পাকিস্তানিদের জন্য ‘ফাইনাল কাউন্টডাউন’

১৬৪ পঠিত ... ১৬:৫৭, মে ১১, ২০২৩

পাকিস্তানিদের

ইমরান খানের গ্রেপ্তার পাকিস্তানের ইতিহাসে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জনরায়ে জেতার পর ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনপ্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এর পরিণতি আমাদের সবার জানা।

বঙ্গবন্ধুর জনম্যান্ডেটকে অগ্রাহ্য করে পাকিস্তানের সেনাশাসক বাংলাদেশকে এর মুক্তিযুদ্ধে বাধ্য করে। দেশকে স্বাধীন করা আর বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করা; এ দুই লক্ষ্যে জীবন বাজি রাখেন বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ।

ইমরান খান নিজেই গত নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ইতিহাসের এ পরম্পরার কথা উল্লেখ করে বলেছিলেন, ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর সাম্প্রতিক ২০১৯-এর নির্বাচনে পাকিস্তানের মানুষের মুক্তির আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হয়েছে। ক্ষমতায় এসেই পাকিস্তানের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর অশুভ হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে লড়াই করতে করতে ইমরান খান তার দেশের দুর্নীতির রাক্ষস আর পরিবারতন্ত্রের জগদ্দল পাথর সরাতে মরিয়া হয়ে ওঠেন যেন। স্বাধীনচেতা মনোভাবের কারণে পশ্চিমা শক্তির সামনে ‘ফ্রেন্ডস নট মাস্টার্স’ দেহভঙ্গিতে চলতে শুরু করেন।

রাজনীতিতে ইমরানের বিরোধীপক্ষ পরিবারতন্ত্রের পুরোনো জমিদাররা তার জোট সরকার ভাঙতে শরিকদের ঘোড়াগুলো কিনে ফেলে এবং নিজেদের আস্তাবলে নিয়ে নেয়। ইমরান সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারান। ইমরানের ওপর আগে থেকে ক্ষুব্ধ সেনাপ্রধান ভূমিকা রাখেন তাঁর শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার বিষয়টিতে। পাকিস্তানের ভঙ্গুর সংসদীয় গণতন্ত্র হর্স ট্রেডিংয়ের জন্য খ্যাত।

সেই থেকে ইমরানের জীবননাশের চেষ্টা, নানা রকম পরাবাস্তব মামলায় জড়ানোর চেষ্টা, গ্রেপ্তারের চেষ্টা কি হয়নি? পাকিস্তানের সামন্ত রাজনীতির ‘শতরঞ্জ কি খিলাড়ি’রা রাজনৈতিক মানচিত্রের তৃতীয় শক্তির উত্থান কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি। ক্ষমতা-দুর্নীতি-রাষ্ট্রের মালিকানায় এই যে দখল, তা হাতছাড়া হতে দিতে চান না তারা।

ক্ষমতা হারানোর পর ইমরানের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। নানা জরিপে দেখা যায়, তার জনপ্রিয়তা ৭৮ শতাংশের মতো। ফলে আগাম নির্বাচনের দাবি অগ্রাহ্য করতে থাকে ক্ষমতসীন দল। কারণ, নির্বাচন মানেই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে যাবে পরিবারতন্ত্র-সামরিক শক্তির ময়ূর প্রাসাদ।

পাকিস্তানের সাবেক সেনাপ্রধান বাজওয়ার সঙ্গে ইমরান খানের সংঘাত হ্যাঁচকা টানে খুলে ফেলে যেন পাকিস্তানের ৭৫ বছরের রাহু রহস্যের প্যান্ডোরার বাক্স। সেনাবাহিনী যেভাবে নিজেকে জনসমালোচনার ওপরে ‘হোলি কাউ’বানাতে চেয়েছে, ইমরান খান তা হতে দেননি। সেনাবাহিনীর নিজস্ব দায়িত্ব ফেলে রাজনীতিতে দাদাগিরির সমালোচনা ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ্য, ঘরে ঘরে বিভিন্ন আলোচনায়। পাকিস্তানে কোনো সামাজিক দাওয়াতে সেনা কর্মকর্তাদের অংশ নেওয়াই যেন বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে পড়ে যায়। যেসব কর্মকর্তা ক্ষমতার ভূতের নাচনে অংশ নেন না, তাদের সামাজিক জীবনও এ মুহূর্তে ঝুঁকিতে। সেনা পরিবারের অভ্যন্তরে দ্রোহের পরিবেশ। স্ত্রী-সন্তানরাই প্রশ্ন রাখেন, তোমরা কি গণশত্রু?

ক্ষমতাসীন শাহবাজ শরিফ ও জারদারি কোয়ালিশন জানে, ভোটে গেলে বিপর্যয়। অথচ তারা ক্ষমতার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চায়। ফলে তারা সেনাশক্তির মনপছন্দের ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’য় ব্যস্ত।

এই যে অর্থনৈতিকভাবে ভঙ্গুর পাকিস্তান, যেখানে সাধারণ মানুষ দুর্ভিক্ষের অশনিসংকেতে ম্রিয়মাণ; আইএমএফ পরের কিস্তি দিলে তবে বাড়ির বাজার হবে, সেখানে জনস্বার্থ বিবেচনায় নেই জনবিচ্ছিন্ন ক্ষমতাসীন সরকার আর সেনাশক্তির। তারা ধরে রাখতে চায় ক্ষমতার চালকের আসন।

ইমরান খান রোববার বলেছেন, ‘ডার্টি হ্যারি’তাকে হত্যা করে পাকিস্তানের গণতন্ত্রের সম্ভাবনাকে হত্যা করতে চায়। সামরিক বাহিনীর জনসংযোগ দপ্তর প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছে, মি. খান শুধু আমাদের নিয়ে মানহানিকর বক্তব্য দেন, এ বড় অন্যায়।

পৃথিবী অচল আজ ক্ষমতা বুভুক্ষ অগণতান্ত্রিক গণশত্রুদের হিতোপদেশ ছাড়া!

লন্ডনে রাজা তৃতীয় চার্লসের অভিষেকে যোগ দেওয়া শেষে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের মঙ্গলবার ইসলামাবাদে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু তিনি গতকাল জানিয়েছেন, আসতে তাঁর এক দিন বিলম্ব হবে। শরিফের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের এ অনুশীলিত বিলম্বের সঙ্গে ইমরান খানের গ্রেপ্তারের সম্পর্ক খুঁজছে সাধারণ মানুষ।

পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে ইমরানের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে। রাজপথ আজ সাহসী মিছিল। ১৪৪ ধারা কিংবা টিয়ার শেলে কাবু করার চেষ্টা চলছে জনঅভ্যুত্থানের টুঁটি চেপে ধরার।

১৬৪ পঠিত ... ১৬:৫৭, মে ১১, ২০২৩

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top