'সাইকো' নির্মাতা আলফ্রেড হিচককের জীবনের অদ্ভুত সব ঘটনা

১১০৭ পঠিত ... ২২:২৬, আগস্ট ১২, ২০২০

সাইকো-তে বিখ্যাত সেই শাওয়ার সিন। নর্থ বাই নর্থওয়েস্ট-এর  বাইপ্লেন চেজ দৃশ্য। বার্ডস-এর অতিআলোচিত গ্যাস স্টেশন আক্রমণের দৃশ্য। সিনেমার ইতিহাসের সবচেয়ে স্মরণীয় ও আতঙ্কজাগানিয়া কিছু দৃশ্য। 

সবগুলো একজন ব্যক্তির মস্তিষ্ক প্রসূত। তিনি আলফ্রেড হিচকক। মাস্টার অফ সাস্পেন্স। ডাকনাম তার 'হিচ'। হলিউডের ইতিহাসের আইকনিক এক নির্মাতা। ফিল্মের মতো তার জীবনও ছিলো নানা ধরণের নাটকীয়তায় ভরা। কিংবদন্তী এই নির্মাতার জীবনের তেমন কিছু ঘটনা জানা যাক। 

 

এনসাইক্লোপিডিয়া রচয়িতা হিচকক! 

ফিল্ম মিডিয়ামে কাজ করে বিখ্যাত হিচকক। তবে অনেকের জানা নেই যে এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার একটা ভুক্তির রচয়িতাও কিন্তু হিচকক। এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার চতুর্দশ সংস্করণের 'মোশন পিকচার, ফিল্ম প্রোডাকশন' নামের এন্ট্রিটা তিনি লিখেছেন৷ তার স্বভাবসুলভ প্রথাবিরোধী নিজের মতো করেই লিখেছেন ফিল্ম-মেকিংয়ের নানা বিষয়ে। 

যেমন, এক জায়গায় শট নেয়ার সময় ক্যামেরা নড়াচড়ার ব্যাপারে লিখেছেন, 'ধরেই নেয়া হয়, যে মোশন পিকচারের ক্ষেত্রে, ক্যামেরা সবসময় উপরে উঠতে পারে বা রুমের বাইরে যেতে পারে, যেমন ধরুন, কোনো ট্যাক্সি আসছে এমনটা দেখাতে।  এটি সবসময়ই খুব কাজের এমন নয়, সহজেই একঘেয়ে করে ফেলতে পারে।' 

 

সাইকো বানিয়েছেন নিজস্ব অর্থায়নে 

প্যারামাউন্ট পিকচার্সের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ছিলেন হিচকক।  প্যারামাউন্ট সাইকোর স্ক্রিপ্ট দেখে ছবিতে অর্থায়নে অস্বীকৃতি জানায়। তাদের মতে, এটি অশ্লীল সিনেমা। বাধ্য হয়ে নিজস্ব অর্থায়নের ছবি নির্মাণ করেন। প্যারামাউন্ট পিকচারে তার বেতনের পুরোটাই ফিল্মের কপিরাইটের বিনিময়ে বিক্রি করে দেন। প্যারামাউন্ট তার ছবিটা ডিস্ট্রিবিউট করতে রাজি হয়। 

খরচ কমাতে, হিচকক তার টিভি শো 'আলফ্রেড হিচকক প্রেজেন্টস টিভি'র ক্রুদের নিয়েই মুভিটা ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট ফিল্মে করেন। অবশ্য হিচককের জুয়াটা লেগে গিয়েছিলো। সাইকো থেকে ব্যক্তিগতভাবে হিচকক আয় করেছিলেন ৬ মিলিয়ন ডলার- যা এখনকার হিসেবে প্রায় ৫০ মিলিয়ন। 

 

হিচককের ফোবিয়া!

টানটান উত্তেজক ও শিড়দাড়ায় হিমস্রোত বইয়ে দেয়া সব দৃশ্য উপহার দিয়েছেন দর্শকদের এই মাস্টার অফ হরর এন্ড সাসপেন্স। অথচ তিনি নিজেই ছিলেন নানা ধরনের ফোবিয়ায় আক্রান্ত। 

প্রথমত, সারাজীবন তার এক নম্বর ভীতি ছিলো পুলিশ৷ 

কয়েকজন জীবনীকারের মতে, ছোটবেলায় হিচককের বাবা তাকে একটা চিঠি ধরিয়ে দিয়ে পুলিশ স্টেশনে পাঠিয়ে ছিলেন৷ চিঠিতে পুলিশ অফিসারের কাছে লেখা হয়েছিলো: আমার ছেলেকে কিছুক্ষণের জন্যে থানায় আটকে রেখে শাস্তি দিন। 

 

হিচককের সবচেয়ে অদ্ভুত ফোবিয়া! 

