তাঁর চলচ্চিত্রের ব্যাকরণ গত এবং তাত্ত্বিক আলোচনার সময় আছে বা লোকে ভবিষ্যৎ-এ করবে। কিন্তু তাঁর বেড়ে ওঠা, আশ্চর্য হওয়া, নিঃসঙ্গতা, পারিবারিক পিছুটান, অনেক কিছুর সন্ধান পাওয়া, বিশ্লেষণ করা, সংশ্লেষণের পথে আসা, সংগঠিতভাবে কিছু করা বা করানো ইত্যাদি নানা বিষয়ে বিভিন্ন সময় স্মৃতিচারণ করেছেন ঋতুপর্ণ ঘোষ, তা হোক লিখিত আকারে বা সাক্ষাৎকারে। নামী চিত্রনির্মাতার অজানা একান্ত ব্যক্তিগত কিছু দিক রইলো এই লেখায়, ঋতুপর্ণ ঘোষের নিজেরই বর্ণনায়।
স্বর্ণালি শৈশব
ছোটবেলায় পাখিকে ঋতুপর্ণ বলতেন 'কাপি'।
১. প্রথম পাখি দেখতে শিখি বাড়িতে। বাড়ির শোবার ঘরে লাল রঙের একটা বেড কভার ছিল। সেখানে একটা পাখির ছবি ছিল। পাখি বলতে পারতাম না – বলতাম ‘কাপি’।
২. 'আলো আমার আলো ও গো’-গান শিখিয়েছিল মাসিমনি চান করার সময় তেল মাখাতে মাখাতে।
৩. বাড়ির কাজের লোক পঞ্চু দিদিকে আমরা পঞ্চু পিশি বলতাম। জেনেছিলাম বৃহস্পতিবারকে ‘বিষ্যুদবার’ বলা যেতে পারে।
মা-বাবাকে নিয়ে
১. মা চলে গিয়ে দুটি জিনিস শিখিয়ে দিয়ে গেল। মায়েরা আসলে অমর। আর মা ছাড়া বাবারা বড্ড অসহায়।
২. বাবা শিখিয়েছিলেন কি করে যাদুঘর দেখতে হয়। দক্ষিণ ভারতের মন্দিরের সঙ্গে আমাদের উত্তর পূর্ব-পশ্চিম দিকের মন্দিরের কি তফাৎ। ইংরেজী হরফ যে আসলে রোমান হরফ বাবাই বলেছিল।
৩. প্রথম ‘ঝর্ণা কলম’, ‘ফাউন্টেন পেন’-এ লিখতে শিখিয়েছিলেন বাবা।
রবীন্দ্রনাথ বিষয়ক
১. রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে আমার পরিচয় মা-এর মাধ্যমে- ‘সঞ্চয়িতা’ থেকে মা কবিতা পড়তেন। আমাকে ঘুম পাড়ানোর সময়।
২. বাংলা ভাষা নিয়ে অহংকার করা যে বিরাট কোন দোষের কাজ নয়- শিখিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ, সুকুমার রায়, শিবরাম, মুজতবা আলী।
৩. রবীন্দ্রনাথ যখন পড়ি, তখন মনে হয় গোটা বাংলা ভাষাটাই তার রাজধানী। কেবল তার সিংহাসনটা খুঁজে পাইনা, সে কি কবিতায়, না প্রবন্ধে,না চিঠিতে, না গল্পে, কে জানে!
ঠাকুরমার ঝুলি!
১. ঠাকুমার কাছে জেনেছিলাম কাঁচালঙ্কার রং সবুজ আর শুকনো লঙ্কার রং লাল। তেতোর পর জল খেলে মিষ্টি লাগে। গরমকালে মাটির কুঁজোর জল ঠান্ডা আর শীতকালে লাগে কাঁথা। ঠাকুমারা শিশুদের এনসাইক্লোপিডিয়া।
২. রোজ সন্ধ্যাবেলায় স্কুলের হোমওয়ার্ক সেরে বাবার কাছে শুনতাম শেখর বসুর ‘মহাভারত’। আমি আর ঠাকুমা।
বিবিধ বিষয়
লেখার মধ্যেও ঋতুপর্ণের রসিক মনের ইশারা মাঝেমধ্যেই পাওয়া যেত। কিছু নমুনা:
১. অনেক শীবের গীত হলো, ধান ভানতে আসি...কী বলছিলাম যেন?
২. 'কি করে বাচ্চা হয় প্রথম কে বলেছিল ভুলে গেছি!'
সত্যজিৎ রায়কে নিয়ে
১. সত্যজিৎ প্রথম শিখিয়েছেন ক্যামেরা দিয়ে গল্প বলা যায়। সিনেমা কবিতা বলা যায় তাও শিখেছি সত্যজিৎ রায় এর কাছে।
২. কথা হচ্ছে, এত কিছু শিখেও এমন আস্ত অপোগন্ড হলাম কী করে?
রোমিলা থাপাড় ছিলেন ঋতুপর্ণের পছন্দের একজন ইতিহাসবিদ। লিখেছেন:
রোমিলা থাপারের ইতিহাস বইয়ের নিষ্ঠুর সম্পাদনা যে কোনও দেবীর বস্ত্রহরণের থেকে কম ভয়ঙ্কর নয়, এ নিয়ে সংশয়ে কোনো দিন কেউ কোনো কথা বলেছেন?
ভাষা ও শব্দ নিয়ে পর্যবেক্ষণ
ভিড় কথাটার মানে 'জনগোষ্ঠী'। আমরা কেবল অসহিষ্ণুতা দিয়ে শব্দটার মানে পাল্টে করলাম অপাংক্তেয় মানুষ।
[তথ্যসূত্র: ঋতুপর্ণ ঘোষের বই 'ফার্স্ট পার্সন' ও ইন্টারনেট]
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন