যেভাবে নতুন বছর বরণ করেন আদিবাসীরা

৪৯১ পঠিত ... ১৫:৩৮, এপ্রিল ১৩, ২০২২

Adibasi-borshoboron

বৈসাবি; ত্রিপুরা, মারমা, চাকমা এবং তঞ্চংগ্যাদের নববর্ষ উৎযাপনের সম্মিলিত নাম। ত্রিপুরাদের বৈসুক, মারমাদের সাংগ্রাই আর চাকমা এবং তঞ্চংগ্যাদের বিজু, এই তিন উৎসব মিলে হয় পাহাড়ের প্রাণের উৎসব 'বৈসাবি'। তবে এছাড়াও তঞ্চঙ্গ্যারা বিষু, অহমিয়ারা বিহু ও চাক, ম্রো, খিয়াং ও খুমিরা চাংক্রান নামে উৎসবটি পালন করে। কী হয় এই উৎসবে? চলুন জেনে আসা যাক।

 

বৈসুক

Tripura

ত্রিপুরাদের বৈসুক উৎসবের ঐতিহ্যবাহী গড়াইয়া নৃত্য

ত্রিপুরাদের বৈসুক উৎসবের অন্য নাম বৈসু বা বাসুই। দিনের বিচারে একে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। হারি বৈসু, বিসুমা ও বিসিতকাল। হারি বৈসু পালন করা হয় চৈত্র সংক্রান্তির পূর্ব-দিনে। এই দিন তারা আগামী দিনের সুখ ও সম্পদের জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে।

বিসুমা পালন হয় চৈত্র সংক্রান্তিতে। এ দিনকে বলা যায় 'খাদ্য উৎসব'। এদিন তারা পুরানো বিবাদ ভুলে গিয়ে পরস্পরের বাড়িতে মিষ্টান্নসহ নানা ধরনের মুখোরোচক খাবার পাঠায়। এই উৎসবের প্রধান আকর্যণ থাকে জনপ্রিয় খাবার 'গণত্মক বা পাচন'।

নববর্ষের দিনে পালন হয় বিসিতকাল। এ দিনের বিশেষ আয়োজন থাকে ফুল ও পানি নিয়ে খেলার আয়োজন। বিশেষ করে পানি নিয়ে খেলাটা উৎসবটি বৈসুর-এর প্রধান আকর্ষণ হিসেবে বিবেচিত হয়। এর প্রধান উদ্দেশ্য পানি দিয়ে পুরানো দিনের সকল গ্লানি ধুয়ে দেয়া।

এছাড়াও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের বৈসুর অপরিহার্য অনুষঙ্গ গড়াইয়া নাচ। গড়াইয়া নাচে মোট ২২টি মুদ্রা আছে। ২২ মুদ্রায় মানবজীবনের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সব ক্রিয়াকলাপ প্রদর্শিত হয়ে থাকে। এ নাচে কেউ একবার অংশ নিলে তাকে পরপর তিনবার অংশ নিতে হয়। ত্রিপুরাদের বিশ্বাস, নাচের মধ্য দিয়ে গড়াইয়া দেবতা তুষ্ট হন।

 

সাংগ্রাই

Marma

মারমাদের ঐতিহ্যবাহী জল খেলা

মারমাদের সাংগ্রাই উৎসব চলে চারদিন ব্যাপী। উৎসবের প্রথম দিনকে বলা হয় পাইং ছোয়াই, যার অর্থ ফুল তোলা। এদিন মারমারা বৌদ্ধ মন্দিরে গিয়ে প্রার্থনার পাশাপাশি নদীর ঘাটে বৌদ্ধ মূর্তিদের দুধ ও পানি দিয়ে স্নান করায়। ২য় দিন হয় সাংগ্রাই আক্রাইনিহ। এই দিন তারা পাড়ায় পাড়ায় পানি নিয়ে উৎসব করে। পরের দুইদিন হয় সাংগ্রাই আতানিহ্ ও লাছাইংতারা (কচুংলাহ্‌চাইংতারা) নামের উৎসব।

 

বিজু

Biju

নদীর ঘাটে ফুল দিয়ে পানির দেবতা ‘গোঙামা'র পূজা (বিজু)

এই উৎসবটির মুখ্য উদ্দেশ্য হল পুরাতন বছরকে বিদায় জানানো এবং নতুন বছরকে সাদরে গ্রহণ করা। চৈত্র মাসের শেষ দুই দিন এবং পহেলা বৈশাখ নিয়ে মোট তিন দিন ধরে বিজু উৎসব চলে। বিজু উৎসবে তিন দিনের আলাদা নামকরণ করা হয়েছে। যেমন: প্রথম দিন ফুল বিজু, দ্বিতীয় দিন মূল বিজু ও তৃতীয় দিন গোজ্যাপোজ্যা।

ফুল বিজুর দিনে ফুল দিয়ে ঘর সাজানো হয়। সূর্যোদয়ের সময় নদীর ঘাটে ফুল দিয়ে পানির দেবতা 'গোঙামা'-কে পূজা দেওয়া হয়।

মূল বিজুর দিনে ঘরে ঘরে নানাবিধ খাদ্যের আয়োজন করা হয়। এই দিনে বত্রিশ প্রকার সবজি দিয়ে এক প্রকার খাবার তৈরি করা হয়। এই খাদ্যকে বলা হয় 'পাজন'। ৩৬ রকমের পদ দিয়ে প্রকৃত পাজন বানানো হয়।

গোজ্যাপোজ্যা, এই দিনে নিকট আত্মীয়-স্বজনকে আপ্যায়ন করা হয়। নতুন বছরের শুভ কামনায় বিহারে গিয়ে বুদ্ধের আশীর্বাদ গ্রহণ করা হয় এবং পাড়ার ছোটরা বয়স্কদের কাছ থেকে আশীর্বাদ গ্রহণ করে।

এছাড়াও বিজু উৎসবকে সামনে রেখে দুই ধরনের মদ তৈরি করা হয়।

১. দো-চোয়ানি: ভাত পচিয়ে তার রস পাতিত করে এই মদ তৈরি করা হয়। এই প্রক্রিয়া দুই বার পরিস্রুত করে এ্যালকোহলের পরিমাণ বাড়ানো হয়। দুই বার পাতন করার কারণে একে দো-চোয়ানি বলে। দো-চোয়ানির রঙ একেবারে পানির মতো স্বচ্ছ হয়ে থাকে। বিন্নি চালের ভাত থেকে মানের দোচায়ানি তৈরি হয়। এতে প্রায় ৭০ -৭৫ ভাগ এ্যালকোহল থাকে।

২.  জগরা বা কাঞ্জি: পচা ভাতের রস থেকে উৎপন্ন মদ। এই মদ ঈষৎ সাদা রঙের হয়। এর স্বাদ অম্লমধুর। এতে অ্যালকোহলের পরিমাণ থাকে খুবই কম। চাকমা'রা একে অনেক সময় 'চাকমা বিয়ার' বলে।

 

৪৯১ পঠিত ... ১৫:৩৮, এপ্রিল ১৩, ২০২২

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top