ভারতের চন্দ্রবিজয়ে যারপরনাই আনন্দিত হবার পরই মহাকাশবিজ্ঞানী সোমনাথ বললেন, ‘বেদে সব আছে।‘
মোদীজী সদ্য জয় করা চন্দ্রের দক্ষিণ মেরুর নাম দিলেন, শিবশক্তি।
উত্তর প্রদেশে সেই আনন্দে এক স্কুল শিক্ষিকা, এক মুসলিম শিশুকে দাঁড় করিয়ে হিন্দু শিশুদের নির্দেশ দিলেন, তোমরা একে একে এসে এই মুসলিম বালকটিকে চড় দাও।
আসলে বিজেপির নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হলো। বিজেপি চাইছে, প্রগতিশীলেরা সোমনাথ ও মোদীজীর ধর্মান্ধতার কড়া সমালোচনা করুক। যাতে বিজেপি ভক্তরা ভোটার ভেড়ার পালকে বোঝাতে পারে, ঐ দ্যাকো কংগ্রেসের প্রগতিশীলেরা হিন্দু ধর্মের শত্রু।
এগুলো হচ্ছে ভিলেজ পলিটিক্সের গেম থিওরি। কলতলা ও পাতকূয়া আপনাকে জোর করে তাদের কাউডাং ফেস্টিভ্যালে নামাতে চায়। তারপর কাউডাং অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে বলে ভোটের গরুগুলোকে ভোট কেন্দ্রে টেনে আনতে চায়।
আহারে আমার বিজন দক্ষিণ এশিয়া, ভ্যাড়ভেড়ে গ্রাম।
ভিলেজ পলিটিক্সের ডমিনো এফেক্ট থাকে। মোদীর চাওয়া বাংলাদেশে বিজেপির সারিন্দা জামায়াত বেজে উঠুক। আওয়ামী কোটালপুত্রেরা তখন জঙ্গীদমনে বের হোক।
উত্তর প্রদেশে মুসলিম শিশুর সঙ্গে হিন্দু শিক্ষিকার আদিমতার ভিডিও দেখে বাংলাদেশের মুসলিম শিশুদের শিশু মনে প্রতিঘৃণা তৈরি হোক। কোথাও কোনো একটি হিন্দু নির্যাতনের ঘটনা ঘটিয়ে দিতে পারলেই কেল্লাফতে!
আওয়ামী লীগ তখন তার হারমোনিয়াম লীগকে রাস্তায় নামিয়ে দেবে, অসাম্প্রদায়িকতার লাল লিপস্টিক মেখে; সেই পাকিস্তানের আদিমতার গল্পগুলো বলবে নানা লাস্যে।
শিবব্রত দাদা গালে সুপোরি পুরে ‘মরলেও আওয়ামী লীগ, বাঁচলেও আওয়ামী লীগ’ গপ্পো চড়ে জড়ো করবে ভেড়ার দল।
এইসব যাত্রাপালা ও আলকাপনৃত্যের মধ্যে দরিদ্র হিন্দু সমাজের জীবন বিপন্ন হলে, তারা যদি পশ্চিমবঙ্গে শরণার্থী হয়; তবে বিজেপির ভোট বাড়বে!
