ক্রিকেটে একজন অধিনায়ক হিসেবে যা যা অর্জন করা সম্ভব, তার প্রায় সবটাই করে দেখিয়েছেন তিনি। আগেই টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছিলেন, এবার সকল ধরনের ক্রিকেট থেকেই বিদায়ের ঘোষণা দিলেন ‘ক্যাপ্টেন কুল’ মহেন্দ্র সিং ধোনি। গত সেপ্টেম্বরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলা বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল ম্যাচই হয়ে রইলো ধোনির আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ।
পশ্চিমবঙ্গের খড়গপুর রেলওয়ে স্টেশনের একজন টিটিইর জীবন যে এমন বর্ণাঢ্য হবে, এত সাফল্যের মণিমুক্তা খচিত হবে, তা কি ধোনি নিজেও ভেবেছিলেন আজ থেকে ২০ বছর আগে? প্রয়াত সুশান্ত সিং অভিনীত বলিউডের ‘এমএস ধোনি: দ্য আনটোল্ড স্টোরি’র সৌজন্যে ধোনির জীবনের গল্পটা অবশ্য একদম অজানা নয়।
ক্রিকেটীয় জীবনের বাইরেও তার জীবনে এসেছে নানা মোড়। এবার চলুন তার জীবনের এমনই চমকে যাওয়ার মত কিছু ব্যাপার জেনে নেয়া যাক।
রেলওয়ের টিকিট পরীক্ষক ধোনি
ফোর্বসের হিসেবে ক্রিকেট বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ক্রিকেটারদের একজন হলেন ধোনি। তবে, একটা সময় ধোনি কিন্তু ছিলেন স্রেফ ভারতীয় রেলওয়ের টিকেট পরীক্ষক। রঞ্জি ট্রফিতে খেলার সুবাদে খড়গপুরে ট্রেনের টিকেট পরীক্ষক পদে চাকরি পেয়েছিলেন ধোনি। সেটা ২০০১ সালের কথা।
ভূত সেজে ভয় দেখাতেন!
টিকেট পরীক্ষক থাকাকালে ধোনি থাকতেন রেলওয়ে কোয়ার্টারে। চাকরির পাশাপাশি বন্ধুদের সাথে মজা করে সময় কাটতো তার। প্রায়ই তারা একটা খেলা খেলতেন। সেটা হলো ভুত সেজে মানুষকে ভয় দেখানো। রেলওয়ে কোয়ার্টার কমপ্লেক্সেও নিজের এই গুণের পরিচয় দেখান ধোনি। গায়ে একটা বিছানার সাদা চাদর জড়িয়ে বের হয়ে পড়তেন। ভূত সেজে ভয় দেখাতেন কোয়ার্টারের দায়িত্বে থাকা গার্ডদের। এমনকি তখন এই খবরটা বিভিন্ন ভারতীয় গণমাধ্যমে ফলাও করে ছাপা হয়েছিল।
ফুটবলার ও ব্যাডমিন্টন প্লেয়ার ধোনি শেষমেশ হলেন ক্রিকেটার
আপনি জানলে অবাক হতে পারেন যে একটা সময় ব্যাডমিন্টন ও ফুটবলেই মগ্ন ছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের এই অধিনায়ক! খেলোয়াড়ি জীবনের শুরুর দিকে জেলা পর্যায়েও বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে এ খেলাগুলোই খেলেছেন নিয়মিত। ফুটবল দলে তাঁর ভূমিকা ছিল গোলরক্ষক হিসেবে। ক্রিকেটে আসার ঘটনাটাও চমকপ্রদ।
তাঁর ফুটবল কোচই পাঠিয়েছিলেন স্থানীয় একটি ক্রিকেট দলের ‘খ্যাপ’ খেলতে। ক্রিকেটের প্রতি গভীর টান সৃষ্টি হয় রাঁচির কমান্ডো ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে (১৯৯৫-৯৮) খেলার সময়। দারুণ পারফরম্যান্সের পর ১৯৯৭/৯৮ মৌসুমে সুযোগ পেলেন ভিনু মানকড় ট্রফির অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপ খেলার। এরপর জাতীয় দলে সুযোগ পেতে লেগে গেল আরও সাত বছর। সমসাময়িক অন্য সতীর্থদের তুলনায় একটু দেরিতে অভিষেক হয়েছিল বলেই কি না, ১৫ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারটা সাজালেন অর্জনের পর অর্জনে।
ঝাঁকড়া চুলের পটভূমি
ক্যারিয়ারের শুরুতে তার মাথায় ছিল ঝাঁকড়া চুল। তার ঝাঁকড়া চুলের পেছনের গল্পটা কি আপনার জানা আছে?
বলিউড তারকা জন আব্রাহামের খুব বড় ভক্ত ধোনি। তাকে দেখেই বড় চুল রেখেছিলেন। আর জন চুল ছাঁটার পর ধোনিও নিজের চুল ছোট করে ফেলেন।
একজন সৌখিনদার লোক!
শুধু চুলের দিক থেকেই না, অন্য সব দিক থেকেও দারুণ সৌখিন ধোনি। আর তার সবচেয়ে পছন্দের কাজ হল বাইক চালানো। এবং মোটর সাইকেল সংগ্রহ তার একটি নেশা। ২০১৪ সালে ধোনি দামী এক্স১৩২ হেলক্যাট কিনলে মিডিয়ায় হৈচৈ পড়ে যায়। এই মোটর সাইকেলটি অনেক সেলেব্রিটিই পরবর্তীতে কেনে। জানা গেছে, ধোনির গ্যারেজে আছে ২৩টিরও বেশি মোটর সাইকেল!
ধোনির বিখ্যাত হেলিকপ্টার শটের কাহিনী
হেলিকপ্টার শটকে মোটামুটি নিজের ট্রেডমার্ক বানিয়ে ফেলেছেন মাহেন্দ্র সিং ধোনি। আপনি কি জানেন এই শট ধোনি কোথায় শিখেছেন?
হেলিকপ্টার শট শট ধোনিকে শিখিয়েছেন তার বন্ধু, ঝাড়খন্ডের সাবেক ক্রিকেটর সন্তোষ লাল৷ দুঃখের ব্যাপার, লাল মাত্র ৩২ বছর বয়সে ২০১৩ সালে মারা যান। ধোনি দিল্লীতে বন্ধুর চিকিৎসার সমস্ত ব্যয় বহন করেছিলেন, কিন্তু বন্ধুকে বাঁচাতে পারেন নি।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন