শনিবার আর রবিবার এই দু’টো দিন মেন্টাল হলিডে থাকতে চেষ্টা করি। আজ চৌধুরি মোবাশ্বের আংকেলের দাওয়াতে গলফ ক্লাবে গিয়েছিলাম। উনি আমার ফাদার ইন ল'র বন্ধু। উনারা দু’জন নিয়মিত গলফ আড্ডা দিতেন। মোবাশ্বের আংকেল সেই ট্র্যাডিশন ধরে রাখতে আমাকে মাঝে মাঝে গল্প করতে ডাকেন। গলফটা পুঁজিবাদি খেলা বলে অপছন্দ করতাম। কিন্তু যখন দেখলাম আমার আব্বার বয়েসি কিছু লোক; একই রকম অর্থনৈতিক কাঠামো আর শিক্ষাগত বৈশিষ্ট্যে আনন্দময়; একটু শখ করে গলফ খেলেন; তখন ভুল ভাঙলো।
চোর-ডাকাত দাবা খেললেও তা অভিশপ্ত। সুতরাং চোর-ডাকাত গলফ খেলে বলে; আমি খেলবো না; তা তো হয় না। তাছাড়া আমার আব্বা খুব ভালো স্পোর্টসম্যান ছিলেন; সেই ফিটনেস আর স্ট্যামিনা দিয়ে গেছেন। সুতরাং খেলা যাক দু'এক রাউন্ড গলফ এবার। কিন্তু সেই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পর রোদের সঙ্গে তেমন দেখা নেই; তবু আশি বছর বয়েসিরা যে রোদে গলফ খেলছেন; সেখানে যদি আমি রোদকে ভয় পাই; সেটা কেমন দেখায় না!
মোবাশ্বের আংকেল, ভালো একটা শট খেলে বললেন, 'আই এম আ গ্রেট ফ্যান অফ শেখ মুজিব অ্যান্ড হাসিনা!
: তাই নাকি!
: বাপ-বেটি মৃত্যুকে ভয় পান না। আর ইমরান খান দেখো ভয়ে বাড়ি থেকে বের হয় না; ওরা আমাকে মেরে ফেলবে বলে আর্তচিতকার করে।
: ইমরান খান বেঁচে থাকতে চান; অসম্পূর্ণ যুদ্ধটা শেষ করতে; সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফেরত পাঠাতে; আত্মসমর্পণ করাতে।
: ইউ আর রাইট। মিলিটারি অ্যান্ড মোল্লা; দে আর দ্য মেইন প্রবলেমস। একদল অস্ত্রের ভয় দেখায়; আরেকদল বোমা হামলার ভয় দেখায়। যে কারণে পাকিস্তান এই দুই ভয়ে একই বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে।
: ট্রু-ভেরি ট্রু; রাইট ইউ আর আংকেল।
: মুজিব দেখো এই পাকিস্তান আর্মিকে নাকে খত দিয়ে বাংলাদেশ থেকে ব্যারাকে ফেরত পাঠিয়েছেন।
: আর হাসিনা!
: হাসিনা ওয়ার ক্রিমিনালদের বিচার করেছেন। মোল্লাদের তাদের রাইট প্লেসে রেখে দিয়েছেন। যাও মসজিদে ধর্মজ্ঞান দেও। ভয় দেখাতে বোমা হামলা করতে এসো না; তাহলেই শাস্তি পাবে। লাইক ফাদার; লাইক ডটার।
: কিন্তু উনার দলের লোকেরা লুণ্ঠন করে দেশটাকে শেষ করে দিলো আংকেল। আমার আম্মা লোডশেডিং-এর দোজখে পড়ে গেছেন।
: এই সাউথ এশিয়ান থাগসদের কথা কী বলবো বলো! এদের কত টাকা চাই; কত বাড়ি চাই-কত গাড়ি চাই; এদের কেন পশ্চিমে সেকেন্ড হোম লাগে বলোতো। তোমার শ্বশুর-আমি বা তোমার বাবা; আমরা দেখো কী সুন্দর একটা জীবন যাপন করলাম। কৈ আমাদের তো সেকেন্ড হোম কিনতে হয়নি; হাজার কোটি টাকা ডাকাতি করতে হয়নি; গরীবের হক মেরে। মাঝে মাঝে মনে হয়, অন্য কোন গ্রহের উন্মাদ আশ্রম এই দক্ষিণ এশিয়া।
: কিংবা অন্য কোন গ্রহের দোজখ।
: যাকগে অনেক সিরিয়াস আলাপ করে ফেললাম; এবার একটা সত্য ঘটনা শোনো! সেই আমলে বৃটিশের রেলপথ স্থাপনের পর তাতে চড়ে বিস্মিত দক্ষিণ এশীয়রা। আরো স্তম্ভিত সর্দারজীরা। তারা গুরু দুয়ারায় বসে মিটিং করে ঠিক করলো; কয়েকজন শিখ লন্ডন যাবে দেখতে; বৃটিশরা কী করে এমন ট্রেন বানাতে শিখলো! এতো উন্নয়নের রহস্য কী! কয়েকজন শিখ লন্ডন ঘুরে ফিরে দেখে এসে আবার গুরুর দুয়ারার মিটিং-এ রিপোর্ট করলো, পাজি কী আশ্চর্যের কাণ্ড; লন্ডনে ছোট ছোট বাচ্চারা ইংরেজিতে ফ্লুয়েন্ট!
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন