আইফেল টাওয়ার নিয়ে দশটি 'একটু অন্যরকম' তথ্য

১০৬৩ পঠিত ... ১৭:৫৬, জানুয়ারি ১৭, ২০২২

eifle-tower-fact (1)

আইফেল টাওয়ারের নাম জীবনে শোনেননি এমন মানুষ প্রায় নেই বললেই চলে। মূলত ফরাসী বিপ্লব স্মরণীয় করে রাখতে নির্মাণ করা হয়েছিলো আইফেল টাওয়ার। আইফেল টাওয়ার প্যারিস শহরের শুধু একটি আকর্ষণ নয়, গোটা বিশ্বেই পরিচিত এক নাম। চলুন আজ জেনে আসি আইফেল টাওয়ার সম্পর্কে অজানা কিছু তথ্য!

 

১। উচ্চতা: আইফেল টাওয়ারের উচ্চতা ১০২৪ ফুট (৩১২ মিটার)। ৩১ মার্চ, ১৮৮৯ এ কাজ শেষ হওয়ার পরপরই আইফেল টাওয়ারটি বিশ্বের সবচেয়ে মানবসৃষ্ট উঁচু স্থাপনায় পরিণত হয়৷

৪১ বছর পর নিউইয়র্কের ক্রিসলার বিল্ডিংটি নির্মাণ করা হয় এবং এটি আইফেল টাওয়ারের উচ্চতাকে ছাড়িয়ে যায়। এরপর একটি মজার ব্যাপার ঘটে । আইফেল টাওয়ারের মাথায় একটি অ্যান্টেনা যুক্ত করা হয় যা আইফেল টাওয়ারের উচ্চতাকে ১০৬৩ ফুট/৩২৪ মিটার পর্যন্ত প্রসারিত করে। যার অর্থ হলো, এটি আবার ক্রিসলার বিল্ডিংকে ছাড়িয়ে যায় ।

অবশ্য খুব বেশিদিন আইফেল টাওয়ার এর গৌরব ধরে রাখতে পারেনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শীঘ্রই অন্যান্য ভবন নির্মাণ করা হয় এবং আইফেল টাওয়ার এই প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে যায়।আইফেল টাওয়ারটি ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত ফ্রান্সে সবচেয়ে উঁচু স্থাপনা ছিল।

 

) টাওয়ারের ভেতরে একটা অ্যাপার্টমেন্ট আছে!

বিশ্বাস করতে কষ্ট হলেও একথা সত্যি যে আইফেল টাওয়ারের তৃতীয় তলায় একটি গোপন অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। যদিও গুস্তাভ আইফেল টাওয়ারটির নকশা করেননি, তবে নকশায় কী অন্তর্ভুক্ত করা উচিত তাতে তার প্রভাব ছিল। মজার ব্যাপার হলো তার জন্য টাওয়ারের ভিতরে নিজস্ব ব্যক্তিগত অ্যাপার্টমেন্টে  বাথরুম, রান্নাঘর এবং আলাদা টয়লেট ছিল। তিনি একে টমাস এডিসনের মতো অতিথিদের হোস্ট করার জন্য একে ব্যবহার করতেন এবং প্রায়শই প্যারিসের ধনী ব্যক্তিরা তাঁর সাথে যোগাযোগ করতেন অ্যাপার্টমেন্টটি ভাড়া নিতে!

বর্তমানে অ্যাপার্টমেন্টটি জনসাধারণের জন্য জাদুঘর হিসাবে উন্মুক্ত এবং সেখানে গেলেই আপনি দেখতে পারবেন গুস্তাভ আইফেল এবং টমাস এডিসন উভয়েরই দু’টো মোমের মূর্তি।  

 

) আইফেল টাওয়ার মাত্র ২০ বছর টিকে থাকার কথা ছিলো!

গুস্তাভ আইফেল মূলত আইফেল টাওয়ারটি নির্মাণ করেছিলেন  ফরাসি বিপ্লবের ১০০ বছর স্মরণে। ১৮৮৯ সালে আয়োজিত এক্সপোজিশন ইউনিভার্সেলে (যা বিশ্ব মেলা নামেও পরিচিত) প্রবেশ করা হয় যা তখন প্রায় ৩২ মিলিয়ন দর্শনার্থীকে আকৃষ্ট করে।

বিশ্ব মেলা শেষ হওয়ার পর এবং একটি নির্দিষ্ট সময় পর মানুষ আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে এই ভেবে টাওয়ারটিকে মাত্র বিশ বছর বাঁচিয়ে রাখার কথা চিন্তা করা হয়। তবে মজার ব্যাপার হলো , কখনোই মানুষের এর উপর থেকে আগ্রহ চলে যায়নি এবং এখনো প্রতিনিয়ত পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গা থেকে দর্শনার্থীরা ভীড় করেন ।

শুধু তাই নয়, আইফেল টাওয়ারকে রেডিও ট্রান্সমিশনের কাজেও একে ব্যবহার করা হয়। ১৯২৫ সালে প্রথম পাবলিক রেডিও প্রোগ্রাম সালে আইফেল টাওয়ার থেকে সম্প্রচারিত হয়েছিল।

 

) আইফেল টাওয়ারে ডাকঘর!