হতচ্ছাড়া পশ্চিমবঙ্গ; কোনোভাবেই যে বিজেপির বিষদাঁত ঢোকানো যাচ্ছে না সেখানে। অথচ বাংলাদেশ কী সুন্দর আঁচল পেতে রেখেছে বিজেপির টেক অফ-এর মসৃণ রানওয়ে হিসেবে।
পশ্চিমবঙ্গের কিংবদন্তীর বাম নেতা জ্যোতি বসু বলেছিলেন, একটি দেশের সরকার না চাইলে সে দেশে কখনও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হতে পারে না।
ওদিকে আওয়ামী লীগের হারুনের ভাতের হোটেল লীগ মসজিদুল নাব্বিতে ধর্মীয় আবেগের অশ্রুবর্ষণ করছে; খেজুর গাছের দিকে তাকিয়ে নির্নিমেষ। দলে দলে থাগস অফ বেঙ্গলের লাইলাতুল ইলেকশনের সিলেকশন প্রার্থীরা ওমরাহ যাত্রায়।
জামায়াত পুলিশকে ফুল দিয়ে রাজপথেই আছে; কিছুদিন আগে আওয়ামী লীগের ডেপুটি স্পিকার জামায়াত নেতার বাড়ির উঠোনে যে মানবতার চারা রোপণ করেছেন; তা বড় হচ্ছে। আহা শুধু শাফি হুজুরটাই ঘুমিয়ে আছে কবরে; নইলে হেফাজতকে মিনেরেল ওয়াটার দিয়ে সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে এনে শোকরানা মেহেফিল টু পয়েন্ট ও করা যেতো!
ধর্মাবতার যুধিষ্ঠির হানিফ আহাজারি করে বলছেন, মির্জা ফখরুল একজন শিক্ষক হয়েও এতো মিথ্যা বলেন কী করে!
বিষাদসিন্ধু যাত্রাপালার বিবেক ওবায়দুল কাদের বিলাপ করছেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে একদিনে আওয়ামী লীগকে শেষ করে দেবে।
গুমগঞ্জের লালসালুর মাজারের মজিদ যেন শামীম ওসমান, তিনি জিকিরে ফিকিরে আল্লাহ আল্লাহ করছেন।
আর কবিগুরু নিষেধ করেছিলেন, ওরে আজ তোরা খাস নে ঘরের বাহিরে! অথচ নিষেধ না মেনে দূতাবাসের প্রতিরক্ষা সচিবেরা রেস্তোরায় নৈশভোজ করলে; রজ্জুতে সর্পভ্রম হয় সহমত ভাইদের মর্সিয়া শিবিরে।
নির্বাচনের তপশীল ঘোষণার আর মাত্র দুই মাস। সুতরাং আওয়ামী লীগের তপশিলি সম্প্রদায়ের শিবব্রত দাদা ও লেটুর দলের সহমত ভাইকে এখন তানানানা করে সময়টা পার করতে হবে; ভোটসমনিয়ার কামাসূত্র রাতটিকে ডেকে আনতে।
আপনি কী পারবেন ভিলেজ পলিটিক্সের এই অসভ্য কাউডাং ফেস্টিভ্যাল নাইটস পেরিয়ে সভ্যতার সূর্যোদয়ে পৌঁছুতে!
আপনাকে কেবল অহিংস থাকতে হবে। মোদী হেট্রেড স্টোরের ঘৃণা না কিনে ভালোবাসতে হবে হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃস্টান-আদিবাসী বন্ধুদের। তাদের নিরাপত্তা হতে হবে।
আপনাকে আওয়ামী লীগের বিদ্বেষের কারবারে শান্ত থাকতে হবে। আপনি লক্ষ্য করেছেন, গত পনেরো বছরে লীগের ঘৃণা কারবারিদের মুখমণ্ডলের রুপান্তর। চেহারাগুলো ধীরে ধীরে নরভোজি লালসার লোলচর্ম জাঢ্য রুপ নিয়েছে।
ঘৃণা-বিদ্বেষ শঠতার ছাপ মানুষের মুখমণ্ডলে পড়তে বাধ্য। ভালোবাসার মানুষ সাদা-বাদামী-শ্যাম যাই হোক; তার মুখমণ্ডলের সৌন্দর্য্য থাকে। তাকে দেখলে শিশুরা ভয় পায়না; ছোট্ট হাত বাড়িয়ে দেয়।
সভ্যতার ভোর যে আপনাকে দেখতেই হবে; আমাদের অমল শিশুদের জন্য রেখে যেতে হবে এক সভ্য জনপদ। ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-সম্প্রদায়-দলের বিভাজন নয়; বহুত্ববাদী সমাজই সভ্যতার সর্বশ্রেষ্ঠ নিদর্শন।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন