অভিনেতা আবদুল কাদের। একই সাথে চালিয়ে গেছেন করপোরেট চাকরি, আর মন-মাতানো অভিনয়ে মাতোয়ারা করে গেছেন দর্শককে। মঞ্চ ও টেলিভিশন নাটকে সমান পারদর্শী এই গুণী অভিনেতার বর্ণিল জীবনের এই সাতটি ঘটনা আপনি নাও জানতে পারেন...
১# ছোটদের দলের দারুণ গোলকিপার ছিলেন আবদুল কাদের। একবার বড়দের দলের গোলকিপার প্রয়োজন হওয়ায় কাদেরকে নেয়া হলো। স্থানীয় সিরাজউদ্দৌলা ক্লাবের হয়ে মাঠে নেমেছিলেন তিনি। কিন্তু খেলা শুরু হওয়ার আগেই বৃষ্টি। বৃষ্টির কারণে প্রথমার্ধেই ৬টি গোল হজম করেন আবদুল কাদের। প্রথমার্ধের পর বসিয়েই দেয়া হলো তাকে। অপমানে ফুটবলই ছেড়ে দিলেন বেচারা আবদুল কাদের। এরপর ভাবলেন, ক্রিকেটটা একটু দেখা যাক। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, ক্রিকেট খেলতে গিয়ে প্রথম বলেই বোল্ড আউট হয়ে গেলেন। এরপর স্কুলেই একটি নাটকে অভিনয় করে সবার প্রশংসা পান তিনি।
২# সাধারণ জ্ঞানেও ভালো দখল ছিলো আবদুল কাদেরের। বিটিভিতে বলুন দেখি নামক সাধারণ জ্ঞানের প্রতিযোগীতামূলক একটি অনুষ্ঠান হতো। সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিনের চারজনের একজন ছিলেন আবদুল কাদের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দলটিই সেবার চ্যাম্পিয়ন হয়।
বিটিভিতে ২০০০ এরও বেশি নাটকে অভিনয় করেছেন আবদুল কাদের।
বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালেই তিনি টেলিভিশনে কাজ শুরু করেন। বিটিভির কিশোর ধারাবাহিক এসো গল্পের দেশে তার প্রথম টিভি নাটক।
৩# সমৃদ্ধ কর্মজীবনও ছিলো এই গুণী শিল্পীর। অভিনয় ছাড়াও দু'টি কলেজে অধ্যাপনা করেছেন। বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কাজ করেছেন এক্সিকিউটিভ হিসেবে। দেশসেরা ফুটওয়্যার কম্পানি বাটা ও বে ইম্পেরিয়াম লিমিটিড এর উচ্চপদে দায়িত্ব পালন করেছেন।
৪# মোটর সাইকেলে উঠতে ভয় পেতেন আবদুল কাদের। কোথাও কেউ নেই-এর শুটিং এ ব্যবহৃত মোটর সাইকেলের ছিলো না হ্যান্ডেল। বাইক চালাতেন লুৎফর জামান জর্জ, মাঝে বসতেন আসাদুজ্জামান নূর আর সবার পেছনে আবদুল কাদের। মোটর সাইকেলে ছাড়ার সময় আবদুল কাদের আসাদুজ্জামান নূরকে এমনভাবে জড়িয়ে ধরতেন অনেকসময় আসাদুজ্জামান নূরের পেটে নখের দাগ বসে যেতো।
৫# বাকের ভাইয়ের ফাঁসি না দেয়ার জন্য হুমায়ূন আহমেদকে অনুরোধ করেছিলেন আবদুল কাদেরও। আবদুল কাদেরের বাড়ির সামনে তখন মানুষজন জড়ো হয়ে স্লোগান দিতো, বদি তুমি সাক্ষী দিলে, মরবে তুমি খালে ঝিলে। বাসার নিচ দিয়ে 'সাক্ষি দেয়ার পর কীভাবে বের হস দেখবো' এমন চিরকুট দিয়ে দিতো। ভয় পেয়ে আবদুল কাদের হুমায়ূন আহমেদকে বলেছিলেন, 'হুমায়ূন ভাই, বাকের ফাঁসি না দিলে হয় না? অন্য কিছু দেখানো যায় না?' হুমায়ূন আহমেদ অবশ্য স্বভাবসুলভ রসিকতার ভঙ্গিতে বলেছিলেন, বাকের ফাঁসি কেউ আটকাতে পারবে না।
৬# নক্ষত্রের রাত নাটকের আবদুল কাদেরের করা দুলাভাই চরিত্রটি খুব জনপ্রিয় ছিলো। শ্বশুরবাড়িতে আসলেই তাঁকে শালা শালীরা সালাম করতো। সালাম করে টাকার জন্য দাঁড়িয়ে থাকতো। দুলাভাই বলতো, সালাম লাগবে না, সালাম ইজ নট রিকোয়ার্ড। এরপর টাকা দিয়ে বলতেন বেঁচে থাকো।
একবার ধানমন্ডিতে অন্য একটা নাটকের শুটিং চলাকালীন দু'টি অপরিচিত মেয়ে গাড়ি থেকে নেমে আবদুল কাদেরকে আচমকা পা ধরে সালাম করে বসে। আব্দুল কাদেরও স্বভাবসুলভ দুলাভাই চরিত্রে ফিরে গিয়ে হাসতে হাসতে বলেন, টাকা লাগবে?
৭# নানান জনপ্রিয় চরিত্রের পাশাপাশি মেয়ে চরিত্রেও অভিনয় করেছেন আবদুল কাদের। তবে সেটা টেলিভিশনে নয়। নারায়নগঞ্জের বন্দর হাইস্কুলে পড়ার সময় একবার মেয়েদের স্কুলের একটা নাটকে নায়িকার রোল করতে হয়েছিলো তাকে। তাও একেবারে শাড়ি পরে।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন