কলকাতাকে যদি স্ট্রিট ফুডের শহর বলা হয় তবে খুব একটা মিথ্যা বলা হবে না। কারণ এত হরেক পদের স্ট্রিটফুড এত কম দামে ভারতের আর কোনো শহরে খুঁজে পাবেন বলে মনে হয় না। চাইলেই ১০০ টাকার মধ্যেই সারাদিনের খাওয়া দাওয়া সেরে ফেলা সম্ভব এসব স্ট্রিটফুড দিয়ে। তবে চাওমিন, মোমোসহ অন্যসব স্ট্রিটফুডের ভিড়ে যে খাবারটি কলকাতাকে সবার কাছে বিখ্যাত করেছে, সেটি কলকাতার আইকনিক কাঠি রোল। আপনি যেখানকারই বাসিন্দা হোন না কেন একবার এই কাঠিরোল চেখে দেখলে, অন্তত এর টানে হলেও বারবার আপনাকে এই শহরে আসতে হবে। আপাতদৃষ্টিতে মচমচে পরোটার মধ্যে মাংস, ডিম বা পনিরের পুর ভরে এই কাঠিরোল বানানোর প্রক্রিয়া বা একে খুব সাদামাটা মনে হলেও একবার যখন আপনি একে মুখের ভেতর দেবেন, কেবল তখনই কেবল বুঝবেন লেখার শুরুতে একে কেন কলকাতার আইকনিক খাবার বলা হয়েছে। আর আস্ত একটা কাঠিরোল আপনার লাঞ্চ বা ডিনার যেকোন বেলার তীব্র ক্ষুধা মেটাবে অনায়াসেই।
কাঠিরোলের ইতিহাস
লিখিত কোন তথ্য না থাকলেও স্থানীয়দের ভাষ্যমতে হগস স্ট্রিটে নিউমার্কেটের কাছে নিজামস রেস্টুরেন্ট ১৯৩০ সালে প্রথম এই কাঠিরোল উদ্ভাবন করে। সে সময় মাংস কাঠিতে গেঁথে পরোটায় জড়িয়ে দেওয়া হতো, কাঠিতে গেঁথে দেওয়ার জন্য এর নাম হয়ে যায় কাঠি রোল। এরপর গত ৯০ বছর ধরে রসনাবিলাসীদের চাহিদা মিটিয়ে আসছে এই কাঠিরোল। কাঠিরোলের উদ্ভাবক নিজামস হলেও সত্তরের দশকে এসে কাঠিরোল নিয়ে নিজামসের একচেটিয়া আধিপত্য কমতে থাকে, কলকাতার অন্যান্য রেস্টুরেন্টগুলোও কাঠিরোল বানানো শুরু করে এসময় থেকে।
তৈরির কৌশল
বড় তাওয়াতে পরোটা প্রথমে শুকনো করে পরে তেলে মচমচে করে ভেজে নেওয়া হয়। তারপর এর ভেতর শিকে পোড়ানো মাংস, পেঁয়াজ, চাটনি, মেয়োনিজের পুর দিয়ে পেঁচিয়ে খুব সহজেই তৈরি করা হয় কাঠিরোল। তবে রেস্টুরেন্টভেদে রোলের ভেতরকার পুর একেকরকম হয়। তবে ইদানিংকালে কাঠিরোলের মধ্যে পটেটো ফিলিং, পনির, সবজির পুরের ব্যবহারও শুরু হয়েছে। কেউ একবারেই যদি হালকা খেতে চান তবে শুধু ডিম দিয়েও রোল তৈরি করা সম্ভব, যা আমাদের দেশে এগরোল বলে পরিচিত। কাঠিরোলে ডিমের ব্যবহার শুরু হয়েছে কিন্তু অনেক পরে।
কলকাতার কোথায় কোথায় পাওয়া যাবে এই কাঠিরোল
কলকাতা রোলের শহর, তাই যেকোনো গলি ধরে দু’কদম হাঁটলেই একটা না একটা কাঠিরোলের স্থানীয় দোকান পেয়ে যাবেন। এমন হাজারটা দোকান ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সারা কলকাতাজুড়ে। তবে বিখ্যাত যদি কোনো জায়গায় কাঠিরোল খেতে হয় তবে যেতে পারেন প্রথমেই নাম উল্লেখ করা যারা কিনা কাঠিরোলের উদ্ভাবক নিউমার্কেটের সেই নিজামসের। নিজামসে ক্ষীরি রোল নামেও একধরনের রোল পাওয়া যায় যাতে যাতে ভেড়া/খাসির ম্যারিনেটেড বাট ব্যবহার করা হয়। পার্ক স্ট্রিটের পার্ক হোটেল থেকে কয়েক মিনিটের দূরত্বেই রয়েছে কুসুম স্ন্যাকস বার, কাঠিরোলের জন্য এই দোকানটিও বিখ্যাত। এখান থেকে চাইলে আবার কাস্টমাইজ করে নিজের মন-মর্জিমতো কাঠিরোল বানিয়ে নিতে পারবেন। বেশি পেঁয়াজ দিয়ে অথবা সস ছাড়া কিংবা ক্যাপসিক্যাম ছাড়া কিংবা সিঙ্গেল এগ ও ডাবল মাটন অথবা ডাবল এগ সিঙ্গেল মাটন, মোটকথা আপনি যেভাবে খেতে চান ঠিক সেভাবেই আপনার জন্য কাঠিরোল বানিয়ে দেবে এরা। এছাড়া পার্ক স্ট্রিট রোডের স্পুন রেস্তোঁরার এগ পনির রোল, ডায়মন্ড হারবার রোডের মগজ-এগ রোলও বেশ বিখ্যাত। গড়িয়াহাট রাসবিহারী রোডের বেদুঈন রেস্তোঁরাও কাঠিরোলের জন্য বিখ্যাত। এদের এখানে রোলের মধ্যে ভাজা মাংস, পেঁয়াজ, চাটনি এসব ছাড়া ব্যতিক্রমী কিছু না থাকলেও কলকাতার লোকদের কাছে এই রোলও বেশ বিখ্যাত।
তবে বড় কোন রেস্টুরেন্ট হোক কিংবা রাস্তার পাশে থাকা ছোট রোলের দোকান যেখান থেকেই খান না কেন, ঢাউস সাইজের একটা পরোটার মধ্যে মাংস, ডিম, পেঁয়াজ, চাটনিসহ আরো অন্যান্য পুর ভর্তি একটা কাঠিরোলে প্রথম কামড় দেওয়ার সাথে সাথেই আপনি এর প্রেমে পড়ে যাবেন। যদি কখনও না খেয়ে থাকেন তবে কখনও কলকাতায় যাওয়া হলে আপনার প্রথম কাজই হলো গিয়ে বিখ্যাত এই রোলের স্বাদ নেওয়া। আর যদি খেয়ে থাকেন তবে তো আপনি ইতিমধ্যেই জানেন।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন