লেখা: কামরুল আহসান
ছোটখাটো রসিকতার মধ্য দিয়ে জীবনের ক্লেদ ও বিষণ্ণতা মুছতে চেয়েছেন বঙ্গবন্ধু। কল্পনা করা যায়, এত বড় একজন মানুষ কারাগারে থাকার সময় কাকের সঙ্গেও লড়াই করেছেন! কারাগারের রোজনামচার ২১৯ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, ‘কাকের কাছে আমি পরাজিত হয়েছি। আমার সামনের আমগাছ কটাতে কাক বাসা করতে আরম্ভ করে। আমি বাসা করতে দেব না ওদের। কারণ ওরা পায়খানা করে আমার বাগান নষ্ট করে আর ভীষণভাবে চিৎকার করে। আমার শান্তি ভঙ্গ হয়। আমি একটা বাঁশের ধনুক তৈরি করে মাটি দিয়ে গুলি তৈরি করে নিয়েছি। ধনুক মেরেও যখন কুলোতে পারলাম না, তখন আমার বাগানী কাদের মিয়াকে দিয়ে বারবার বাসা ভেঙে ফেলি। বারবারই ওরা বাসা করে। লোহার তার কি সুন্দরভাবে গাছের সঙ্গে পেঁচাইয়া ওরা বাসা করে। মনে হয় ওরা এক এক দক্ষ কারিগর, কোথা থেকে সব উপকরণ জোগাড় করে আনে আল্লাহ জানে! পাঁচটা আমগাছ থেকে পাঁচ-সাতবার করে বাসা ভেঙে ফেলি, আর ওরা আবার তৈরি করে। ওদের ধৈর্য ও অধ্যবসায় দেখে মনে মনে ওদের সঙ্গে সন্ধি করতে বাধ্য হই। তিনটা গাছ ওদের ছেড়ে দিলাম। ওরা বাসা করল। আর একটা গাছ ওরা জবর দখল করে নিল।’আমি কাদেরকে বললাম, ‘ছেড়ে দাও। করুক ওরা বাসা। দিক ওরা ডিম। এখন ওদের ডিম দেওয়ার সময় যাবে কোথায়?’
‘এই সমস্ত বাসা ভাঙবার সময় আমি নিজে ধনুক নিয়ে দাঁড়াতাম আর গুলি ছুড়তাম। ভয় পেয়ে একটু দূরে যেয়ে চিৎকার করে আরও কিছু সঙ্গী-সাথী জোগাড় করে কাদেরকে গাছেই আক্রমণ করত। দু-একদিন শত শত কাক জোগাড় করে প্রতিবাদ করত। ওদের এই ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদকে আমি মনে মনে প্রশংসা করলাম। বাঙালিদের চেয়েও ওদের একতা বেশি।’
(দেশ রূপান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত ‘বঙ্গবন্ধু হাসতে জানতেন’ প্রবন্ধ থেকে সংকলিত)
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন