সৌরভ গাঙ্গু্লীকে চেনেন না, এমন বাঙালি ওপার বাংলায় থাকার তো প্রশ্নই ওঠে না, বাংলাদেশেও না থাকতে পারে। প্রথম ‘বাঙালি ক্রিকেট তারকা’ তাকে বলা হলে খুব ভুল হয় না। খেলোয়াড়ি জীবনে মুগ্ধ করেছেন বাহারি সব শটে, বিশেষ করে অফসাইডের শটগুলোতে। তাঁর সতীর্থ রাহুল দ্রাবিড় তো বলেইছিলেন- অফসাইডে সবচেয়ে ভালো খেলেন স্বয়ং ঈশ্বর, তারপর গাঙ্গুলী!
ক্যাপ্টেন হিসেবে ছিলেন তাক লাগানিয়া। দাদাগিরি শো-তে করে যাচ্ছেন মুগ্ধ। আর বর্তমানে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট হিসেবেও লড়ে যাচ্ছেন ক্রিকেটের জন্য।
সৌরভ গাঙ্গুলীর বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার ও জীবনের পাঁচটি মজার ঘটনা তুলে ধরা হলো eআরকির পাঠকদের জন্য।
১#
ঘটনাটা সৌরভ গাঙ্গুলীকে নিয়ে। গণমাধ্যমে শেয়ার করেছিলেন আমাদের মুশফিকুর রহিম। শুনুন মুশফিকের ভাষ্যেই-
’স্লেজিং না করলেও, কখনও কখনও কিছু কথা তো বলতেই হয়। ২০০৭ সালে একটি স্লেজিংয়ের কথা মনে আছে আমার। মজার একটা ঘটনা। (বিশ্বকাপে) আমার প্রথম ম্যাচ ছিল। সৌরভ গাঙ্গুলী তখন ব্যাটিংয়ে। ফিফটি করেছিলেন সেদিন। অনেকক্ষণ ছিলেন উইকেটে। উনি তো কলকাতার, তাই বাংলা ভালোই বোঝেন।’
’আমাদের রাজ ভাই অথবা রফিক ভাইয়ের একজন বোলিং করছিলেন। তখন আমি তাকে বলেছিলাম, দাদা, আপনি এত মারছেন কেন? আমরা আপনার ছোট ভাই না? এত মারলে হবে? একটু ছাড়-টাড় দেন। তখন গাঙ্গুলী জবাবে বললেন, না, না! তোরা আর ছোট নেই। অনেক বড় হয়ে গেছিস। তোদেরকে ছাড় দেয়া যাবে না।’
২#
এটা আবার সৌরভের ওপরই মজা নেয়ার একটা ঘটনা। বাংলাদেশের অভিষেক টেস্ট। খালেদ মাসুদ পাইলট শেষের দিকে অনেকক্ষণ ধরে ব্যাট করছেন। স্বভাবসুলভ বল খাচ্ছিলেন বেশি, রান করছিলেন কম। ঠেকিয়ে ঠেকিয়ে খেলা দেখে ভারত অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলী ধৈর্যচ্যুত হয়ে পাইলটকে বললেন, ‘তোমাকে এমন বিরক্তিকর খেলা কে শিখিয়েছে,বলো তো?’
পাইলট সাথে সাথে জবাব দিলেন, ‘কে আবার? ঐ যে সুনীল গাভাস্কার। যিনি ওয়ানডেতে পুরো ৬০ ওভার খেলে ৩৪ রানে অপরাজিত ছিলেন!’
৩#
তাঁর সময়ে ভারতীয় দলের ড্রেসিংরুমের একটি মজার ঘটনা এবার শুনবেন সৌরভের ভাষ্যেই। তিনি তখন ক্যাপ্টেন। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে রান পাচ্ছিলেন না। তাই এমনিতেই মনমেজাজ ভাল না। বললেন, ‘প্র্যাকটিস সেরে ড্রেসিংরুমে গেছি। দেখছি শচীন আর হরভজনের নেতৃত্বে সবাই আমার কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। বলছে, আমি নাকি ওদের পারফরমেন্স নিয়ে সন্তুষ্ট নই। সংবাদমাধ্যমে নাকি তেমনই বলেছি। এটা শুনে খানিকটা অবাকই হয়েছিলাম। আমি এমন কথা তো কোথাও বলিনি। তখন সবাইকে বলি, ‘সত্যি যদি তোমরা মনে কর, আমি এরকম বলেছি, বা আমার কোনও কথা তোমাদের ভাল লাগেনি, তাহলে আমি নেতৃত্ব থেকে ইস্তফা দিতে রাজি।’ তারপর আমি চেয়ারে চুপ করে বসে আছি। হঠাৎ দেখি হরভজন ‘দাদা, এপ্রিল ফুল এপ্রিল ফুল’ বলে চিৎকার করে লাফাচ্ছে। জানতামই না সেটা ছিল ১ এপ্রিল। এমনই সব মজা ছিল আমাদের ড্রেসিংরুমে।’
৪#
দেশের অধিনায়ক সৌরভ। একবছর দুর্গাপুজোর সময়ে ঠাকুর দেখতে গিয়ে সর্দার সাজতে হয়েছিল। মেকআপ আর্টিস্টকে বাড়িতে ডেকে ভদ্রস্থ ও বিশ্বাসযোগ্য লুক তৈরি করা হয়। পরে রাস্তায় বেরিয়ে বাবুঘাটে আসতেই পুলিশ কর্মকর্তা চিনে ফেলেন সৌরভকে। তবে সৌরভের অনুরোধে সিক্রেট আর ফাঁস করেননি। নির্বিঘ্নেই পূজা দেখে ঘরে ফেরেন তিনি।
৫#
ঘটনাটি একটু সিরিয়াসই ঘটেছিলো। ভারতের শিলিগুড়ির বেঙ্গল সাফারি পার্কে দু’টি চিতাবাঘ আনা হয়। ক্রিকেটের বাইশ গজে শচিন-সৌরভের দুর্দান্ত জুটির সঙ্গে মিলিয়ে এই চিতা দু’টির নামও রাখা হয় শচিন-সৌরভ। এই পর্যন্ত ঠিকই ছিলো। সমস্যা দেখা দিলো, যখন সুযোগ পেয়ে শচিন একদিন চম্পট দিলো!
পুরো সাফারি পার্ক তটস্থ। চারদিন হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু শচিনের কোনো খোঁজ নেই। অবশেষে চারদিনের মাথায় শচিন নিজেই এসে আবার ধরা দিলো। পত্রিকায় সেটা নিয়ে খবরও হলো।
আর সেই খবরের ছবি টুইট করে সৌরভ গাঙ্গুলী ট্যাগ করলেন শচিন টেন্ডুলকারকে। বললেন- একটু পড়ে দেখো টেন্ডুলকার।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন