প্রথমেই বলে রাখা ভালো যে বাদুড় কোনো পাখি না, আবার কোনো কীটও না। বাদুড় হচ্ছে একমাত্র স্তন্যপায়ী প্রাণী, যেটি উড়তে পারে। স্তন্যপায়ী প্রাণীদের শরীরের গঠন উড়ার উপযোগী নয়। কিন্তু বাদুড় যেহেতু উড়তে পারে, তাই ধারণা করা যায় তার বিবর্তন এমনভাবে হয়েছে যাতে স্তন্যপায়ী প্রাণী হওয়া সত্বেও তার যে শারীরীক বাধা আছে, সেগুলা সে কাটিয়ে উঠতে পারে।
বাদুড়ের উড়া আর পাখি বা কীটপতঙ্গের উড়ার মধ্যে মৌলিক তফাৎ হচ্ছে শারীরীক ওজন। একটা প্রাণীর ডানা কতটা ভার বইতে পারে, তার উপর সংশ্লিষ্ট প্রাণীটির উড়া নির্ভর করে। পাখি বা অন্যান্য প্রাণী মোটামুটি দাঁড়ানো অবস্থা (মোশনলেস) থেকে সরাসরি উড়তে পারে।
কিন্তু বাদুড় সেটা পারে না। বাদুড়ের পায়ের গঠনও পরিপূর্ণ না। তাই এ প্রাণীটি দাঁড়াতেও পারে না। স্তন্যপায়ী প্রাণীদের শরীর সাধারণত ভারী হয়। বাদুড়ের ওজনও স্বাভাবিকভাবেই বেশি। ভূপৃষ্ঠ থেকে সেই ভারী শরীরকে ওড়ানোর সক্ষমতা বাদুড়ের ডানাগুলোর নেই। এজন্যই দেখবেন বাদুড়কে যদি মাটিতে ছেড়ে দেওয়া হয়, তাহলে সে শুধু ডানা ঝাপটাবে, কিন্তু উড়ে চলে যেতে পারবে না।
একবার যদি বাদুড়কে কোনো কিছুর উপর থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়, তাহলে সে খুব স্বাভাবিকভাকে বাকীটা উড়তে পারবে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে তার শুরুর এয়ারলিফটটা। যেহেতু সে নিজের পায়ে ভর দিয়ে মাটি থেকে উড়তে পারে না, তাই এর বিকল্প সুবিধা দিতেই তার বিশেষ কিছু বিবর্তন হয়েছে। তাদের মধ্যে এমন বৈশিষ্টের জন্ম নিয়েছে যাতে তারা ভূমির উপরে কিছু একটাতে ঝুলে থাকতে পারে, এবং যখন উড়ার প্রয়োজন হবে তখন সে এই ঝুলন্ত অবস্থা থেকে নিচের দিকে পড়বে। এই যে ঝুলন্ত অবস্থা থেকে জমিনের মাঝামাঝি যে সময়টুকু বাদুড় নিচের দিকে পড়তে থাকবে, এটাই তার জন্য এয়ারলিফট। এই কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই সে নিজেকে নিয়ন্ত্রনে স্বাভাবিক ওড়ার পর্যায়ে নিয়ে আসতে সক্ষম। এই উপায়ে বাদুড় পাখির চেয়েও আরও দ্রুত ফ্লাইট পায়।
এটা যে কেউ একটু খেয়াল করলেই দেখতে পারবেন যে উড়ার সময় বাদুড় প্রথমে সামান্য নিচের দিকে পড়ে এবং ঠিক পরপরই সে আবার স্বাভাবিকভাবে উড়তে শুরু করে।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন