উল্টো বাংলাদেশ : যেখানে ছেড়া টাকার বিছানায় শুয়ে লাখ টাকার কাঁথার স্বপ্ন দেখতে হয়

২০৩৭ পঠিত ... ১৭:১৭, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৯

বগুড়ার শাজাহানপুরের জালশুকা এলাকার সড়ক ও সড়কের পাশের ডোবায় পড়ে আছে বিপুল পরিমাণ কুচি কুচি করে ছেঁড়া টাকা। এখানে ১০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকার ছেঁড়া নোট আছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার খাউড়া ব্রিজের পূর্ব দিকের সড়ক ও পাশের ডোবায় এমন চিত্র দেখা গেছে।

ওই ডোবায় ছেঁড়া টাকা তোলার কাজে ব্যস্ত একজন জানান, ২২ সেপ্টেম্বর রোববার সকালে স্থানীয় দুজন নারী বস্তায় করে টুকরো টাকা এখান থেকে সংগ্রহ করে পাশের গ্রামে নিজেদের বাড়িতে নিয়ে যান। জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করাই ছিল তাঁদের উদ্দেশ্য। এটা শোনার পর তিনিসহ বেশ কয়েকজন এখানে এসে দেখেন, ঘটনা সত্য। তবে বিষয়টি আজ পুলিশকে জানানো হয়। খবর: প্রথম আলো।

তবে ইতোমধ্যে জানা গেছে, টাকার টুকরোগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের পার্চিং করা পরিত্যক্ত টাকার টুকরো। ময়লা হিসেবে এগুলো ফেলে দেওয়া হয়েছে (তথ্যসূত্র: দৈনিক সমকাল)।

ছবি এবং ভিডিওতে দেখা যায়, ছেড়া টাকার স্তূপের আশেপাশে সৃষ্টি হয়েছে উৎসবমুখর এক পরিবেশ। স্থানীয় শিশুরা দু হাতে ছেড়া টাকা নাড়ছে, চাড়ছে, ওড়াচ্ছে। কেউ আবার সেই ছেড়া টাকার স্তূপের ওপর শুয়ে ছবি তুলছে! আমাদের প্রতিনিধিও এত টাকা (তা সে ছেড়াই হোক না কেন!) দেখে নিজেকে ধরে রাখতে না পেরে দ্রুত কল্পনামাধ্যমে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান।

কীভাবে খুঁজে পাওয়া গেল এই কুচি কুচি টাকা। উপস্থিত একেকজন জানালেন একেক রকম তথ্য। একজন জানালেন, 'আমি আর আমার এক বন্ধু হাঁটতেছিলাম। আমার বন্ধু সামনে সামনে হাঁটতেছিল, আমি পিছে পিছে হাঁটতেছিলাম। আমার বন্ধুরে বাঘে খায়ালাইলো, আমি টাকা পাইলাম। হা হা হা...'

আরেকজন জানালেন, 'গত রাইতে স্বপ্নে দ্যাখছি আমি অনেক বড়লোক, বেবাক ট্যাকা আমার। ট্যাকা কুচি কুচি কইরা ছিড়তাছি আর উড়াইতেছি। ঘুমেত্তে উইঠা মনে কইলো, যাই ডোবার পাশেত্তে ঘুইরা আসি। এরপরই দেহি এইহানে কুচি কুচি ট্যাকা পইড়া আছে। কি একটা তাজ্জব ব্যাপার কন তো ভাই...'

এত এত ছেড়া টাকা খুঁজে পেয়ে কী পদক্ষেপ নিলেন? একজন জানালেন, 'নগদে এক বস্তা কসটেপ কিইন্যালাইছি। এর চেয়ে বেশি ছেড়া কিন্তু কসটেপ দিয়া লাগানো ট্যাকা তো মার্কেটে সেই কবেত্তে চলতেছে, এইগুলাও ঠিকমতো জোড়া লাগাইলে চালান যাইব।' আরেকজন জানালেন, 'পাঁচ বস্তা নিছি, চুলায় লাকড়ির বদলে এহন থেইকা ট্যাকা পুড়ায়া রান্না করমু। দেখমু কেমুন ট্যাস হয়।'

আরেকজন ব্যক্তিকে তুমুল উৎসাহে একের পর এক ছেড়া টেকা বস্তাবন্দি করতে দেখা যায়। কী করবেন এই ছেড়া টাকা দিয়ে, জানতে চাইলে তিনি ফিক করে হেসে বলেন, 'এইগুলা দিয়া বালিশ বানামু। এরপর সেইডা রূপপুর কেন্দ্রে বিক্রি করুম। হে হে... একটু চালাক না হইলে জানেনই তো টেকা কঠিন।'

ছেড়া টাকা নিয়ে ক্রীড়ারত স্থানীয় শিশুদের কাছে অনুভূতি জানতে চাওয়া হলে একজন জানায়, 'এত ট্যাকা জিন্দেগিতে দেহি নাই। ছ্যাড়াফাড়া হইলেও, ট্যাকা তো ট্যাকাই। অনেক ইচ্ছা ছিল দুই হাতে ট্যাকা উড়ামু। আইজকা সকাল থেইকা কুচি কুচি ট্যাকা উড়াইছি। আমার খুব ভালো লাগতেছে।'

ছেড়া টাকার স্তূপের উপর গড়াগড়ি করতে থাকা আরেক শিশু জানায়, 'বাসায় তোষক নাই। আজকেত্তে আর মাটিত ঘুমামু না, ট্যাকার উপর ঘুমামু।' এ পর্যায়ে সে টাকার উপর আরেকবার গড়াগড়ি করে বলে, 'তবে বাসায় খ্যাতাও (কাঁথা) নাই। শীত আসতেছে, ঘুমাইতে কষ্ট। ট্যাকাগুলা জোড়া লাগায়া খ্যাতা বানান যাইব না ভাই? লাখ ট্যাকার খ্যাতা গাইয়ে দিইয়া ঘুমাইলে ট্যাকার গরমে শীত লাগব না।'

২০৩৭ পঠিত ... ১৭:১৭, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৯

Top