মেয়েদের ব্যাপারে যে ১০টি প্রচলিত ভুল ধারণা দূর হওয়া খুবই প্রয়োজন

২৫২৪ পঠিত ... ১৯:৪৯, অক্টোবর ০৬, ২০২০

১৯৮৮ সালে ড. এলেন ফ্রান্সিস অনেক গবেষণা করে একটি বই লিখলেন। বইয়ের নাম 'Everything men know about women' বা 'ছেলেরা মেয়েদের সম্পর্কে যা জানে।' বইটির পৃষ্ঠা সংখ্যা ১২৮। তবে প্রতিটি পৃষ্ঠা উল্টে আপনি প্রচন্ড অবাক হবেন, কারণ পৃষ্ঠা নম্বর ছাড়া সম্পূর্ণ পৃষ্ঠাই একদম সাদা। অর্থাৎ বুঝতেই পারছেন, ছেলেরা মেয়েদেরকে নিয়ে ঠিক এতটুকুই জানে!

যুগে যুগে আমরা 'নারী'কেন্দ্রিক দুর্বোধ্যতা নিয়ে অনেক গল্প কাহিনী পড়েছি। তবে নারীদের তথা মেয়েদের নিয়ে সমাজে বেশ কিছু ভুল ধারণা একেবারে 'স্ট্যাবলিশড' হয়ে আছে, যেগুলোর কারণে গড়ে উঠেছে কিছু 'জেন্ডার স্টেরিওটাইপ'। চলুন আজ সেসব ভুল ধারণা দূর করার একটা চেষ্টা করা যাক।


১# মেয়েদের 'হ্যাঁ' মানে না এবং 'না' মানে হ্যাঁ...

অনেকেই ভেবে থাকেন, মেয়েরা তাদের মনের আসল কথা প্রকাশ করেন না। তারা সর্বদা বিপরীতার্থক শব্দ ব্যবহার করে এবং চায়, অন্য কেউ তাকে বুঝে নিক৷ এ ধারণাটি মূলত পুশ করেছেন কবি, সাহিত্যিক, নাট্যকারেরা তাঁদের বিভিন্ন চরিত্র রূপায়নের মাধ্যমে। কিন্তু এ ধারণাটি পুরোপুরি ভুল। মেয়েরা তাদের স্পষ্ট মতামত প্রদানে সক্ষম। ছেলে-মেয়ে সবারই হ্যাঁ মানে হ্যাঁ এবং মোস্ট ইম্পরটেন্টলি, না মানে না!


২# সোশ্যাল মিডিয়ায় মেয়েরা ইচ্ছা করে লেট রিপ্লাই দেয়

বেশিরভাগ পুরুষই মনে করেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মেয়েদের দ্রুত রিপ্লাই না দেওয়ার আসলে ইচ্ছাকৃত। নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে উপস্থাপনের জন্য তারা এমন করে বলে ভাবেন অনেকে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, এই ভুল ধারণা পোষণকারী কোনো পুরুষকে কোনো মেয়ে যদি খুব দ্রুত রিপ্লাই দেয়, তিনি ভেবেই বসেন মেয়েটি তার দিকে বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করছে।

 

৩# ছেলে বন্ধুদের সাথে ঘুরলেই মেয়েটার চরিত্র খারাপ

আমাদের দেশের অনেক মানুষ এখনো ভেবে থাকেন, ছেলে বন্ধু থাকলেই মেয়ের চরিত্র সমস্যা আছে। বন্ধুত্ব কখনও নারী-পুরুষ বা লিঙ্গগত পরিচয়ের মাঝে আটকে থাকে না, তা অনেকেই হয়তো জানেন না। এই ভুল ধারণা দূর করতে দরকার শিক্ষা এবং ইতিবাচক মানসিকতা। এ ধরনের চিন্তা নিচু মনেই শুধুই সম্ভব।

 

৪# পড়াশোনা ও ক্যারিয়ারে এগিয়ে যেতে মেয়েরা সৌন্দর্য ব্যবহার করে

অনেক মানুষ ভেবে থাকেন, মেয়েরা তাঁদের কর্মক্ষেত্রে নিজ যোগ্যতায় উন্নতি করতে অপারগ। পুরুষের সাহায্য ছাড়া দু'কদম হাঁটলেই যেন হোঁচট খাবে (অথচ সমাজ সিস্টেমের নিয়ন্ত্রণ পুরুষের হাতেই রেখে দিয়েছে)। ইনিয়ে বিনিয়ে তারা দাবি করেন মেয়েরা যোগ্যতা নয় বরং নারীত্ব আর সৌন্দর্যকে ভাঙিয়েই উন্নতির শিখরে উঠেছেন। বলতে বাধ্য হচ্ছি, আপনি যদি এই যুগেও যদি আপনি এভাবে ভেবে থাকেন, তবে অবশ্যই আপনি ইনফেরিওরিটি কমপ্লেক্সে ভুগছেন।

 

৫# মেয়েদের বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না

নারী সর্বংসহা। যত কষ্টই হোক না কেনো তাঁরা সেটা সহ্য করেই চলবেন কোনোরকম প্রতিবাদ ছাড়া —এই ধারণা এখনো অনেকের মস্তিষ্কে ঘুরপাক খায়। প্রথমত, মুখ খোলার অধিকার না দেয়াকে 'মুখ ফোটে না' বলা যায় না। সময় ও শিক্ষার সাথে সাথে নিজেদের অবস্থানে দৃঢ় হচ্ছেন নারীরা। মুখ ফুটে বলতে পারছেন তাঁর সমস্যা, অসুবিধা ও কষ্টের কথা, করতে পারছেন প্রতিবাদ।

 

৬# মেয়েরা সাজে ছেলেদেরকে দেখানোর জন্য

বেশিরভাগ পুরুষই ভেবে থাকেন, নারীর প্রসাধনীর উদ্ভাবন হয়েছে পুরুষের মনোরঞ্জনের জন্য যা, যা অত্যন্ত ভুল একটি ধারণা। পৃথিবী থেকে যদি সকল পুরুষ হঠাৎ উধাও হয়ে যায়, তবুও নারীরা নিজেদের শোভা বর্ধনে ব্যস্ত থাকবেন।


৭# দামি উপহার দিয়ে ছোট কাগজে স্যরি লিখলেই নারীরা মাফ করে দেয়

কিছুদিন আগে ফেসবুকের ট্রেন্ড ছিলো, মেয়েদেরকে কিভাবে স্যরি বললে তারা মূহুর্তেই বিগলিত হয়ে ব্যক্তির দোষ ভুলে যান। সেখানে বিভিন্নজন শাড়ি, টিপ, লিপস্টিক থেকে শুরু করে জন্মনিরোধক বড়ির উপর ছোটো কাগজে স্যরি লেখার কথা বলেছেন। তা দেখে আবার অনেকেই নারীদেরকে বস্তুবাদী হিসেবে ধরে নিয়েছেন৷ ধারণাটি একেবারেই ভুল। পরস্পরের মধ্যে সমঝোতা, নিজের ভুল স্বীকার করে নেওয়ার মানসিকতা, একটু বাড়তি ভালোবাসা, আহ্লাদ এবং সময় দ্বারাই আপনি অপরাধ থেকে মুক্তি পাবেন। একে বস্তুর সাথে মিলিয়ে ফেলবেন না।

 

৮# মেয়েদের শাড়ি, গহনাপাতি ও সাজগোজের প্রতি আগ্রহ থাকবেই

বেশিরভাগ পুরুষই ভাবেন যে সব মেয়েরই প্রথম আগ্রহ শাড়ি, গহনা ও সাজগোজ। এবং সব মেয়েই এইসব নিয়েই থাকতে ভালোবাসেন। কিন্তু এটি সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। অনেক মেয়ে আছে যাদের প্রধান আগ্রহের বিষয় সাহিত্য, রাজনীতি, সিনেমা, বই, ইতিহাস ইত্যাদি। এমন অনেক মেয়ে আছে, যারা সাজতে একেবারেই পছন্দ করে না, শাড়ি পরতে ভালোবাসে না, গয়নাগাটি তো সহ্যই করতে পারে না। সুতরাং এইসব জেনারালাইজেশন থেকে দূরে থাকবেন প্লিজ।


৯# মেয়েরা খোলামেলা পোশাক পরেছে মানেই যৌন সম্পর্কে আগ্রহী

বেশির ভাগ পুরুষই সংক্ষিপ্ত কিংবা ওয়েস্টার্ন পোশাক পরিহিত মেয়েদের ভোগপণ্যের চোখে দেখেন। গবেষণা বলে, শুধুমাত্র ওয়েস্টার্ন পোশাক পরিধানের জন্যই অনেক নারী কুপ্রস্তাবের সম্মুখীন হয়েছেন। এখানে বোঝার বিষয় হলো, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে পৃথিবীর সব মানুষই (এসেক্সুয়ালরা বাদে) যৌন সম্পর্কে আগ্রহী। খোলামেলা পোশাক যে পরে সেও আগ্রহী, যে অনেক কাপড়চোপড় পরে সেও। কিন্তু সে আপনার সঙ্গে যৌন সম্পর্কে আগ্রহী, তাকে দেখেই সেটা ধরে নেয়ার কোনো কারণ নাই। আপনার ব্যাপারে আগ্রহী হলে সে আপনাকে নিজে গিয়েই বলবে, সংক্ষিপ্ত পোশাক পরে ইঙ্গিত দিতে যাবে কেন?


১০# মেয়েদের বিয়ে করতেই হবে

অনেক পুরুষই মনে করেন, মেয়েরা বিয়ের জন্য মুখিয়ে থাকে। সব মেয়ের কাছেই বিয়েই জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য। এমনটা কিন্তু সবার জন্য নয়। বরং এখনকার মেয়েরা নিজেদের শিক্ষা এবং ক্যারিয়ারের ব্যাপারে ভীষণ সচেতন৷ বিয়ে জীবনের একটা অংশ মাত্র, তা আবার জীবনের উদ্দেশ্য হয় কেমনে?

২৫২৪ পঠিত ... ১৯:৪৯, অক্টোবর ০৬, ২০২০

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top