পুলিশ ভীতির ব্যাপারটা অতটা অস্বাভাবিক কিছু না মনে হতে পারে। কিন্তু হিচককের সবচেয়ে অদ্ভুত ফোবিয়া কী ছিলো জানেন? 

ডিমভীতি! 

হ্যাঁ, আপনি ঠিকই পড়েছেন! 

একটি ইন্টারভিউতে তার এই এগ-ফোবিয়া নিয়ে বলেছেন: 'আমি ডিম ভয় পাই, ভয়ের চেয়েও খারাপ কিছু৷ ডিম দেখলে আমার গা ঘিন-ঘিন করে। আপনি ডিমের সাদার ভেতর থেকে হলদেটে কুসুম বের হওয়া দেখেছেন? বমি আসে দেখলে। রক্ত প্রাণবন্ত জিনিস, লাল। কিন্তু ডিমের কুসুম বিবমিষা জাগায়।' 

 

হিচকক ছিলেন প্র‍্যাকটিক্যাল একজন জোকার, প্র‍্যাংকস্টার

যখন আমেরিকান ফিল্ম ইন্সটিটিউট তাকে আজীবন সম্মাননা দেয় বন্ধুদেরকে হিচকক বলেছিলেন, 'শীঘ্রই বোধহয় মারা যাচ্ছি!' 

হিচকক পছন্দ করতেন প্র‍্যাকটিক্যাল জোকস। সেসবের অনেকগুলো ছিলো নির্দোষ। ডিনার পার্টিতে নানা ধরণের চমক দিতেন তিনি। কিন্তু সবসময় সেই চমক আর নির্দোষ থাকতো না। 

একবার তার এক ক্রুর সঙ্গে বাজি ধরলেন হিচকক। যে যদি সেই লোক অন্ধকার স্টুডিওতে ক্যামেরার সঙ্গে শেকল দিয়ে বাঁধা অবস্থায় একরাত থাকতে পারে, তাহলে তাকে এক সপ্তাহর বেতন দেয়া হবে। 

চ্যালেঞ্জ শুরু হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে, ল্যাক্সেটিভ-লেইসড ব্রান্ডি দিল। পরের দিন সকালে লোকটাকে পাওয়া গেলো ক্রন্দনরত অবস্থায়, ফ্লোর নোংরা করে ফেলেছে সে। 

 

ওয়াল্ট ডিজনি হিচকককে পছন্দ করতেন না

তার সিনেমার জন্য ডিজনিল্যান্ডে একবার শুটিং করার অনুমতি চেয়েছিলেন হিচকক। ওয়াল্ট ডিজনি হিচকককে পছন্দ করতেন না। অনুরোধ বাতিল করে দিয়েছিলেন, শুধু তাই না, ভবিষ্যতে যেন কখনও হিচককের মুভির শুটিং ডিজনিল্যান্ডে না হয় সেটিও নিশ্চিত করেছিলেন। ডিজনির ভাষায়, 'অনুমতি মিলবে না কারণ সে (হিচকক) ওই অরুচিকর মুভিটি বানিয়েছে।'

অরুচিকর মুভি বলতে কোন মুভিকে বুঝিয়েছেন ডিজনি? 

সাইকো- বর্তমানে যে মুভিকে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের একটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। 

 

সব কপি কিনে ফেলো! 

সাইকো- রিলিজ হওয়ার আগে, হিচকক তার সহকারী পেগি রবার্টসনকে নির্দেশ দেন রবার্ট ব্লখের উপন্যাস সাইকো'র যত বেশি সংখ্যক কপি পাওয়া যায় সব কিনে ফেলতে। কারণ হিচকেক চেয়েছেন দর্শকদের কেউ যেন গল্পের টুইস্ট আগে থেকে না জানে। 

 

অস্কার না পাওয়া 

যদিও পাঁচবার সেরা ডিরেক্টর হিসেবে নমিনেশন পেলেও সিনেমার ইতিহাসের বিব্রতকর একটি তথ্য হলো, হিচকক কখনও অস্কার জেতেননি। যেমনটা পাননি স্টানলি কুব্রিক, অরসন ওয়েলস, চার্লি চ্যাপলিন, ইঙ্গমার বার্গম্যানসহ অনেক খ্যাতিমান নির্মাতা৷ 

তো, যখন অস্কারে তাকে আজীবন সম্মাননা দেয়া হয়, অনুষ্ঠানে তার বক্তব্যের জন্যে অধীর আগ্রহে বসে ছিলো সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির লোকেরা। 

সবাইকে অবাক করে দিয়ে ইতিহাসে সংক্ষিপ্ততম বক্তৃতাটি দেন হিচচক। মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে হিচকক বলেন, 'থ্যাংক ইউ। থ্যাংক ইউ ভেরি মাচ ইনডিড।' তারপর দ্রুত স্টেজ থেকে নেমে যান। 

১১০৭ পঠিত ... ২২:২৬, আগস্ট ১২, ২০২০

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top