রোকিয়া আফজাল রহমানকে নিয়ে আপনি কতটুকু জানেন?

৮৮৬ পঠিত ... ১৫:৪৪, এপ্রিল ০৬, ২০২৩

Rokiya-Afzal

গতকাল সিঙ্গাপুরের নোভেনা হাসপাতালে মারা গেছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রোকিয়া আফজাল রহমান। তিনি যেমন সফল ব্যবসায়ী ছিলেন কাজ করেছেন নীতিনির্ধারণ নিয়েও। ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে উপদেষ্টা ছিলেন। কাজ করেছেন নারী উদ্যোক্তাদের নিয়েও। সফল এই ব্যবসায়ীর জীবন ছিলো খুবই বৈচিত্র্যময়। তার সম্পর্কে আরও কিছু অবাক করা তথ্য।

 

১#

১৯৬২ সালে করাচির মুসলিম কমার্শিয়াল ব্যাংকে (বর্তমানে রূপালি ব্যাংক) ব্যাংকার হিসেবে কাজ শুরু করেন রোকিয়া আফজাল রহমান। তখন পরিবার থেকে অনেক নিষেধ ছিলো। একটা মেয়ে অন্য শহরে ব্যাংকে কাজ করবে, বিষয়টি অনেকে মেনে নিতে পারেননি। কিন্তু রোকিয়া আফজালের বাবা তার পাশে ছিলেন। ১৯৯৪ সালে দুইবছরের মাথায় ব্যাংক ম্যানেজার হিসেবে তিনি ঢাকায় বদলি হয়ে আসেন।

২#

রোকিয়া আফজালের ব্যবসায়ী জীবন শুরু হয় মূলত কোল্ড স্টরেজের ব্যবসা দিয়ে। ১৯৮০ সালে। তখন আলুর ব্যবসায় ভালো পুঁজি বিনিয়োগ ছিলো। কৃষিভিত্তিক ব্যবসা, দেশেই কাঁচামাল পাওয়া যেতো, কৃষকদের সাথে ভালো সম্পর্ক ও নিজের পরিশ্রমের ফলে দ্রুতই সাফল্য পান তিনি।

৩#

স্বাধীনভাবেই নিজের ব্যবসা শুরু করেন তিনি। ওনার স্বামী আজিজুর রহমানেরও নিজস্ব ব্যবসা ছিলো। আজিজুর রহমান মারা যাওয়ার পর এই ব্যবসার দায়িত্বও আসে রোকিয়া আফজালের কাঁধে। এটিও তিনি সফলতার সাথেই পরিচালনা করেছেন।

৪#

সেই সময়েও বেশ আধুনিক চিন্তাধারার ছিলেন রোকিয়া আফজাল। ব্যবসা ও চাকরির জন্য তিনি ও তার স্বামী আজিজুর রহমান আলাদা শহরে থাকতেন। সপ্তাহে একবার দুইজনের দেখা হতো। আরও মজার ব্যাপার হচ্ছে, তখনকার সময়ে রোকিয়া আফজালের স্বামী চাকরি বদলি করে ঢাকায় চলে আসেন, কারণ রোকিয়া আফজালের চাকরিস্থল ছিলো ঢাকায়।

৫#

স্বাধীন মানুষ হিসেবে সবসময় চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করতেন রোকিয়া আফজাল। আজিজুর রহমানের সাথে সাংসারিক বোঝাপড়াও ছিলো দুর্দান্ত। একবার কোল্ড স্টোরেজের বিদ্যুৎ লাইনে সমস্যা সমাধান নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে দেখা করতে হঠাৎ মুন্সিগঞ্জে যাওয়ার প্রয়োজন পড়লো। তখন যোগাযোগ ব্যবস্থা এত ভালো ছিলো না। দুর্গম পথ, রিকশা, নৌকা ইত্যাদি নানান ঝামেলা করে যেতে হতো। উনি স্বামীকে শুধু একটি চিরকুট লিখলেন, ‘আমি অমুক জায়গায় এ কারণে যাচ্ছি, চিন্তা করো না।‘ রোকিয়া আফজাল মনে করেন, এই সমর্থন ও এই বোঝাপড়াই সবচেয়ে বড়।   

৬#

২০০১ সালে তৎকালিন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন রোকিয়া আফজাল রহমান। তখন উনি দেখলেন, প্রায় ১০টা কেন্দ্রে মহিলারা ভোট দিতে যেতে পারেন না। সে সময় মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র ও ধর্ম মন্ত্রণালয় মিলিয়ে একটি আন্তমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করেন তিনি। এরপর ১০টি কেন্দ্র চিহ্নিত করেন। প্রথমবার সেবার এই ১০টি কেন্দ্রে ভোট দিতে আসে মহিলারা।

৭#

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে বলা হতো লেবার ও ম্যানপাওয়ার। কিন্তু এটি নিয়ে রোকিয়া আফজালের আপত্তি ছিলো। এমপ্লয়য়ার ফেডারেশনের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন তিনি। রোকিয়া আফজাল প্রশ্ন তুলেছিলেন, ‘শুধু ম্যানপাওয়ার কেন? নারীদের শ্রমশক্তি কি দেশের শ্রমশক্তি নয়!’

৮# 

১৯৯৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আয়োজনে বিশ্বের নারী উদ্যোক্তা নেতৃত্বের জন্য পুরস্কার পেয়েছিলেন রোকিয়া আফজাল রহমান।

৯#

বর্নাঢ্য জীবনে সফলতার সাথে অনেক রকম দায়িত্ব পালন করেছে রোকিয়া আফজাল রহমান। মিডিয়াওয়ার্ল্ড লিমিটেড ও মাইডাস ফাইন্যান্সের চেয়ারপারসন ছিলেন, ছিলেন মিডিয়া স্টার ও এবিসি রেডিওর পরিচালক। বাংলাদেশ নারী উদ্যোক্তা ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, মেট্রোপলিটন চেম্বার অফ কমার্সের অ্যাড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি। এছাড়া ব্রাকসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানের বোর্ড মেম্বারও ছিলেন তিনি।

১০#

একবার মুন্সিগঞ্জে স্থানীয় চাঁদাবাজরা কোল্ড স্টোরেজ ব্যবসার জন্য রোকিয়া আফজালের কাছে চাঁদা দাবি করেন। অত্যন্ত সুকৌশলী তিনি চাঁদাবাজদের পরিকল্পনাও ধুলিস্যাৎ করে দেন। এলাকাবাসীর সামনে চাঁদাবাজরা এলাকার উন্নয়নের নামে ২ লক্ষ টাকা চাইলে তিনি টাকা দিতে রাজি না হলে এলাকাবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, ‘এলাকায় উন্নয়ন কর্মকান্ড কী করতে হবে সেটি তিনি করে দেবেন কিন্তু নগদ কোনো টাকা দেবেন না।‘ এলাকাবাসীও চাঁদাবাজদের উদ্দেশ্য বুঝতে পারেন এবং রোকিয়া আফজালকে সমর্থন করেন।

৮৮৬ পঠিত ... ১৫:৪৪, এপ্রিল ০৬, ২০২৩

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top