অদ্ভুত যে ডায়েটগুলো করার চেয়ে না করা ভালো

৭৯৬ পঠিত ... ১৭:৩৮, জানুয়ারি ১৩, ২০২২

weird-diet-

‘ডায়েট' শব্দটির উদ্ভব গ্রিক শব্দ 'ডায়েটা' থেকে, যার অর্থ—স্বাভাবিক জীবনযাপন। বিশ্বাস করতে কষ্ট হলেও এ কথা সত্যি যে, বহু বছর আগ থেকেই মানুষ নিজেদের ফিটনেস ধরে রাখার জন্য বিভিন্ন রকম ডায়েটের আশ্রয় নিয়েছে। তবে আজ আমরা জানবো উদ্ভট কিছু ডায়েটের কথা যা অত্যন্ত বিপদজনক এবং শরীরের জন্যও ক্ষতিকর। চলুন তাহলে শুরু করি…

১) আইস ডায়েট: এই ডায়েট অনুযায়ী, আপনাকে নিয়মিত চার কাপ (এক লিটার) বরফ খেতে হবে। অন্য কোনো খাবার কিংবা জীবনধারা নিয়ন্ত্রণ করার দরকার নেই। কিছু ডায়েটিশিয়ান মনে করতেন, মানুষের পক্ষে এই ডায়েট অনুসরণ করে ওজন কমানো সহজ যেহেতু তারা বেশি পরিমাণে পানি খাচ্ছে। শরীরে তাপমাত্রার তারতম্যের কারণে ক্যালোরি বার্নও হতো বলে তারা ধারণা করেন।  

সত্যি কথা হলো, এই ডায়েটে আপনার ক্যালরি বার্ন হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই, বরং প্রচুর বরফ খাওয়ায় খুব দ্রুত দাঁতের ক্ষতি হয়৷

২) কটন বল ডায়েট: চরম বিপদজনক ও ঝুঁকিপূর্ণ  ডায়েটটির প্রচলন হয়েছিলো মডেলিং শিল্পে। এই ডায়েট অনুসরণকারীরা খাওয়ার আগে তুলোর বলগুলিকে জ্যুস, স্যুপ এবং অন্যান্য তরল খাবারে ডুবিয়ে রাখেন।

ক্যালরি ইনটেক কম হওয়ায় এটি তাদের কম খাবার খেতে সাহায্য করে। যার ফলে, শরীরও থাকে স্লিম।

তবে কেউ ভুলেও এই ডায়েট অনুসরণ করতে যাবেন না যেন! চিকিৎসকদের মতে, তুলোর বল এবং কাগজের টিস্যুগুলির মতো অখাদ্য জিনিসগুলি খাওয়ার ফলে গুরুতর স্থায়ী অন্ত্রের সমস্যা হতে পারে।

৩) এয়ার ডায়েট: এই ডায়েটের মূলমন্ত্র হলো, খাবার তৈরি করা যাবে, কল্পনায় খাওয়া যাবে, খাবার নিয়ে কথা বলা যাবে, খাবারের ছবিও আঁকা যাবে, মোটকথা সবই করা যাবে শুধু খাবার খাওয়া ছাড়া। খাওয়ার সময় আপনি কেবল একটি জিনিসই খাচ্ছেন, তা হলো বাতাস। কি অদ্ভুত, তাই না!

তবে সমস্যা হলো, এই ডায়েটে অভ্যস্ত লোকেরা চর্বি (ফ্যাট) না হারিয়ে পেশী (মাসল) হারান এবং এই ধরনের মেটাবলিজমে শরীর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া তাদের কেউ যদি নিয়মিত খাদ্যাভাসে ফেরত যান তবে তাদের  স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি দ্রুত ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে।

৪) বেবি ফুড ডায়েট: শিশুর খাদ্য মূলত তৈরি করা হয় শিশুদের জন্যই। তবে কিছু লোক বিশ্বাস করে যে এটি প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যও উপকারী। বেবি ফুড ডায়েটের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সংস্করণ হলো এটি মানুষকে এক বেলা খাবারের পরিবর্তে এক জার শিশুর খাবার খাওয়াতে উৎসাহ দেয়।

৫) প্রেয়ার ডায়েট: ধর্মানুসারীদের ভেতর একট জনপ্রিয় ডায়েট হলো প্রেয়ার/প্রার্থনা ডায়েট। প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে স্রষ্টার কাছে কম খাবার খাওয়ার প্রার্থনাই এই ডায়েটের মূল সূত্র।  এছাড়াও এই ডায়েট অনুসরণকারীরা কম খাবার খাওয়া, চর্বি হারাতে বা পেশী তৈরিতে সাহায্যের জন্য তাদের ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেন। তবে নিজস্ব খাদ্যাভ্যাস বা জীবনধারায় পরিবর্তন না আনলে এ ধরনের ডায়েটে ফল পাবার কোনো সম্ভাবনা নেই।  

