উত্তর পেতে হলে একটু পেছন ফিরে যেতে হবে। ১৭৯২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের টাকশাল (ইউএস মিন্ট) ‘মিন্ট এন্ড কয়েনেজ অ্যাক্ট’ পাশ করে। এই আইন অনুসারে ১০ ডলার, ৫ ডলার এবং ২.৫০ ডলার (যথাক্রমে- ঈগল, হাফ-ঈগল এবং কোয়ার্টার ঈগল নামেও পরিচিত ছিল) মূল্যমানের কয়েনে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সোনা ব্যবহার করতে হতো। এক ডলার, হাফ ডলার, কোয়ার্টার ডলার মূল্যমানের কয়েনে সিলভার ব্যবহার করার বাধ্যবাধকতা ছিল। ১৭৯৪ সালে মুদ্রিত প্রথম এক ডলারের কয়েনে ৮৯.২৫ শতাংশ ছিল সিলভার এবং ১০.৭৫ শতাংশ ছিল কপার। এক ডলারের সিলভার কয়েনে অন্তত এক ডলার সমমূল্যের সিলভার থাকতো।
কিন্তু খুব দ্রুতই একটা বড় সমস্যা সবার চোখে পড়ে। এই সমস্যা সমাধানের জন্যই ইউএস মিন্ট কয়েনের প্রান্ত বরাবর লম্বালম্বিভাবে খাঁজ দেওয়া শুরু করে। এই পদ্ধতিকে বলা হতো ‘রিডিং’ (Reeding). রিডিং পদ্ধতি চালু হওয়ার পর মূলত দুই দিক দিয়ে উপকার হলো। নকল কয়েন তৈরির পথ প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং কয়েন থেকে মূল্যবান ধাতব আলাদা করে বিক্রির পথও রুদ্ধ হয়ে যায়।
খাঁজ দিয়ে কীভাবে প্রতারণা ঠেকানো গেলো?
বেশি মূল্যমানের কয়েনগুলো স্বর্ণ দিয়ে তৈরি করা হতো। অপরাধীরা সহজেই এসব কয়েন থেকে স্বর্ণ আলাদা করে ফেলতো। যে উপায়ে এ কাজটি করা হতো, সেটির নাম ছিল ক্লিপিং। এটা অনেকটা কাঠ চাঁছার মতো। একজন দক্ষ ক্লিপারের পক্ষে কয়েন থেকে স্বর্ণ আলাদা করাটা কঠিন কোনো কাজ ছিল না। অনেক ক্লিপার এতই দক্ষ ছিল যে, তারা কয়েন থেকে স্বর্ণ এমনভাবে ট্রিম করতো, সাধারণ চোখে কয়েনের আকৃতি এবং ওজনের পরিবর্তন বোঝাই যেত না। এভাবে অসংখ্য কয়েন থেকে স্বর্ণ ট্রিম করে অপরাধীরা প্রচুর স্বর্ণ নিজেদের আয়ত্ত্বে নিয়ে নেয়। এরকম চলতে থাকলে সরকার উল্লেখযোগ্য পরিমাণ স্বর্ণের উপর থেকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলতো। কিন্তু রিডিং সিস্টেম এসব পথ চিরতরে বন্ধ করে দেয়। আগে কয়েনের প্রান্তগুলো মসৃণ থাকাতে কেউ যদি খুব সুণিপুণভাবে কয়েনকে ট্রিম করে ছোট করে ফেলতো, সেটি সহজে বোঝার উপায় ছিল না। কিন্তু খাঁজ থাকায় এটি খুব সহজেই বোঝা যায়। এভাবে কয়েনের মূল্যবান ধাবত অংশটি যেমন রক্ষা পেলো, একই সঙ্গে কয়েন জাল হওয়ার সম্ভাবনাও প্রায় শুন্যের কোটায় নেমে আসলো। যুক্তরাষ্ট্রের গ্রেট ডিপ্রেশনের সময় ইউএস মিন্ট স্বর্ণে তৈরি ডলার উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। ১৯৭০ সালের পর আর হাফ ডলারের কয়েনেও সিলভার ব্যবহার বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু সেই রিডিং সিস্টেম এখনো রয়ে গেছে!
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন