১৯৭৯ সালে প্রকাশিত ‘এলিয়েন’ সিনেমার মূল ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন অ্যালেন রিপ্লে। সেই সিনেমায় রিপ্লের হাতে এই ঘড়িটি দেখা গিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে বারাক ওবামার হাতেও এই ঘড়িটি দেখা গিয়েছিল। এমনকি এটিই একমাত্র ব্র্যান্ডেড ঘড়ি, যেটি পরে জনসম্মুখে এসেছিলেন ওসামা বিন লাদেন। এই আইকনিক ঘড়িটি হচ্ছে ‘ক্যাসিও এফ-৯১ডব্লিউ’।
ঘড়িটির প্রথম উৎপাদনের ত্রিশ বছর পার হয়ে গেছে, অথচ এখনো জাপানি ঘড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ক্যাসিও প্রতি বছর এই মডেলের অন্তত ৩০ লাখ ঘড়ি উৎপাদন করে। তাই আপনার নিজের হাতে না থাকলেও আশেপাশে করো হাতে এই ঘড়িটি দেখলে অতটা অবাক হওয়ার কথা না।
১৯৮০’র দশকে ক্যাসিওতে নতুন নিয়োগ পাওয়া কর্মীদের জন্য ১০ দিনের সেনা প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক ছিল। রিয়োসুকে মোরিয়াই সম্ভবত তার সেনা প্রশিক্ষণের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েই এফ-৯১ডব্লিড মডেলের ডিজাইন করেছিলেন। মোরিয়াই তার ডিজাইনকে ‘স্মল, ফ্ল্যাট এন্ড সিম্পল’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হয়তো অনেকটা নিজের অজান্তেই যুদ্ধক্ষেত্রের জন্য উপযোগী এই ঘড়িটির ডিজািইন করেছিলেন তিনি।
মার্কেটিংয়ের জন্য ক্যাসিও এই ঘড়িটিকে ‘কুল' বা 'ট্রেন্ডি’ হিসেবে উপস্থাপন করেনি, বরং ‘রিলায়েবল' এবং 'গুড ভ্যালু’ হিসেবে উপস্থাপন করেছে। ক্যাসিওর ‘এফ’ সিরিজের অন্য ঘড়িগুলোও বিশ্বব্যাপী তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। তবে ডিজে থেকে পার্লামেন্ট মেম্বার, সেনাবাহিনী থেকে ইসলামিক স্টেট যোদ্ধা- সবার হাতেই শোভা পেয়েছে এই এফ-৯১ ডব্লিউ।
এই ঘড়িটির দাম (ইউরোপে ১০-২৫ ইউরো, কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে মাত্র ২.৫ ইউরো), সহজলভ্যতা ও বিশাল জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ জঙ্গি সংগঠন আল কায়েদার যোদ্ধাদের অন্যতম অনুষঙ্গ হিসেবেও এ ঘড়িটি বিশ্বের সংবাদমাধ্যমে স্থান করে নিয়েছিল। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে আল-কায়েদা নিজেদের যোদ্ধাদের মধ্যে এই ঘড়িটি বিতরণ করেছিল বলে বিভিন্ন সময় সংবাদমাধ্যমে এসেছে।
জঙ্গি যোদ্ধারা এফ সিরিজের ঘড়িগুলোর স্থায়িত্বের প্রশংসা করতো। বরফশীতল পানি থেকে উত্তপ্ত পানি, যেকোন পরিস্থিতিতেই এই ঘড়ি কার্যকর। জঙ্গি সংগঠনগুলোর কাছে পণ্যের রিলায়বিলিটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য কালাশনিকভ কিংবা টয়োটা পিক আপ ট্রাক তাদের মধ্যে এতটা জনপ্রিয়।
টাইম বোমা বা বিভিন্ন বিস্ফোরকে এই ঘড়ির অতিরিক্ত ও হরহামেশা ব্যবহারেরও কারণেও এটি বিশ্ববাসীর মনোযোগের কারণ হতে পেরেছিল। মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর ঘড়িটিকে আল-কায়েদার ‘সবচেয়ে বিশ্বস্ত আইইডি ট্রিগার’ হিসেবেও অভিহিত করে। ১৯৯৯ সালে যুক্তরষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস বিমানবন্দরে বড় আকারে বোমা হামলা চালানোর অভিযোগে আহমেদ রেসাম নামে এক ব্যাক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তার কাছে ৪টি বোমা পাওয়া গিয়েছিল এবং সবগুলোতেই এই এফ-৯১ ডব্লিউ ঘড়ি সংযুক্ত ছিল।
আল-কায়েদার রাজমি ইউসেফকে ভাবা হতো বোমা তৈরির একজন ‘জিনিয়াস’। তার হাতে সবসময়ই এই ঘড়িটি থাকতো। মার্কিন গোয়েন্দারা দ্রুতই এই ঘড়ির সঙ্গে সন্ত্রাসীদের যোগসূত্র খুঁজে পেতে শুরু করেন। এমনকি এই ঘড়ি পরার কারনে অনেককেই চরম জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। উইকিলিসকস কর্তৃক প্রকাশিত তারবার্তায় দেখা গেছে এক সন্দেহভাজন আল-কায়েদা যোদ্ধা মার্কিন সেনাদের উদ্দেশ্য করে বলেছিল- মার্কিন সেনারাও তো এই ঘড়ি পরে, তাহলে তারাও কি সন্ত্রাসী?
সত্যিই অনেক দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে এই ঘড়ির জনপ্রিয়তা আছে। যেমন, সিঙ্গাপুরের সেনাবাহিনী, ইউএস এয়ার ফোর্স ট্রেনিং ক্যাম্পস, ব্রিটিশ আর্মি এবং রয়্যাল এয়ার ফোর্স।
যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য ক্যাসিও এখন আরও ভারি ভারি ঘড়ি প্রস্তুত করে, তবে এফ-৯১ ডব্লিউ এখনো তুলনামূলকভাবে ভালোভাবে ব্যবহারযোগ্য।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন