ব্যক্তি ফ্রয়েডের কয়েকটি অজানা দিক

২৬০০ পঠিত ... ২১:৪১, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২০

সিগমুন্ড ফ্রয়েডের পরিচয় হলো অস্ট্রিয় মানসিক রোগ চিকিৎসক এবং মনস্তাত্ত্বিক। তবে, জনসাধারণের কাছে তাঁর পরিচিতি মনোসমীক্ষণ নামের মনোচিকিৎসা পদ্ধতির উদ্ভাবক হিসেবে। ফ্রয়েডের বিভিন্ন তত্ত্ব সাহিত্য, চলচ্চিত্র, মার্ক্সবাদী আর নারীবাদী তত্ত্বের ক্ষেত্রেও গভীর প্রভাব বিস্তার করে।

আমাদের এই পরিচিত ফ্রয়েডেরই ‘একটু ভিন্ন’ কিছু দিক তুলে ধরা হলো eআরকির পাঠকদের জন্য।

 

১# ১ লক্ষ ডলারের অফার ফিরিয়ে দিয়েছিলেন ফ্রয়েড 

অস্কারজয়ী স্যামুয়েল গোল্ডউইন হলিউডের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য প্রডিউসারদের একজন। গোল্ডউইন ফ্রয়েডকে বলতেন, পৃথিবীর সেরা প্রেম-বিশেষজ্ঞ। 

ফিল্মের একটা স্ক্রিপ্ট করার জন্যে, তা-ও না পারলে, অন্তত সুপারভাইজ করার জন্যে গোল্ডউইন ফ্রয়েডকে ১৯৩৭ সালে  ১ লাখ ডলার অফার করেছিলেন।    

ফ্রয়েড মনে করতেন, হলিউড প্রেম বিষয়ে মানুষের মনে মিথ আর ফ্যান্টাসি ঢুকায় দিতেছে কেবল। তাছাড়া তখন তিনি ঘণ্টায় ২০ ডলার নিতেছেন।  তিনি বলেন, আমি মিথ আর ফ্যান্টাসির রহস্য উৎঘাটন করতে ভালোবাসি, সৃষ্টি করতে না। গোল্ডউইন আরেকবার অনুরোধ করতে গেলে, ফ্রয়েড বিনা বাক্যে প্রস্তাব নাকচ করে দেন।   

তার বছর খানেক আগে শিকাগো ট্রিবিউনের প্রকাশক ফ্রয়েডকে ২৫০০০ ডলার অফার করছিলো,  ওইসময়ের আলোড়নসৃষ্টিকারী কুখ্যাত অপরাধী লেওপল্ড ও লোয়েবের সাইকোএনালিসিস করার জন্য। সেই অফারও ফিরায়ে দিছিলেন ফ্রয়েড। 

ইন্ট্রেস্টিং বিষয় হইতেছে, কাছাকাছি সময়ের তার ডায়েরিতে দেখা, উনি ফিকশন লেখার কথা ভাবছিলেন, তাও প্রেম নিয়ে!   

এই যুগে জন্মাইলে ফ্রয়েড নিশ্চয়ই রাজি হইতেন। স্ক্রিপ্টটা বই-আকারে ছাপাইতেনও হয়তো। টিভিতে বা চ্যানেলে গিয়ে প্রচারণায় হয়তো বলতেন, এইটা একমাত্র ‘মনোবৈজ্ঞানিক রোম্যান্টিক সিনেমা’! 

২# মুখে ৩৩ বার সার্জারির সত্ত্বেও কখনও ধূমপান ছাড়েন নাই ফ্রয়েড  

তুখোড় ধূমপায়ী ছিলেন ফ্রয়েড। তরুন বয়সে প্রথম সিগারেট খাওয়ার পরেই  সিগারেটের নেশায় পড়ে গেছেন ফ্রয়েড।

দিনে কমপক্ষে ২০টা সিগারেট খাইতেন ফ্রয়েড। আরও বেশি থাকতো সংখ্যাটা। 

ডাক্তারের ক্রমাগত নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও, ফ্রয়েড প্রচুর ধূমপান করতেন। ফ্রয়েডের বিশ্বাস ছিলো ধূমপান উৎপাদনশীলতা আর সৃজনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে। ১৯২৩ সালের তার মুখে ক্যান্সার ধরা পড়ে। এরপরের ১৬ বছরে যদিও ৩৩ বার ক্যান্সার সার্জারির মধ্যে দিয়ে যেতে হইছে, ফ্রয়েড সিগারেট কখনও ছাড়েন নাই। 

৩# সিগারেট খাওয়াটাকে যেভাবে দেখতেন ফ্রয়েড 

সিগারেট খাওয়াকে প্রায়ই একটা সিম্বলিক কাজ হিসাবে ধরা হয়। অনেক মনোবিশ্লেষক মনে করেছেন সিগারেট জিনিসটা ফ্যালিক সিম্বল।  

ফ্রয়েডের আবার যেকোনো কর্মকান্ডকে যৌনতার দিকে টেনে ব্যাখ্যা করার প্রবণতা ছিলো। ফ্রয়েড নিজে সিগারেট খেতেন প্রচুর। ছিলেন যাকে বলে তুখোড় ধূমপায়ী। 

কৌতূহলী (এবং সম্ভবত রসিক) এক ছাত্র  ফ্রয়েডের কাছে জানতে চাইলো এই সিগারেট খাওয়াটার কোনো প্রতীকী মূল্য আছে কিনা। 

একটু সময় নিয়ে ধোয়া ছাড়লেন ফ্রয়েড। তারপর বললেন, 'মাঝেমধ্যে একটা সিগারেট সিগারেটই শুধু। এর বেশি কিছু না।'

৪ # নোবেল পুরষ্কারের জন্যে ১৩ বার নমিনেটেড হয়েছিলেন ফ্রয়েড 

১৯১৫ থেকে ১৯৩৮ সালের মধ্যে চিকিৎসাশাস্ত্রে ১২ বার এবং সাহিত্যে ১বার নোবেল পুরষ্কারের নমিনেশন পান ফ্রয়েড। তবে একবারও তাকে পুরষ্কারটা দেয়া হয় নাই। ফ্রয়েডের সমালোচকদের অভিযোগ ছিলো সাইকোএনালিসিস কোনো পরীক্ষিত জ্ঞানক্ষেত্র না। একবার আইনস্টাইনকে অনুরোধ করা হলো ফ্রয়েডকে এন্ডোর্স করতে। আইনস্টাইন মাফ চাই দোয়াও চাই ভঙ্গিতে অপারগতা জানান। আইনস্টাইন মনে করতেন ফ্রয়েডের সায়েন্টিফিক সিদ্ধান্তসমূহ অনিশ্চিত ও কনফিউজিং৷ 

৫# জোক ও হাস্যরস বিষয়ে ফ্রয়েড 

বেশিরভাগ দার্শনিক বা চিন্তাবিদ হাসি-তামাশা ইত্যাদি বিষয়ে মনোযোগ দেন নাই। অন্তত বিশদে ভাবার যোগ্যই মনে করে নাই। ফ্রয়েড সেইসব চিন্তাবিদদের একজন যিনি হিউমার বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করেছেন এবং এই করাটাকে দরকারীও ভেবেছেন। ১৯০৫ সালে হিউমার বিষয়ে তার বই  'জোকস এন্ড দেয়ার রিলেশন টু দি আনকনশাস' প্রকাশ করেন, যা এখনও হিউমার স্টাডিজের সবচে গুরুত্বপূর্ণ টেক্সটগুলার একটা হিসাবে স্বীকৃত।  

৬# কাঁচা মাংসভোজী ফ্রয়েড! 

মনোবিশ্লেষক ও দার্শনিক সিগমুন্ড ফ্রয়েডের প্রতিদিনের খাওয়ার রুটিন মোটামুটি নির্দিষ্ট ছিলো।  ফ্রয়েডের দীর্ঘদিনের রাঁধুনি পলা ফিক্ট তার ডায়েরিতে লিখেছন, সকালের ফ্রয়েডের পছন্দের খাবার ছিলো স্টেক টার্টারে আর সফট-বয়েলড ডিম। স্টেক টার্টারে গরুর কাঁচা মাংসের কিমা দিয়ে তৈরি এক ধরনের খাবার। ফ্রয়েডের স্টেক টার্টারের মাংস শুধু কাঁচা থাকতো তা-ই না, বরং বেশিরভাগ সময় থাকতো রক্তমাখা।

অবশ্য স্টেক টার্টারে বা সফট -বয়েলড ডিম ধরনের খাবার পছন্দের ব্যাপারে ফ্রয়েডের গলার ক্যান্সারও একটা কারণ হইতে পারে। শেষদিনে গলার ক্যান্সারের কারণে তার পক্ষে চিবায়ে খাওয়া সম্ভব ছিলো না।   

৭# ফ্রয়েডের মৃত্যু খুব সম্ভব চিকিৎসকের সহায়তায় আত্মহত্যা 

১৯৩৯ সালের গ্রীষ্মকাল। ফ্রয়েড খুব অসুস্থ।  মুখের ক্যান্সারে দীর্ঘদিন ধরে আক্রান্ত ফ্রয়েড অসহনীয় শারীরিক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যাইতেছেন।  ১৯৩৯ সালের ২১ সেপ্টেম্বর, যন্ত্রণাকাতর ফ্রয়েড তার বন্ধু ও চিকিৎসক ম্যাক্স শুরের হাত ধরে অনুরোধ করেন,'অহেতুক আর বেশি কষ্ট দিও না। এখন আর যন্ত্রণা ছাড়া কিছু নাই, অর্থহীন লাগে।' 

ফ্রয়েডের মেয়ে আনার অনুমুতি পেয়ে, শুর তিনটা হেভিডোজ মরফিনের ইনজেকশন দেন ফ্রয়েডরে। ফ্রয়েড গভীর ঘুমে (কোমা) চলে যান, যেই ঘুম আর ভাঙে নাই। 

 

২৬০০ পঠিত ... ২১:৪১, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২০

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top