ভুবন বাদ্যকরের 'কাঁচা বাদাম' যেভাবে ভুবন মাতালো

৮৫৪ পঠিত ... ১৮:১৫, ডিসেম্বর ০৪, ২০২১

badam-

কাজ শেষে বাসে করে বাড়ি ফিরছি। বাসে মানুষের কর্মকাণ্ড দেখা বা কথাবার্তা শোনা আমার কাছে সবসময়ই এক মহাবিনোদনের উৎস। তেমনি বিনোদনের উৎস খুঁজতে গিয়ে শুনি পাশের লোক গুনগুন করে কী যেন গান গাইছেন। মন দিয়ে তা শুনে গানটি বুঝে ওঠার আগেই আরেক লোক দেখি সেই সুরে মাথা দুলিয়ে আস্তে আস্তে গান গাওয়া শুরু করে দিল। গানের আগা-মাথা কিছু না বুঝলেও বুঝতে পারলাম বাদাম নিয়ে কিছু একটা গান হচ্ছে। বাস থেকে নেমে এমন অদ্ভুত গান শুনে বাড়ির পথে হাঁটছি, দেখি চায়ের দোকানে সেই চেনা সুর, যেটা বাসে শুনেছিলাম। পাশেই সাঁই করে এক টয়োটা চলে গেল, দেখি সেখানেও বাজছে বাদাম! বাড়িতে গিয়ে ফোনটা খুললাম, একি,  ফেসবুক-ইউটিউব-রিলস-টিকটক সবখানে চলছে ‘বাদাম বাদাম দাদা কাঁচা বাদাম, আমার কাছে নাই গো বুবু ভাজা বাদাম... ’, গানটি! 

এমন ঘটনা গত কিছু দিনে নিশ্চয়ই আপনাদের সাথেও ঘটেছে? ‘কাঁচা বাদাম’ গানে সয়লাব কি আপনার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও? এই গানে গুনগুন করতে করতে কি ভেবেছিলেন গানটির উৎপত্তি কোথায়? 

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সুদূর বীরভূম জেলার বাদাম বিক্রেতা ভুবন বাদ্যকর। ভুবন বাদ্যকর কোনো বাদ্য ছাড়াই বেশ ভেবেচিন্তে গান বেঁধেছিলেন। সে গানের কথায় নিজেই মিশিয়েছেন সুর। কিন্তু ভুবনের সে গান যে ভুবন মাতিয়ে ফেলবে তা ভাবেননি এই বাদামবিক্রেতা।

পুরনো বাইকের পিছনে বাদামের বস্তা চাপিয়ে গান গাইতে গাইতে বাদাম বেচেন ভুবন। সেই গান ভিডিও করে একজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করার সঙ্গে সঙ্গে ভুবনের ‘কাঁচা বাদাম’ গানটি তার ছোট্ট গ্রাম কুড়ালজুড়ির গণ্ডি পেরিয়ে পৌঁছে গেছে সকলের ফোনে ফোনে। বিশেষ করে বাংলাদেশ ও ভারতের সোশ্যাল মিডিয়ায় রাতারাতি ছড়িয়ে পড়ে এই গান।

ভুবনের এই গান রিমিক্সও করেছেন বহু শিল্পী। ভুবন বলেন, 'চিন্তা-ভাবনা করতে করতে গানটা লিখে ফেলেছি। তাতে আমি সুর বসাই। গ্রামগঞ্জে ঘুরে ঘুরে বাদাম বিক্রি করি। বাংলার বাইরেও ঝাড়খণ্ডে বাদাম বিক্রি করেছি। আগে সাইকেল করে বাদাম বেচতাম। আজকাল একটা পুরনো মোটরবাইকে চড়ে বিক্রিবাটা করি।' 

কিন্তু 'কাঁচা বাদাম’ গানকে নানা ভাবে ব্যবহার করে নেট মাধ্যমে আয় রোজগার করে চলছেন কনটেন্ট ক্রিয়েটররা। এদিকে গানের স্রষ্টা ভুবন কোনো অর্থই পাননি। শুক্রবার বীরভূমের দুবরাজপুর থানায় গিয়ে তিনি অভিযোগ দায়ের করেছেন। ভুবন বাদ্যকরের অভিযোগ, ইউটিউবে তার গানের স্বত্ব ‘সংরক্ষিত’ হিসাবে দেখাচ্ছে। অথচ তার নিজস্ব কোনো অ্যাকাউন্ট নেই ইউটিউবে।

নিজের নামে গানের স্বত্বের পাশাপাশি গান থেকে উপার্জিত প্রাপ্য অর্থ পেতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এ শিল্পী।

ভুবন বলেন, 'গানটি ভাইরাল হওয়ার পর প্রচুর মানুষ বাড়িতে ভিড় করছেন। সকলেই আমার গান ভিডিও করতে চান। তার পর সেই গান নেটমাধ্যমে ছেড়ে অনেক টাকা আয়ও করছেন। অথচ আমার হাত খালি।'

বাদাম বিক্রি করতে যে গান বেঁধেছিলেন তা বেচে আজ টাকা রোজগার করছেন নেটিজেনরা। অন্যদিকে গান জনপ্রিয় হওয়ায় খ্যাতির বিড়ম্বনায় পড়েছেন ভুবন। রাস্তায় বেরোলেই অনেকেই ছুটে এসে ছবি তোলার আবদার করছেন।

নিরাপত্তার জন্য থানায় যাওয়ার সময় মাথায় হেলমেট পরে বাড়ি থেকে বেরোন তিনি। যাতে কেউ চিনতে না পারেন। 

৮৫৪ পঠিত ... ১৮:১৫, ডিসেম্বর ০৪, ২০২১

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top