বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশ্বিক র্যাংকিংয়ে খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থানে নেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রায়ই বিভিন্ন সংস্থার করা বিশ্ববিদ্যালয় র্যাংকিংয়ে কখনো হাজারের বাইরে, কখনো হাজার হাজারেরও বাইরে আবার কখনো তালিকার বাইরেই অবস্থান হয় ঢাবির। সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অর্জন করলেন এক বিরল সম্মাননা। বিশ্বের পরিচ্ছন্নতম ভিসি নির্বাচিত হয়েছেন ঢাবি ভিসি ড. আখতারুজ্জামান।
সম্প্রতি ইউনিভার্সাল গাইডলাইন অফ ক্লিনলিনেস ইন ইন্সটিটিউশনস (ইউজিসিআই)-এর করা একটি জরিপে ‘ক্লিনেস্ট ভিসি’ র্যাংকিংয়ের শীর্ষস্থান অর্জন করেছেন ড. আখতারুজ্জামান। বিশ্বের প্রায় তেরো হাজার উপাচার্যকে পিছনে ফেলে এই গৌরব অর্জন করেছেন তিনি। জানা গেছে, ঢাবিতে ‘ক্লিন ক্যাম্পাস উইক’-এর উদ্বোধন করতে গিয়ে এক অভাবনীয় কাজের ফলস্বরূপই এই খেতাব পেয়েছেন তিনি। গত ৫ আগস্ট (সোমবার) এই কর্মসূচির উদ্বোধন করতে গিয়ে রাজু ভাস্কর্য সংলগ্ন পরিষ্কার রাস্তায় ময়লা ফেলে সেটিই প্রতীকী পরিষ্কার করেন ঢাবি উপাচার্য। সংক্ষিপ্ত এই পরিচ্ছন্নতা অভিযানে ফটোসেশনের মাধ্যমে চমৎকার কিছু ছবিও তুলে নেন তিনি। এই কাজের উপর ভর করেই ড. আখতারুজ্জামান পরিচ্ছন্নতম ভিসি হতে পেরেছেন বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
বাংলাদেশের জন্য এ গর্বের বিষয়টি নিয়ে ইউজিসিআই-এর সাথে যোগাযোগ করলে সংস্থাটির মহাসচিব eআরকির বাংলাদেশি পরিচয় জানতে পেরে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠেন। কেবলমাত্র ড. আখতারুজ্জামানের দেশের লোক হওয়ায় আমরা একান্তভাবে কথা বলতে পারি তার সাথে। ক্লিনেস্ট ভিসি খেতাব নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা অনেকদিন ধরেই ভাবছিলাম, একটা র্যাংকিং করব এমন। কিন্তু সত্যি বলতে কি, নরওয়ে, সুইদেন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এসব দেশের অনেকগুলো ভার্সিটির ভিসির মাঝে টাই হয়ে ছিল ব্যাপারটা। আমরা কোনভাবেই তাদের কাউকে এগিয়ে রাখতে পারিনি। কিন্তু ঢাবি আমাদের কাজটিকে একেবারে পানির মতো সহজ করে দিয়েছে।’
কী করে পরিচ্ছন্নতা অভিযানের মতো একটি কাজ এত বড় ভূমিকা রাখতে পারল? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দেখুন, সব বিশ্ববিদ্যালয়েই নিশ্চয়ই ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার হয়। কিন্তু প্রাচ্যের অক্সফোর্ড সবসময়ই স্বতন্ত্র। তাই তো, পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি পালন করতে তাদের অন্য কোথা থেকে ময়লা এনে ফেলে সেটি পরিষ্কার করতে হয়। অর্থাৎ এই ক্যাম্পাসে কোন নোংরা নেই। এতটা পরিচ্ছন্ন ক্যাম্পাস আমরা কোথাও দেখিনি।’
অন্যদিকে, পরিচ্ছন্নতা র্যাংকিংয়ে দক্ষিণ ঢাকায় অবস্থিতি ঢাবির ভিসিকে শীর্ষে দেখে মুষড়ে পড়েছেন উত্তর ঢাকার মেয়র আতিকুল ইসলাম। পরিচ্ছন্ননতার মেয়রদের র্যাংকিংয়ে তাকে কেন শীর্ষস্থানে রাখা হয়নি, তা নিয়ে তিনি আপত্তি তুলেছেন বলে জানিয়েছে একাধিক অবিশ্বস্ত সূত্র। এ বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি উত্তর ঢাকার মেয়র নির্বাচিত হবার কিছুদিন পরেই একটি পরিচ্ছন্নতা অভিযান ঠিক এভাবেই পরিষ্কার রাস্তায় ময়লা ফেলে সেটি পরিষ্কার করার মাধ্যমে শুরু করা হয়। সেই বিবেচনায় ঢাকাও পৃথিবীর পরিচ্ছন্নতম নগরী অর্থাৎ তারও হওয়া উচিত পরিচ্ছন্নতম মেয়র।
পাশাপাশি, সম্প্রতি পরিষ্কার রাস্তা ঝাড়ু দিয়ে এডিস মশা নিধনের কর্মসূচী চালনা করা হাছান মাহমুদও ঢাবি ভিসির এহেন কার্যকলাপকে প্রতিযোগিতা হিসেবেই দেখছেন। এমনটাই নিশ্চিত করেছে বেশ কিছু অনির্ভরযোগ্য সূত্র।
অন্যদিকে, ড. আখতারুজ্জামানের নাম গিনেজ বুকে উঠতে পারে বলে জানিয়েছে গিনেজ কর্তৃপক্ষ। তবে কোন ক্যাটাগরিতে তিনি প্রথম হবেন, সে ব্যাপারে এখনো তারা নিশ্চিত হতে পারেনি।