৬) ইয়ার স্ট্যাপলিং (কান স্ট্যাপলিং): কিছু  গবেষণা পরামর্শ দিয়েছে যে, কানের নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় স্ট্যাপলিং করা ওজন কমাতে সাহায্য করে।  

অনেক চিকিৎসক অবশ্য কানে স্ট্যাপলিং এবং আকুপাংচারের মধ্যে পার্থক্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কেননা প্রফেশনাল ট্রেইনি দ্বারা করা আকুপাংচারও কিন্তু শরীরকে শিথিল করতে এবং শরীরের নির্দিষ্ট কিছু অংশে ইতিবাচক শক্তিকে ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করে। যার মাধ্যমে চর্বি হ্রাস পায় এবং পেশী বানাতে সাহায্য করে। 

৭) স্লিপ ডায়েট: কিছু ডায়েটিশান আপনাকে যে উগ্রবাদী ডায়েট পদ্ধতি বাতলে দিতে পারে, তা হলো  স্লিপ ডায়েট৷ এর পেছনে যৌক্তিকতা হলো দিনে প্রায় ২৪ ঘণ্টা ঘুমিয়ে থাকলে আপনি স্বাভাবিকভাবেই খাওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখবেন।  

চিকিৎসকরা এই ধরনের ডায়েটের চরম নিন্দা করেছেন। তবে কিছু এক্সট্রা ঘুম মাঝে মাঝে আমাদের  সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয়। প্রকৃতপক্ষে, ভালো ঘুম আমাদের দীর্ঘ জীবন, একটি স্বাস্থ্যকর ব্রেইন ও হার্ট,  এবং আরও ভালোভাবে বললে, সামগ্রিক সুস্থতার সাথেই জড়িত।

৮) ডেজার্ট ডায়েট: আমরা সাধারণত দেখে থাকি, ডেজার্টকে আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ বলা হয়, অন্তত যারা স্লিম হতে চান, তাদের জন্য তো অবশ্যই।  

তবে এই ডায়েট কিন্তু আমাদের সম্পূর্ণ উলটা কথা বলে। এই ডায়েট অনুযায়ী, সকালবেলা ব্রেকফাস্টের সাথেই ডেজার্ট কিংবা মিষ্টি খেয়ে ফেলতে হবে৷ এটি বাকি দিনের জন্য আপনার চিনির লোভ কমাতে সাহায্য করবে বলে ধারণা করা হয়। হতে পারে এটি একটি কেক, কুকি বা আইসক্রিম!

তবে আসল কথা হলো, দিনের প্রথম খাবারে উচ্চ চিনিযুক্ত খাবার খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। যার ফলে এটি সারা দিন আপনাকে উদ্বিগ্ন বা খিটখিটে  মেজাজকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। সুতরাং এটি চেষ্টা করতে না যাওয়াই আমাদের জন্য শ্রেয়।

৯) ভিশন ডায়েট: ভিশন ডায়েটের প্রচলন হয় ২১ শতকের শুরুর দিকেই। নীল লেন্সের মধ্য দিয়ে তাকালে খাবারকে মানুষের চোখে কম আকর্ষণীয় মনে হয়—এমন এক ধারণার উপর ভিত্তি করেই এই ডায়েটের প্রচলন হয়।  যার ফলে, এই নীল লেন্সের চশমা পরা খাবারের লোভ রোধ করতে এবং কম খেতে বেশ সাহায্য করে থাকে৷  

এ ক'দিন পর অবশ্য ভিশন ডায়েটের আরও নতুন এক ভার্সন আসে। সেখানে নীল লেন্সের ভেতর দিয়ে খাবারগুলোকে আরও বড় দেখাতো। সেখান থেকে খাদ্য গ্রহনকারীরা ধরে নিতো তারা ইতিমধ্যে অনেক খাবার খেয়ে ফেলেছে! 

১০) স্মোকিং ডায়েট: ১৯২০ সালের দিকে আশ্চর্যজনকভাবে শুরু হয় স্মোকিং ডায়েট! সিগারেটে বিদ্যমান নিকোটিন ক্ষুধা হ্রাস করায় এ ডায়েটকে প্রমোট করা হয়। প্রতি বেলা খাবারের বদলে একটি সিগারেট খেতে উদ্বুদ্ধ করা হতো। অদ্ভুত লাগলেও সত্যি, মডেলিং ইন্ডাস্ট্রিতে এখনো এর কম-বেশি ব্যবহার আছে৷ অথচ নিয়মিত সিগারেট খেলে ফুসফুস ক্যান্সারসহ আরও ভয়ানক অসুখ হবার এক প্রবল সম্ভাবনা থাকে। তবুও মানুষ একটু স্লিম ফিগারের জন্য কী না করতে রাজি!

৭৯৬ পঠিত ... ১৭:৩৮, জানুয়ারি ১৩, ২০২২

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top