ছেলেরা এতোক্ষণ বাথরুমে করে টা কী?

৮৮০ পঠিত ... ১৭:০৪, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২২

Chelera-tyoilet-e-ki-kore (2)

বিশাল এই পৃথিবীতে অসংখ্য অমীমাংসিত রহস্য আছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য এক রহস্য হলো, ছেলেদের দীর্ঘক্ষণ বাথরুমে থাকা। আমাদের বাবা, ভাই, স্বামী, বন্ধু, বাড়িতে আসা মেইল গেস্ট, বড় চাচা, ছোট খালু, মেজো মামা কম-বেশি সকলেই একই রকম সিনারিও দেখিয়েছেন।

কখনও কি জানতে ইচ্ছা করেছে এতক্ষণ বাথরুমের মতো জায়গায় তারা কী করে? হ্যাঁ আপা, শুধু আপনি নন, যুগ যুগ ধরে নারীদের মনে একই প্রশ্ন আসলেও চক্ষুলজ্জার ভয়ে হয়তো তারা প্রশ্নবোধক চিহ্ন টানতে পারেনি। সময় বদলেছে, নারী এখন তার নিজের এবং আশেপাশের মানুষের নিয়েও সচেতন। আমাদের আজকের মেজর কনসার্ন হলো, ‘ছেলেরা এত সময় ধরে বাথরুমে করেটা কী?’

২০১২ সালের সিনেমা ‘This is 40’তে একটি মজার দৃশ্য আছে। শান্তিতে আইপ্যাড স্ক্রল করার জন্য অভিনেতা পল রুড টয়লেটে বসে থাকে। বাইরে থেকে তার স্ত্রীর ভূমিকায় থাকা অভিনেত্রী লেসলি ম্যান চিটকার করে বলে,’আই নো ইউ আর নট অ্যাকচুয়ালি পুপিং…’ পল রুড কোনো উত্তর না দিয়ে আবার আইপ্যাডের স্ক্রিনে ফেরত যায়। পল রুডের কথা বললাম ,কারণ তার সাথে আমাদের পার্টনার,ভাই ব্রাদারদের প্রচণ্ড মিল আছে।  

রয়্যাল সোসাইটি অব কেমিস্ট্রি প্রকাশিত একটি পিয়ার রিভিউড জার্নাল অনুসারে, একটি স্তন্যপায়ীর মলমূত্র ত্যাগ করতে গড় সময় লাগে মাত্র ১২ সেকেন্ড। বাকি সময় তারা কী করেন এমন প্রশ্নের উত্তরে ৮৪% আমেরিকান জানান তারা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেন, ৬৮% আমেরিকান ভিডিও দেখেন, ৬২% সংবাদ দেখেন। এগুলোর পাশাপাশি পরবর্তী সর্বাধিক জনপ্রিয় বিকল্পগুলি হলো ইমেল চেক করেন (৪৯ %), টিভি সিরিজের একটি এপিসোড দেখা (২৪%), বই পড়া (১৪%) বা কল করা (৮%) । এই গেলো আমেরিকানদের হিসাব।

বাংলাদেশীদেরও একটি জরিপ করা এই মুহূর্তে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। eআরকির পক্ষ থেকে এক ভুয়া তথ্যসূত্র জানিয়েছে ,কোভিড চলাকালীন বাংলাদেশের ৮০% ছেলেমেয়ে টয়লেটে বসে অনলাইন ক্লাস করছে, ১০% বন্ধুদের সাথে গ্রুপ চ্যাট করেছে, ৫% ক্রাশের সাথে চ্যাটের স্ক্রিনশট ও বাকি ৫% ফেসবুকে মিম শেয়ার করতো।

জোকস অ্যাপার্ট, সাইকোথেরাপিস্টদের মতে, পুরুষরা কিছু ‘অ্যালোন টাইম’কাটাবার জন্য বাথরুমে দীর্ঘক্ষণ কাটায়। কর্মক্ষেত্র, বাসা, এমনকি সেক্স থেকে আসা প্রেশার হ্যান্ডলিং-এর জন্যই এই অ্যালোন টাইম গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন চাপের কারণে কমে যাওয়া টেস্টোস্টেরন লেভেল আবার স্বাভাবিকে নেমে আসে এই সময়ে।

অভ্যাসগতভাবে, ছেলেরা সাধারণত ফুটবল ম্যাচ দেখা, নিউজ পড়া কিংবা থিংকিং বেজড কোনো কাজের উপর ফোকাসের মাধ্যমে নিজেদের স্ট্রেস কমিয়ে থাকে। অন্যদিকে মেয়েরা কিছুটা ফিলিংস,বা অনুভূতি কেন্দ্রিক। এ কারণে স্ট্রেস কাটাতে মেয়েদের যেমন আরেকজন বন্ধুর সাথে কথা শেয়ার কথা গুরুত্বপূর্ণ , তেমনি ছেলেদের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একাকী সময় কাটানো (তবে সেটা যে বাথরুমেই হতে হবে, এমন কোনো কথা নেই)। 

আরেক সমীক্ষায় অংশ নেওয়া পুরুষদের ৬৩ শতাংশ জানান, তারা ওয়ার্কপ্লেস বা বাড়িতে হতাশবোধ করলে ইচ্ছাকৃতভাবে বাথরুমে বেশি সময় নেন। কারণ একে তারা ‘নিরাপদ স্থান’বলে মনে করেন ।

 

২০১৯ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়ার ৫৮  শতাংশ পুরুষ এখনও নিজেদেরকে মানসিকভাবে শক্ত ও মানুষের চোখে অদুর্বল হতে যেয়ে প্রচণ্ড স্ট্রেসে থাকেন। শেষমেষ তাদের সঙ্গী হয় এই ‘টয়লেট ট্রিপ’।

বেশিরভাগ নারীই পুরুষদের এই দীর্ঘক্ষণ টয়লেটে থাকা নিয়ে অত্যন্ত বিরক্ত । কেউ কেউ প্রায়ই ভেবে থাকেন, এই গন্ধের মধ্যে কীভাবে কেউ টয়লেটে বসে চিল করতে পারে? ভুলে যাওয়া যাবে না যে, একজন নারীর অলফ্যাক্টরি বাল্বে কোষের সংখ্যা ১৬.২ মিলিয়ন যেখানে একজন পুরুষের মাত্র ৯.২ মিলিয়ন। এ কারণে যে গন্ধে একজন নারীর পেট উলটে আসে, সে গন্ধে একজন পুরুষের ভ্রু-ও কুঁচকায় না। টয়লেটের গন্ধ তো মামুলি ব্যাপার!

তবে বেশিক্ষণ টয়লেটে বসে থাকলে হেমোরয়েড, প্রস্রাব ইনফেকশনসহ আরও নানা অসুখ বিসুখ দেখা দিতে পারে। তাই প্রিয় নারীরা, আপনার পার্টনার ,ভাই-ব্রাদার,কিংবা প্যারেন্টকে ঘরেই ‘সেলফ টাইম’ কাটানোর সুযোগ করে দিন। তারা টয়লেটে মলমূত্র ত্যাগ ব্যতীত অন্য যে শান্তি এবং নীরবতার খোঁজ করে, ঘরেই তার ব্যবস্থা করুন। অবশ্য তাতেও টয়লেটে দীর্ঘক্ষণ থাকা বন্ধ হবে কি-না সে নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারছে না!

৮৮০ পঠিত ... ১৭:০৪, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২২

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top