শীতকালে কুয়াশা হয় কেন?

২৫৮০ পঠিত ... ১৯:০৯, ডিসেম্বর ০৯, ২০২০

 

কুয়াশা সাধারণত আমরা শীতকালেই দেখি। অবস্থাদৃষ্টে মনে হতে পারে কুয়াশার সঙ্গে শীতের সম্পর্ক আছে। ব্যাপারটার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও সেদিকেই  ইঙ্গিত করে। 

প্রথমেই জেনে নিই, কুয়াশা কী?

কুয়াশা এবং মেঘ নিয়ে আমাদের অনেকের মনেই দ্বিধা আছে যে কোনটা কী? আসলে দুটোই এক। সহজে ছোট করে বললে মাটির কাছাকাছি যেটা থাকে, সেটা হচ্ছে কুয়াশা আর ভূমি থেকে বেশি উচ্চতায় যেটা থাকে, সেটা হচ্ছে মেঘ। এজন্যই কুয়াশাকে ‘লো ক্লাউড’ও বলা হয়। শীতের সময় পরিবেশের তাপমাত্রা কমে যায় এবং এর প্রভাবে কুয়াশার সৃষ্টি হয়।

শীতের সময় তামপাত্রা নিচে নেমে আসে এবং এর ফলে মাটিতে থাকা আদ্রতা উপরে উঠে গিয়ে কুয়াশা তৈরি করে। কুয়াশা তৈরির জন্য বাতাসের তাপমাত্রার পার্থক্য এবং আর্দ্রতা দায়ী। যেখানে তাপমাত্রার তারতম্য বেশি, সেখানে কুয়াশাও বেশি হয়। মাটির তুলনায় বাতাস উষ্ণ হলে এবং আদ্রতা বেশি থাকার কারণে যে কুয়াশা তৈরি হয়ে ভেসে বেড়ায়, সেটিকে বলে 'অ্যাডভেকশন ফগ'। এ ধরণের কুয়াশা অনেক সময় ভারত থেকে বাতাসের তোড়ে বাংলাদেশে চলে আসে। 

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মনোয়ার হোসেন বিবিসিকে দেওয়া এক স্বাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, 'কুয়াশা আইসের(বরফের) একটা অংশ। এটা আমাদের দেশে ছোট থাকে, অন্যান্য দেশে তাপমাত্রা অনেক কমে যায় বলে সেটা বড় আকার ধারণ করে ঝড়ে পড়ে, যাকে স্নো বলে। আমাদের দেশে তাপমাত্রা কিছুটা বেশি থাকে বলে স্নো হয় না, তবে মাঝে মাঝে বৃষ্টির মতো ছোট ছোট ফোটা হয়ে ঝড়ে পড়ে।'

বাংলাদেশ ও ভারতে প্রায়ই ঘন কুয়াশার খবর সংবাদমাধ্যমে বড় জায়গা দখল করে নেয়। এটি হওয়ার পেছনে শুধু কুয়াশাই একমাত্র দায়ী নয়। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুন ২০২০ সালের শুরুর দিকে বিবিসিকে এর ব্যাখ্যায় বলেছিলেন, জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হয়ে মেঘের মতো হয় কিন্তু নিচের মাটি ঠাণ্ডা থাকার কারণে এটি উপরে ওঠে না। এর সাথে যোগ হয় ধুলা এবং গাড়ির ধোঁয়া। ঢাকা দূষণের শহর হওয়ার কারণে এখানে ধুলা এবং ধোঁয়ার আধিক্য থাকে। যার কারণে কুয়াশাও ঘন হয়।

প্রতিবছর শীতকালে দিল্লিতে যে ভারী কুয়াশায় জনজীবন প্রায় অচল হয়ে যায়, এর কারণও এটি। অর্থাৎ, দূষণ বেশি হলে কুয়াশাও বেশি হবে। 

কুয়াশা বেশি হলে শীতও বেশি লাগে। ঘন কুয়াশার কারণে সূর্যের আলো ভূমি পর্যন্ত আসতে পারে না, ফলে এ সময়টায় শীত বেশি অনুভূত হয়। 

অধিক কুয়াশার প্রভাব পড়ে গাছপালারও উপরও, ফলশ্রুতিতে মানুষও ক্ষতিগ্রস্থ হয়। 

ঘন কুয়াশার কারণে গাছপালা যখন সূর্যের আলো থেকে বঞ্চিত হয়, তখন গাছ কম পুষ্টি পায় এবং গাছের খাদ্য কম পরিমাণে তৈরি হয়। এই কারনে ঘন কুয়াশায় রবি শস্যের উৎপাদন অনেকাংশে ব্যাহত হয়। একই কারণে গাছ থেকে উৎপাদিত অক্সিজেনের পরিমানও কমে যায়।  এর প্রভাব পড়ে বাস্তুতন্ত্রে। গাছের উপর নির্ভরশীল পোকামাকড় গাছ থেকে পর্যাপ্ত খাদ্য পায় না। আবার এই পোকামাকড়ের জন্য শস্যে পরাগায়নও কমে যায়। 

২৫৮০ পঠিত ... ১৯:০৯, ডিসেম্বর ০৯, ২০২০

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top