দ্বাদশ শতাব্দীর দিকে দক্ষিণ পশ্চিম ইউরোপের ছোট্ট একটা গ্রামে খুবই চুপচাপ এবং আত্নকেন্দ্রিক একটি ছেলে বাস করতো। রোজ বিকেলে তার সমবয়সীরা যখন মাঠে খেলতে যেতো তখন সেও তাদের অনুসরণ করতো। কিন্তু কখনই তাদের সাথে খেলায় যোগ দিত না। প্রায়ই মাঠের এক কোণে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে কি যেন চিন্তা করতো। একরকম বন্ধুবান্ধবহীন ছেলেটার অদ্ভুত আচরণে তার সমবয়সী ছেলেমেয়েরা অনেকটা অভ্যস্তই ছিলো। অন্যদের মধ্যে তাকে নিয়ে খুব একটা আগ্রহ ছিলো না ঠিকই, কিন্তু সুযোগ পেলে ঠাট্টা করতেও ছাড়তো না।
এমনি এক বিকেলে ছেলেটা একা একা বসে নিবিড় মনোযোগে আকাশের দিকে তাকিয়ে রয়েছে । হঠাৎ কী যেন দেখলো সে । দৌড়ে গেল তার সমবয়সীদের কাছে। চিৎকার করে সবাইকে জিজ্ঞেস করলো ’আমাকে খেলায় নেবে?’
তার সমবয়সী ছেলেরা যথারীতি অবাক তার কাণ্ড দেখে । অনেকেরই বিস্ময়ের সীমা ছিলো না, কারণ যে ছেলেকে তারা কখনও জোর করেও খেলায় আনতে পারে নি সে আজ নিজে থেকে তাদের সাথে খেলতে চাইছে !
তারা আগ্রহ নিয়ে ছেলেটার কাছে জানতে চাইলো কী এমন হয়েছে যার জন্য তার এতো উচ্ছ্বাস! ছেলেটা শুধু বললো তার কাজ শেষ, এখন থেকে সে নিয়মিত তাদের সাথে খেলতে আসবে। ছেলেটার নাম ছিলো লিওনার্দো বোনাচি ওরফে ফিবোনাচি । যে পরবর্তীতে একজন বিখ্যাত ম্যাথামেটিশিয়ান হিসেবে পৃথিবীতে পরিচিতি পায় । আর সেদিন সে যা দেখেছিলো তা দেখতে অনেকটা এরকম ছিলো -
ছোট ছেলে ফিবোনাচি অনেকদিন যাবৎ আকাশে পাখি উড়ার ধরন পর্যবেক্ষণ করে আবিষ্কার করলেন পাখি যখন একসাথে হয়ে ওড়ে এবং দূরের পথ অতিক্রম করতে চায় তখন তারা - ১ ১ ২ ৩ ৫ ৮ ১৩ ২১ ৩৪ .. এই নীতি অনুসরণ করে । এখন মনে প্রশ্ন আসতে পারে তাদের এভাবে োড়ার দরকারই বা কী !
উদাহরণস্বরুপ বলা যায়, প্রতি বছর শীতে সাইবেরিয়া থেকে লাখ লাখ পাখি বাংলাদেশে আসে। যাদের আমরা অতিথি পাখি বলে জানি । এইসব অতিথি পাখি বাংলাদেশে আসতে প্রায় সাড়ে চার হাজার কিলোমিটার অতিক্রম করে । একটা পাখির পক্ষে একা তারা যে পদ্ধতিতে ওড়ে, তাতে একটানা সাড়ে চার হাজার কিলোমিটার অতিক্রম করা মোটামুটি অসম্ভব। কারণ পাখিকে প্রচণ্ড বাতাসের চাপ অতিক্রম করে উড়তে হয় এবং সামনের দিকে এগোতে হয়।
ছবি- জাহিদ শিফাত (ফ্লিকার)
উপরে দেয়া ছবিটাতে একেবারে ডানে যে পাখিটাকে দেখছেন সে মূলত এই ঝাঁকটার ড্রাইভিং সীটে রয়েছে । এতোগুলো পাখির মধ্যে সে সবচেয়ে বেশী শক্তি ব্যয় করে অর্থাৎ বাতাসের চাপ কাটিয়ে সামনে এগোচ্ছে । এর পরে যে আছে সে অপেক্ষাকৃত একটু কম শক্তি ব্যয় করছে তার সামনের জনের থেকে । এর পরে যে দুইটি পাখি আছে তারা তার আগের জনের চেয়ে আরেকটু কম শক্তি ব্যয় করছে । প্রতিটি সারির ক্ষেত্রে একই নিয়ম প্রযোজ্য । নির্দিষ্ট একটা সারির পাখিরা তার আগের সারির চেয়ে কম শক্তি ব্যয় করে ওড়ে এবং তার পরের সারির চেয়ে বেশি শক্তি ব্যয় করে । এর ফলে উড়বার ক্ষেত্রে পাখিদের সবসময় সর্বোচ্চ শক্তি ব্যয় করতে হয় না । একেবারে শেষের যে সারি দেখা যাচ্ছে, তারা মূলত প্যাসেঞ্জার সীটে বিশ্রামরত অবস্থায় রয়েছে। কিছুক্ষণ পর পর তারা ক্রমান্বয়ে তাদের অবস্থানের পরিবর্তন করবে । এইভাবেই চলে পাখিদের হাজার হাজার মাইলের অবিশ্বাস্য যাত্রা...
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন