দিল্লীর দূষিত বায়ুতেও দারুণ পারফরম্যান্সের কৃতিত্ব মিরপুর ও মেট্রোরেলকেই দিলেন ক্রিকেটাররা

৫৯৬ পঠিত ... ১৮:২৭, নভেম্বর ০৪, ২০১৯

দিল্লীতে বায়ুদূষণ মাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ায় গত শুক্রবারই দিল্লী পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সি ঘোষণা করা হয়েছে। ক্রিকেটারদের পলিউশন মাস্ক পরে অনুশীলনের দৃশ্যই বলে দিচ্ছিলো, বাংলাদেশ বনাম ভারতের ম্যাচে দূষণের প্রভাব কতটা পড়বে! অবধারিত ভাবেই নতুন কন্ডিশন ও দূষণের ফলে এই ম্যাচে বাংলাদেশ কিছুটা ব্যাকফুটে ছিলো। কিন্তু উল্টো এমন কঠিন কন্ডিশনকেই ব্যাকফুটে পাঠিয়ে দিয়ে ফ্রন্টফুটে থেকেই বাংলাদেশ দল প্রথম টি-টুয়েন্টি জিতে যায়।

এমন কঠিন দূষণের কন্ডিশনকে কীভাবে বায়ুর সাথে উড়িয়ে দিলো বাংলাদেশ দল? হ্যাঁ, আপনার আমার মতোই বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা এই কন্ডিশনকে জয় করার কৃতিত্ব দিচ্ছেন পলিউশনের ধারক ও বাহক মিরপুর ও মেট্রোরেলকে। হোমগ্রাউন্ড, বিসিবি ভবন, প্র্যাকটিস গ্রাউন্ড সব মিরপুরে থাকাতেই এমন কন্ডিশন জয় করা সম্ভব হয়েছে বলে জানান তারা।

অভিষেক ম্যাচ খেলতে নেমেই ২৬ রানে শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করা নাঈম একটি দূষিত (ফেক) আইডির মাধ্যমে জানান, 'অভিষেকের আগে তো আমি সারাদিন মিরপুরেই পড়ে থাকতাম। তাও স্টেডিয়ামের বাইরে। মিরপুরের এমন ধুলাবালি ছিলো নিত্য দিনের খাবার। বায়ু দূষণের কারণে তো মনে হচ্ছিলো আমি দিল্লীতে না, মিরপুরেই আছি। পুরাই হোম কন্ডিশন ভাই। ফলাফল তো দেখতেই পাচ্ছেন। বায়ুর কোন চাপ না নিয়ে কি খেলটাই না দেখালাম।'

জয়ের নায়ক মুশফিক মিরপুর আর মেট্রোরেলের অবদান স্বীকার করার পাশাপাশি মেট্রোরেল ও মিরপুরের জ্যামের কথা বলেন। একজন ভুয়া প্রতিনিধির মাধ্যমে তিনি জানান, 'বাসা থেকে প্র্যাকটিস গ্রাউন্ডে আসার সময় অনেকক্ষণ মেট্রোরেলের জ্যামে ধৈর্য ধরে বসে থাকতাম। গাড়িও স্লো আগাতো। এরপর ইনডোর স্টেডিয়ামের পাশ হয়ে মিরপুর ৬ নাম্বারের দিকের জ্যামমুক্ত রাস্তা দিয়ে গাড়ি উড়াধুড়া স্পিডে চোখের পলকে পৌঁছাইয়া যাইতো মাঠে। আমার কালকের ইনিংসটা দেখেন। স্লো স্টার্ট, এরপর উড়াধুড়া বাউন্ডারিতে চোখের পলকে পৌঁছে গেছি জয়ের বন্দরে। পুরাই মিরপুর আর মেট্রোরেলের ফরশ্যাডো বস।'

সম্প্রতি বিয়ে করে মিরপুরের চেয়ে শ্বশুরবাড়িতে বেশি সময় কাটানোর ফলে লিটন দিল্লীর বায়ু দূষণের সাথে মানিয়ে নিতে পারেননি। শ্বশুরবাড়ির জন্য মিরপুরকে অবহেলা করার ফল পেয়েছেন হাতেনাতেই। দলের বিবাহিত ও অবিবাহিত খেলোয়াড়দের উদ্দেশ্যে নিজের এই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিতে বলে লিটন জানান, 'শ্বশুর বাড়িতে যত জামাই আদরই থাকুক না কেন মিরপুরকে অবহেলা করা যাবে না। শ্বশুর বাড়িতে থাকলেও প্রতিদিন দুই বেলা নিয়ম করে মিরপুরে বাতাসের সাথে মোলাকাত করে যেতে হবে। আমার মতো ভুল যেন আর কেউ না করে!'

দুর্দান্ত ক্যাচে ডুবকে আউট করা আফিফ জানান, 'মিরপুরে বাতাসে উড়াউড়ি করা ধুলা নিয়ে ধুলাকেলি তো আর কম করি নাই! এমন ক্যাচ তো কোন ব্যাপারই না আমাদের জন্য!'

ধুলার ঘূর্ণির সাথে মিরপুরের জ্যামে বসে ফাঁক পাইলে গাড়িগুলোর বিভিন্ন বাঁক নিয়ে এগিয়ে যাওয়া থেকেও এমন ঘূর্ণি বলের দীক্ষা পেয়েছেন বলেও জানালেন লেগ স্পিন সেনসেশন আমিনুল ইসলাম।

মিরপুরে ক্রিকেটারদের যে ট্রেনিং হয়েছে, তাতে তারা যেকোনো পৃথিবীর যেকোনো কন্ডিশনে খেলতে পারবে, এমন মতামত দিয়ে একজন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ জানান, 'মিরপুরের উঁচুনিচু রাস্তায় নিয়মিত আসা যাওয়া করায় তারা পাহাড়ে পর্বতে, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অনেক উপরেও দুর্দান্ত পারফর্ম করতে সম্ভব। প্রচন্ড ধুলাবালি নিয়মিত সহ্য করে যাওয়ায় তারা মরুভূমিতেও টিটুয়েন্টি খেলতে পারবেন। এমনকি বর্ষা সিজনে শেওড়াপাড়ায় জমে থাকা পানি পার করে যারা প্র্যাকটিসে যান, তাদের জন্য মাঠের পাশাপাশি পানিতে ওয়াটার-ক্রিকেট খেলাও কোনো ব্যাপার না।'

দিল্লীর দূষণে আপনাদের প্রবলেম না হলে মাস্ক পরে আমাদের ভয় দেখালেন কেন? এমন জিজ্ঞাসায় বাংলাদেশ কোচ জানান, 'এটা আসলে একটা আইওয়াশ ছিলো! সব আমাদের প্ল্যানেরই অংশ। খেলা তো শুধু মাঠে হয় না। সিরিজ ঘোষণার পর থেকেই কিন্তু মাইন্ড গেম শুরু হয়ে যায়। ওরা ভাবছিলো ধুলায় আমরা কাবু হয়ে গেছি। কিন্তু ওরা তো আর জানে না, আমাদের ছেলেরা মিরপুরের ধুলাতেই অনুশীলন ও অনুশীলন ম্যাচ, প্রেম, ডেটিং সব করে। দিল্লী দেখেছো ভায়ারা, মিরপুর দেখোনি...'

৫৯৬ পঠিত ... ১৮:২৭, নভেম্বর ০৪, ২০১৯

Top