টকশো কলতলার মানহানির কালচার

৬৩২ পঠিত ... ১৭:৩১, জুন ০২, ২০২২

Manhanir-bichar

সাবেক স্ত্রী অভিনেত্রী অ্যাম্বার হার্ডের বিরুদ্ধে করা মানহানি মামলায় জিতে গেলেন হলিউড অভিনেতা জনি ডেপ। অভিনেত্রী অ্যাম্বার হার্ড পত্রিকায় কলাম লিখে তার সাবেক স্বামীর বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ করেছিলেন; তা মানহানিকর প্রমাণিত হওয়ায় ১৫ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে অভিনেত্রী অ্যাম্বার হার্ডকে।

পশ্চিমা সমাজের এই নৈর্ব্যক্তিকতা সত্যিই প্রশংসনীয়। পুরুষ বা নারী বলে কেউ প্রেফারেন্সশিয়াল ট্রিটমেন্ট বা বাড়তি সুবিধা পান না। নারী বা পুরুষ নয়; পারসন হিসেবে দেখা হয় প্রতিটি মানুষকে।

দক্ষিণ এশিয়ায় যেমন কোন কোন ক্ষেত্রে পুরুষ তার ক্ষমতা ব্যবহার করে মিথ্যাকে সত্য বলে প্রমাণ করেন; আবার কোন ক্ষেত্রে নারী বলে গুরুতর অপরাধ করেও পার পেয়ে যান।

মানহানি করা যে গুরুতর অপরাধ সে সচেতনতা নেই; এই কইয়া দিমু সমাজে।

যেমন বাংলাদেশের সরকার সমর্থক টিভির টকশোতে; কয়েক প্রজন্ম ধরে সেকুলারিজম চর্চা করা সিনিয়র সিটিজেনদের; অবলীলায় জামাত বলে তকমা দিয়েছে; এক প্রজন্ম দাঁত পাড় শাড়ি খুলে জামদানি পরা নিও সেকুলার নারী কতিপয়।

এরকম ক্ষেত্রে সমর্থক নারী হওয়ায়; এসব ডিফেমেশানের বিচার তো হয়ইনি; বরং উলটো সরকার-পুলিশ-আদালত পক্ষে থাকায় যাকে ডিফেম করা হয়েছে সেই সিনিয়র সিটিজেনকে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়েছে।

দক্ষিণ এশিয়ার কলতলা কালচারে মুখে যা আসে তা বলে দেবার চল রয়েছে। আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে দলীয় ভিত্তিতে কলতলার মানহানিকর বক্তব্যকে উতসাহিত করে আপাত শিক্ষিত লোকেরা।

মানহানির ব্যাপারটাও বাংলাদেশে একপেশে। সরকার প্রধানকে নিয়ে মানহানিকর বক্তব্য প্রদান করে ডিজিটাল সিকিউরিটি এক্টে গ্রেফতার; পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু, জিজ্ঞাসাবাদে মেরে কান ফাটিয়ে দেয়া চলতে থাকে।

কিন্তু সরকার সমালোচক এমন সিনিয়র সিটিজেনদের মুখে যা আসে তা বলে আওয়ামী লীগের সাইবার সুইপাররা; টকশো কলতলার বুয়ারা। অনগ্রসর শ্রেণী থেকে উঠে আসা; এক প্রজন্মের সামান্য শিক্ষিত মড গার্ল ঘাড় ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে একে ওকে স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি তকমা দেয়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে সহগামী পত্রিকার সম্পাদক, মুক্তিযুদ্ধে রণাঙ্গণে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা দেয়া ডাক্তার; এদের চট করে জামাত-রাজাকার তকমা দেয়; বাপ-মায়ের পরিচয়হীন; সরকার সমর্থক ডায়ামন্ড আংকেলদের প্রশ্রয় পেয়ে মুখরা হয়ে ওঠা নিও সেকুলার গালাগাল রাণীরা।

খুনে পাকিস্তানের ক্ষমতা কাঠামোতে ইয়াহিয়া ও তার সহমতভাইদের অংক শায়িনী প্রমোদবালারা কখনো সাহস করেনি; বঙ্গবন্ধু কিংবা তাঁর সহযোদ্ধাদের সম্পর্কে কলতলার গালাগাল করতে। অথচ সমকালে প্রমোদবালাদের ক্ষমতায়িত করা হয়েছে প্রতিপক্ষকে টকশোতে ও ফেসবুকে ডিফেম করতে। ডিফেমেশানের এই হানি ট্র্যাপ দেশের সামগ্রিক সামাজিক সংস্কৃতির জন্য ক্ষতিকর।

লুঙ্গি খুলে সবে পাজামা পাঞ্জাবি পরা মহল্লার মাস্তান ডেকে টকশোতে বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক মননের সঙ্গে কয়েক প্রজন্ম ধরে জড়িয়ে থাকা পরিবারের ছেলেকে ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলার যে বড় গলা ও জিভ পরিচর্যা করা হচ্ছে; সরকারী নিরংকুশ ক্ষমতা বহাল রাখার স্বার্থে; তা সমাজ-সংস্কৃতির জন্য অশনি সংকেত।

কলতলার ফইন্নির ঘরের ফইন্নি দিয়ে প্রতিপক্ষের মানহানি করা; আর সাইবার সুইপার দিয়ে গালাগাল-"গু" ঢেলে দেবার; তারপর একদল ফইন্নি দেশের জ্ঞানী ও অগ্রসর মানুষদের নিয়ে হাসাহাসির যে ডিফেমেশান ও অপমানের ইনডেমনিটি দিয়ে চলেছেন সরকার প্রধান; তা ইতিহাসে আলোচিত হবে বার বার।

আজো দল মত নির্বিশেষে আমরা সাধারণ মানুষ জাতির জনকের সুভাষণ ও সুবচনের যে রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে স্মরণ করি; প্রশংসা করি তাঁর প্রজ্ঞার প্রতি গভীর অনুরাগের; এমন সুকৃতিই রেখে যেতে হয়; জীবনের চলার পথে।

নইলে মানুষ হারিয়ে যায় বিস্মৃতিতে; স্মরণ হয় তিক্ততায়। ইতিহাসে নিজেকে কীভাবে দেখতে চান; কীভাবে আলোচিত হতে চান; সেটি মাথায় রাখা প্রয়োজন বর্তমানের কর্মযজ্ঞে। এইসব কলতলার ফইন্নি সহমত ভাই-বোনকে কারো মনে থাকবে না। এরা এ জগত সংসারে অকিঞ্চিতকর অপাংক্তেয় ডিএনএ। কিন্তু সবাই স্মরণে রাখবেন একটি ভালো ডিএনএ এদের প্রশ্রয় দিয়েছিলো; যে ডিএনএ-এর কাছে প্রত্যাশা ছিলো সুভাষণ ও সুবচনের।

৬৩২ পঠিত ... ১৭:৩১, জুন ০২, ২০২২

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top