মজার ব্যাপার হলো আইফেল টাওয়ারের প্রথম তলায় একটা ছোট ডাকঘর ছিল। দুঃখজনকভাবে এটি আর নেই, কিন্তু সেই সময়ে মানুষ আইফেল টাওয়ার থেকে পোস্টকার্ড এবং চিঠি পোস্ট করতে পারতো। ইউনিক জায়গা থেকে চিঠি পোস্ট করে প্রায়ই তারা বন্ধু এবং পরিবারের মানুষকে তাক লাগিয়ে দিতেন। চিন্তা করে দেখুন তো, আপনিও আইফেল টাওয়ার থেকে একটি চিঠি পাচ্ছেন!

 

) আইফেল টাওয়ারের বর্ণ-বৈচিত্রতা:

বছরের পর বছর ধরে প্যারিসের ফ্যাশন প্রবণতা বজায় রাখার জন্য আইফেল টাওয়ারকে অনেক রঙে আঁকা হয়েছে। ১৮৮৯ সালে যখন আইফেল টাওয়ার প্রথম নির্মাণ হয়েছিল তখন এর রঙ ছিলো লাল/বাদামী।

দশ বছর পরে এর উপর একটি হলুদ আবরণ যোগ করায় একটি হলুদ/বাদামী রঙ সৃষ্টি হয়৷ আইফেল টাওয়ার আজকের মতো রঙ করার আগে ছিলো চেস্টনাট বাদামী রঙের।

আজকের আইফেল টাওয়ারের রঙ ১৯৬৮ সালে বিশেষভাবে মিশ্রিত হয়েছিল যা পরিচিত 'আইফেল টাওয়ার ব্রাউন' নামে পরিচিত ছিল। আইফেল টাওয়ার প্রতি সাত বছর পর নতুন করে রং করা হয় এবং সেখানে প্রায় ৬০ টন (৬১০৯৯ লিটার) পেইন্ট ব্যবহার করা হয়! আপনি যখন যাবেন তখনো হয়তো একদম ভিন্ন কোনো রঙ দেখলেও দেখতে পারেন..

 

) আইফেল টাওয়ারের বাঙ্কার?

আইফেল টাওয়ারের দক্ষিণ স্তম্ভের নীচে একটি পুরানো সামরিক বাঙ্কার রয়েছে। ধারণা করা হয়,  প্যারিসের একটি মিলিটারি স্কুলের সাথে গোপন সুড়ঙ্গটি দিয়ে সংযোগ স্থাপন করা হয়েছিল।

যদিও বাঙ্কারটি এখনও জনসাধারণের কাছে কিছুটা রহস্যময়, প্রি-বুকড করা ট্যুরের দর্শনার্থীদের জন্য এটি উন্মুক্ত। আপনিও কিন্তু আগেই ট্যুর বুক করে বাঙ্কারটি ঘুরে আসতে পারেন।

 

 

) আইফেল টাওয়ারের তাপমাত্রা পরিবর্তন:

মজার ব্যাপার হলো আইফেল টাওয়ারটি লোহার তৈরি, যার মানে তাপমাত্রা পরিবর্তন হলে টাওয়ারের আকৃতিও পরিবর্তন হয়।

ঠাণ্ডা আবহাওয়ায়, লোহা প্রায় ৬ ইঞ্চি (১৫ সেন্টিমিটার) পর্যন্ত সঙ্কুচিত হতে পারে, অর্থাৎ টাওয়ারটি কিছুটা ছোট হয়ে যায়।

আবার গরম আবহাওয়ায়, তাপ লোহাকে প্রসারিত করে এবং রেকর্ড থেকে জানায়া যায় এটি অতীতে ৭ ইঞ্চি (১৮ সেন্টিমিটার) পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছে!

 

) আইফেল টাওয়ারের গায়ে বিজ্ঞাপন?

প্রায় বহুতল ভবনের গায়ে আমরা বিজ্ঞাপন দেখতে পাই।কিন্তু আইফেল টাওয়ারের গায়েও বিজ্ঞাপন দেখবো—এমনটা ভাবা যায়?

১৯২৫ থেকে ১৯৩৬ সাল পর্যন্ত আইফেল টাওয়ারের গায়ে ২৫০,০০০টি বাল্ব দ্বারা ‘Citroen’ লেখা ছিলো।

বিখ্যাত ফরাসি গাড়ি প্রস্তুতকারক কোম্পানি সিট্রোয়েন তার প্রচারের জন্য আইফেল টাওয়ারকেই একটি বিলবোর্ড হিসাবে ব্যবহার করেছিল।

মজার ব্যাপার হলো বিজ্ঞাপনটি এত উজ্জ্বল ছিল যে এটি ২০ মাইল (৩২ কিলোমিটার) দূর থেকে দেখা যেত!

 

) আইফেল টাওয়ার দখল!

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির যখন প্যারিস দখল করে, এ সময় তারা আইফেল টাওয়ারের শীর্ষে তাদের পতাকা রাখার চেষ্টা করে। ততদিনে টাওয়ারটি জনসাধারণের জন্য বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো, এমনকি লিফটের তারগুলিও ছিলো কাটা।

নাৎসিরা তাদের প্যারিস দখল দেখানোর জন্যই মূলত পতাকা ওড়ানোর কথা ভাবে৷ তবে পতাকাটি এত বড় ছিল যে, এটি সাথে সাথেই পড়ে গিয়েছিল এবং পরবর্তীতে সেখানে একটি ছোট পতাকা দিয়ে প্রতিস্থাপন করতে হয়।

১০৬৩ পঠিত ... ১৭:৫৬, জানুয়ারি ১৭, ২০২২

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top