প্রিয় পূজা

১৫১৯ পঠিত ... ১৬:২৬, জুন ১১, ২০২২

Priyo-puza (1)

প্রিয় পূজা,

আজ ১১ জুন। আপনার জন্মদিন। শুভ জন্মদিন, বিজ্ঞানী পূজা সরকার!

কিন্তু হায়! এই জন্মদিন নিশ্চয়ই আপনার পরিবারের কেউ চায়নি, যে জন্মদিনে আপনার জন্য তাঁদেরকে শোক করতে হচ্ছে! যে জন্মদিনে আপনি নেই! আপনি চলে গেছেন না ফেরার দেশে!

পত্রিকার ভাষায় আপনি গত ৫ জুন মারা গেছেন সড়ক দুর্ঘটনায়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ফিজিকসে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট’আপনি হয়তো হাজারো রঙিন স্বপ্ন পূরণের আশা নিয়ে পরমাণু শক্তি কমিশনের চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন। অথচ কী নির্মমভাবেই না আপনি মারা গেলেন!

আপনার পেটে ছিল ছয় মাসের শিশু। নিশ্চয়ই পেটে তার নড়াচড়া আপনার আর তন্ময় মজুমদারের জন্য ছিল শ্রেষ্ঠ সময়।

নিশ্চয়ই আপনার স্বামী পেটে কান পেতে শুনতো নতুন প্রাণের স্পন্দন! একজন নতুন অতিথির আগমন! নিশ্চয়ই আপনারা তার নাম ঠিক করে রেখেছিলেন। একসময় আপনার আঙুল ধরে হাঁটতো সে!

অথচ হায়! মাতৃগর্ভের অন্ধকার জগৎ থেকে বেনামেই সে চলে গেলো। এই পৃথিবীর আলো তাকে দেখতে দিলাম না। হ্যাঁ, আমরাই দেখতে দিলাম না।

সড়ক দুর্ঘটনা এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে এটাকে আর দুর্ঘটনা বলা চলে না। এটা এখন 'হত্যাকাণ্ড'। পত্রিকার পাতা খুললে প্রায় প্রতিদিন এই হত্যাকাণ্ডের খবর পাওয়া যায়।

ক্যান্সারের মতো ছড়িয়ে পড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করার আগে এই 'হত্যাকাণ্ড' বন্ধে কার্যকর সব পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।  

 

২.

প্রিয় পূজা, এই যে আপনারা বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের বিজ্ঞানী, প্রকৌশলীসহ চারজন নিহত হলেন; বলতেই হয় আপনাদের কপাল খারাপ!

প্রিয় পূজা, আপনি ভাবছেন এ কেমন নিষ্ঠুর রসিকতা? যে আমি একটা বাচ্চাকে পৃথিবীর আলো দেখাতে পারলাম না, যে আমি সাত বছরের প্রেমিক থেকে স্বামী হওয়া তন্ময় মজুমদারকে একা ফেলে চলে এলাম, যে আমি ছয় বছর বয়সে মাকে হারিয়েছি, তার কপাল খারাপ প্রমাণ করতে আরও কী কী প্রয়োজন! দেখুন পূজা, আপনারা দুর্ঘটনার শিকার হলেন এমন সময়ে যখন পুরো দেশ সীতাকুণ্ডের দিকে তাকিয়ে। সীতাকুণ্ডে ডিপোতে আগুন লেগেছে। অগ্নিনির্বাপণকর্মীরা মারা গেছেন হঠাৎ বিস্ফোরণে। আগুন নেভানো যাচ্ছে না। আমরা তখন সীতাকুণ্ড শোকে কাতর! এই এক মনে আমরা আর কতই বা শোকের স্থান দিতে পারি বলেন!

বিজ্ঞানী পূজা, বিজ্ঞানী আরিফ, বিজ্ঞানী ফারহানা, প্রকৌশলী কাউসার, আপনারা চাপা পড়ে গেলেন বড় শোকের পাথরে! আপনাদের মৃত্যু 'ইস্যু' হলে আপনাদের নামে একটা ওভারব্রিজ হলেও হতে পারতো! এজন্যই বলছি আপনাদের কপালটাই খারাপ!

 

৩. 

একদল লোক আছে যারা সবখানে সরকার বিরোধীতা খুঁজে বেড়ায়। সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কথা বললেও আপনাকে সরকার বিরোধী ট্যাগ লাগিয়ে দিবে।    

আমাদের বাড়ির আঙিনা পিচ্ছিল। বাবা-মাকে বললাম, ‘আঙিনাটা পরিস্কার করা দরকার, নাহলে আমি পিছলে পড়তে পারি, আমার হাত-পা ভেঙে যেতে পারে।‘ তাহলে কি এটা পরিবার বিরোধিতা হয়ে যাবে?

বরং আমার কথামতো আঙিনাটা পরিস্কার করলে আমার মা-বাবাসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও হাত-পা ভাঙা থেকে রক্ষা পাবে। এটা যদি পরিবার বিরোধীতা না হয় তাহলে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কথা বললেই সরকার বিরোধীতা হয়ে যায় কীভাবে?

১৫১৯ পঠিত ... ১৬:২৬, জুন ১১, ২০২২

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top