ম্যান অ্যান্ড সুপারম্যান: প্রতিহিংসা বনাম ক্ষমা

৩৭৫ পঠিত ... ১৮:২৪, মে ২৯, ২০২৩

Man-and-suparman

গতকাল একটি ছবি চোখে পড়লো; রাহুল গান্ধী যাত্রা বিরতিতে ট্রাক চালকদের সঙ্গে বসে আড্ডা দিচ্ছেন। ভারতজোড়ো আন্দোলনে রাহুল গান্ধী বিদ্বেষে বিভাজিত ভারতকে জুড়তে চেষ্টা করেছেন এমনি ভালোবাসায়।

২০২১ সালে পন্ডিচেরিতে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আড্ডা দেবার সময় তিনি বলেন, ১৯৯১ সালে আমার বাবার হত্যাকাণ্ড আমাকে কষ্ট দিয়েছে কিন্তু হত্যার সঙ্গে জড়িতদের প্রতি কোন রাগ কিংবা ঘৃণা নেই।

রাহুল ও প্রিয়াংকা গান্ধী তাদের পিতার হত্যাকারীর সন্তানদের কষ্ট দেখে আলোড়িত হয়েছেন। রাহুল বলেছেন, আমি জানি প্রিয়জনের অনুপস্থিতির বেদনা কেমন হয়। কাজেই আমার বাবার হত্যাকারীর সন্তানদের প্রিয়জন থেকে দূরে থাকার কষ্ট আমাকে স্পর্শ করে। পিতার হত্যাকারীকে ক্ষমা করে দেন, রাহুল ও প্রিয়াংকা।

দক্ষিণ এশিয়ার চোখের বদলে চোখের অন্ধ নরভোজি সমাজে ক্ষমা অত্যন্ত অপরিচিত বিষয়। জেনেটিক্যালি এভলভড না হলে রাহুল কিংবা প্রিয়াংকার মতো ক্ষমার গুন অর্জন করা যায় না।

কেউ উৎকৃষ্ট মানুষ হয়ে জন্মে না। কিন্তু ক্রমাগত উতকৃষ্ট মানুষ হবার প্রচেষ্টা চালালে একসময় তা ঠিকই জেনেটিক বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়। ইন্দিরা গান্ধী স্বর্ণমন্দির হামলায় যে নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন করেছেন; এমন নিষ্ঠুরতা রাজীব গান্ধীর মাঝে পরিলক্ষিত হয়নি। তাছাড়া রাজিব গান্ধীর বাবা ছিলেন পারসি বংশোদ্ভুত কোমল হৃদয়ের মানুষ। রাজীব গান্ধীর স্ত্রী সোনিয়া গান্ধী ইতালির এক রাজনীতিকের মেয়ে। কংগ্রেসের সভানেত্রী হিসেবে তিনি যেদিন নিজে প্রধানমন্ত্রী না হয়ে আরেক সুপারম্যান ড মনমোহন সিং কে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করলেন; সেদিন বুঝলাম বার্নার্ড শ তার ম্যান অ্যান্ড সুপারম্যান নাটকে কেমন উৎকৃষ্ট মানুষের আকাংক্ষা রেখেছিলেন।

উৎকৃষ্ট মানুষ বিষয়ে নিটশের চিন্তাভাবনার মাঝে ভ্রান্তি ছিলো; ফ্যাসিস্ট তৈরির প্রণোদনা ছিলো। কিন্তু বার্নার্ড শ তার ম্যান এন্ড সুপারম্যানে উতকৃষ্ট গুনাবলী অর্জনের জন্য সাম্য চিন্তা, শিল্প-সাহিত্য-দর্শনের প্রতি অনুরাগ; ঔদার্য্য অনুশীলনের পরামর্শ রাখলেন গল্পচ্ছলে। এই সুপারম্যান হবে অহিংস।

রাজীব-সোনিয়া সেই শ'র ম্যান অ্যান্ড সুপারম্যানের নায়ক নায়িকার মতো; যারা সচেতনভাবে মহৎ গুনাবলী অর্জনের চেষ্টা করেছেন। ভারতের মায়ার সঙ্গে ইতালির নির্লোভ মনের মিশেল ঘটিয়েছেন। ভারতের প্রতিহিংসা বর্জন করে পারস্যের ক্ষমার গুণ অনুশীলন করেছেন।

রাহুল ও প্রিয়াংকা সেই সুপারম্যানের ধারণা; যারা নিরহংকার-উদার-ক্ষমাপ্রবণ-সামাজিক-শ্রেণীচিন্তা বর্জিত অগ্রসর মানুষের প্রতিরুপ।

এরকম ব্যাপার এমন গুণাবলী আমরা আমাদের জনপদে নেতা-নেত্রী বা তাদের সন্তানদের মধ্যে খুঁজলে হতাশা আরও বাড়বে।

আমরা বরং খুব ভালো করে সাঁতার শিখি। এসব লেখা লিখে চক্ষুশূল সুশীল হিসেবে পরিগণিত হয়ে কবে টুস করে খরস্রোতে পড়ে যেতে হয়; অথবা বস্তায় পুরে নদীর কালচে জলে চুবিয়ে আনা হয়; কে জানে!

৩৭৫ পঠিত ... ১৮:২৪, মে ২৯, ২০২৩

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top