জিডিপি বেড়েছে কিন্তু ইলিশ আর কিনে খেতে পারি না

২৯৭ পঠিত ... ১৭:২৫, আগস্ট ০৮, ২০২২

GDP-bereche

লেখা: সায়েদুজ্জামান চপল

আমি একজন পেনশনার। মাসিক পেনশন আর অবসরের সময় পাওয়া এককালীন টাকায় কেনা সঞ্চয়পত্রের মুনাফা দিয়ে দিন গুজরান করি। অবসরের পর প্রথম প্রথম দিনকাল মোটামুটি চলছিলো। হাতে কিছু নগদ টাকা ছিলো। আকস্মিক বিপদ মোকাবিলার জন্য ব্যাংকের সঞ্চয়ী হিসাবে কিছু টাকাও জমা ছিলো। দ্রব্যমূল্যও কম ছিলো। অনেকটা নির্ভাবনায় দিন কেটে যেতো। হঠাৎ একদিন এক দুর্ঘটনায় আমার পা ভেঙে গেলো। অপারেশন ও চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা চলে গেলো।  তারপর মেয়ের বিয়েতেও অনেক টাকা খরচ হয়ে গেলো। হাতে নগদ টাকা ও ব্যাংকে রাখা  টাকা সব শেষ হয়ে গেলো। এখন ভরসা শুধুই মাসিক পেনশন আর সঞ্চয়পত্রের মুনাফা। এই দিয়ে খুবই হিসাব-নিকাশ করে জীবন চালাতে হয়। মাঝে মাঝে ভাবি, হঠাৎ যদি বড় ধরনের কোন অসুখে পড়ি তখন কী হবে? সঞ্চয়পত্র ভাঙাতে হবে। সঞ্চয়পত্র ভাঙালে দৈনন্দিন জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহ করবো কীভাবে?  

গত কয়েক বছর আগে  থেকেই বাজারে আগুন লাগা শুরু হয়েছে।  সে আগুন নিভে যাবে কি… প্রতিদিনই আগুন বাড়ছে।  আগুনের লেলিহান শিখা সমগ্র বাজারে ছড়িয়ে পড়েছে।  এমন কোনো বাজার নেই যেখানে আগুন লাগেনি। চাল-ডাল,  মাছ-মাংস,  দুধ-ডিম, মশলাপাতি, শাকসবজী,  ফলমূল,  ঔষধপত্রসহ সব বাজারে আগুন।  এই আগুন বাজারে অগ্নিমূল্যে জিনিসপত্র কিনে অগ্নিমূর্তি ধারণ করা ছাড়া সাধারণ মানুষের কোন উপায় নেই। যাদের চাকরি-বাকরি আছে, ব্যবসা-বাণিজ্য আছে তারাও এই অগ্নিমূল্যের বাজারে স্বস্তিতে নেই। আর আমার মতো যারা পেনশনার তাদের অবস্থা কত শোচনীয় তা সহজেই অনুমেয়। তারপর যারা পেনশনবিহীন সিনিয়র সিটিজেন,  সমাজের খেটে খাওয়া মানুষ তাদের তো কষ্টের সীমা নেই।

সারাদিন শুনি দেশের উন্নয়ন হয়েছে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছেও। কিন্তু সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়ন না হলে সে উন্নয়ন সাধারণ মানুষের কাছে অর্থবহ না হয়ে অর্থহীন হয়ে উঠেছে। দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রারও উন্নয়ন হওয়া দরকার। এমনকি জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন অগ্রাধিকার পাওয়া দরকার। মানুষই যদি ভালো থাকতে না পারলো তবে এই উন্নয়ন দিয়ে কী হবে? মানুষের জন্যই তো উন্নয়ন! জিনিসপত্রের দাম যে হারে বেড়েছে শ্রমের মজুরি, সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, পেনশনারদের পেনশন, অন্যান্য মানুষের আয় কী বেড়েছে সে হারে? বাড়েনি। আয়ের তুলনায় দ্রব্যমূল্য এত বেড়েছে যে সাধারণ মানুষ প্রয়োজনীয় অনেক কিছু খাওয়া বাদ দিয়ে পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। চিকিৎসার খরচ যোগাতে না পেরে চিকিৎসাবিহীন থাকতে বাধ্য হচ্ছে।

'বাতির রাজা ফিলিপস, মাছের রাজা ইলিশ।‘ দেশে ইলিশের মৌসুম শুরু হয়েছে। সাগরে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। ইলিশ বেচাকেনার প্রাথমিক বাজারগুলোতে ইলিশে ইলিশে সয়লাব বলে পত্রিকার খবরে এসেছে। জেলেরাও ইলিশ মাছ বিক্রি করে দুটো ভালো পয়সা পাচ্ছে বলেও শোনা যাচ্ছে। বাংলাদেশে এই একটা মাছ যা সবাই পছন্দ করে। একসময় ইলিশের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে ছিলো। তখন গরীব-ধনী সবাই ইলিশের স্বাদ নিতে পারত। কিন্তু সে রামও নেই সে অযোধ্যাও নেই। অনেক বছর আগেই ইলিশ মাছ সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। এখন মৌসুম ছাড়া ইলিশ আর খাওয়া হয়ে উঠে না সাধারণ মানুষের।  মানুষ উম্মুখ হয়ে থাকে কখন ইলিশের দাম কমে। ইলিশের উৎসকেন্দ্রগুলোতে ইলিশের দাম কম শোনা গেলেও ঢাকার বাজারে ইলিশের দাম এখনও বেজায় চড়া।  এক কেজি সাইজের ইলিশ ১৫০০ টাকার উপরে আর দেড় কেজি সাইজের ইলিশ ২০০০ টাকার উপরে। আমি তাই কেনার সাহস সঞ্চয় করতে পারিনি। তবে একটা অনলাইন শপের ২ পিস ইলিশ মাছ নব্বই টাকার বিজ্ঞাপন দেখে  গতকাল ৬ পিস ইলিশ কিনলাম ২৭০/- টাকায়। বিজ্ঞাপনে মাছের পিসগুলো বড় বড় দেখালেও আসলে মাছগুলো খুব ছোট না হলেও খুবই পাতলা করে কাটা। সব পিস মিলে ওজন ২০০ গ্রামও  হবে না বলেই আমার মনে হয়। যাহোক, এই ইলিশ রান্না করে আমরা আমি সহ আমার পরিবারের কারোরই তৃপ্তি মিটলো না। আবার  একটা আস্ত ইলিশ কিনবো সে সাহসও হয় না। ভাবি, আগে যখন আমাদের জিডিপি কম ছিলো, মাথাপিছু আয় কম ছিলো তখন আমরা স্বাচ্ছন্দ্যে একেকটা আস্ত ইলিশ কিনে পরিবারের সবাই মিলে পরিতৃপ্তির সাথে খেতে পেরেছি। এখন জিডিপি বেড়েছে অনেক, মাথাপিছু আয় বেড়েছে অনেক।  কিন্তু একটা ইলিশ মাছ খেতে পারি না!

২৯৭ পঠিত ... ১৭:২৫, আগস্ট ০৮, ২০২২

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top