! রিদওয়ান ইসলাম দ্বীপ দিয়েছেন বিরাট এক হুমকি, 'মারামারিতে যে দল হারবে তাদেরকে ২ ঘন্টা ড. মাহফুজুর রহমান এবং রানু মন্ডলের যৌথ প্রযোজনায় রিমিক্স গান শোনানো হবে এবং যারা জিতবে তাদের জন্যে কেকা আন্টির নুডুলসের চাটনি + সরবতের ব্যবস্থা করা হোক।' কোনো ভার্সিটিতেই পড়েন না কিন্তু মারামারি করতে চান এমন একজন জানতে চেয়েছেন, 'মারপিট রাতে করা যায় না? আমি নাইটউইং, দিনে তো মারপিট করতে পারব না।' সাদাত মোহাম্মদ ফয়সাল জানিয়েছেন, মারামারির সময় স্পটে চা-বিড়ি সরবরাহের জন্য তিনি একটি টং দোকান খুলতে চান। এছাড়া আশেপাশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেও মারামারিতে যোগদানের জন্য আহ্ববান জানান অনেকে।
অনির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে প্রেমিকা সমাজ নিজেরা নিজেরা মারামারির পাশাপাশি প্রেমিকদের উৎসাহ যোগানোর জন্য ‘বাবু মারোওওওওওওওওওওও!’ স্লোগান দেয়ার প্র্যাকটিসও শুরু করে দিয়েছে!
শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার জরুরি অবস্থা ঘোষণা না করলে আপনিও চলে আসবেন এই ঐতিহাসিক মারামারির সাক্ষী হতে। তলোয়ার না আনেন, নিজেকে রক্ষার জন্য ঢালও না আনেন। সাথে মনে করে সেলফিস্টিকসহ ক্যামেরা অবশ্যই আনবেন!