নস্ত্রাদামাস সম্পর্কে ৫টি অদ্ভুত কিন্তু সত্যি ঘটনা

৮৭২ পঠিত ... ২২:৪৮, জুলাই ০২, ২০২০

নস্ত্রাদামাস ছিলেন একজন ফরাসি জ্যোতির্বেত্তা, চিকিৎসক এবং বিশ্বজুড়ে খ্যাত ভবিষ্যতদ্রষ্টা। প্রকৃত নাম মিশেল দে নস্ত্রাদেম, যদিও নামের ল্যাটিনিকৃত নস্ত্রাদামাস হিসেবেই বেশি পরিচিত। ৯৪২টি চতুর্পদীর সংকলন Les Profeties ভবিষ্যদ্বাণী বিষয়ক সবচেয়ে বিখ্যাত বই। ১৫৬৬ সালের আজকের দিনে তিনি মারা যান। এখানে নস্ত্রাদামাসের কিছু অদ্ভূত কিন্তু তুলনামূলক অজানা বিষয়ে সম্পর্কে জানা যাক। 

 

১# নস্ত্রাদামাস মেডিকেল স্কুল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। 

নস্ত্রাদামাস ১৫১৯ সালে আভিঁন্যু ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছিলেন। তখন তার বয়স ১৫ বছর। কিন্তু ইউরোপের এই শহরটা  প্লেগের কারণে ভার্সিটি বন্ধ থাকলে এক বছরের মাথায় সেখান থেকে চলে যেতে হয়। 

এরপরের টানা আট বছর নস্ত্রাদামাস ফ্রান্স, ইটালি ও স্পেনের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বিভিন্ন হার্বাল ঔষধ বানানোর চেষ্টা করেছেন। কাজ করেছেন ঔষধ প্রস্তুতকারক ও বিক্রেতা হিসেবে এবং প্লেগের রোগীদের চিকিৎসা করেছেন। 

১৫২৯ সালে নস্ত্রাদামাস ভর্তি হন বিশ্বের প্রাচীনতম মেডিকেল স্কুল- যা এখনও পর্যন্ত চালু আছে- মনটপেলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে অচিরেই সেখান থেকে বহিষ্কৃত হন কারণ বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষে জানতে পারে তিনি ওষুফহ প্রস্তুতকারক ও বিক্রেতা হিসাবে কাজ করেছেন- যা ডাক্তারদের চোখে নিচুশ্রেণির কাজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় রেগুলেশনে নিষিদ্ধ। যদিও পরবর্তীতে ১৫৭২ সালে মন্টপেলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ওষুধ প্রস্তুত ও বিক্রয় কলেজ স্থাপন করা হয়। গবেষকদের মধ্যে বিতর্ক আছে যে পরবর্তীতে তিনি তার মেডিকেল ডিগ্রির জন্যে গিয়েছিলেন কিনা, অবশ্য তার কোনো প্রমাণ ভা হদিস পাওয়া যায় না। উল্টোদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকিউরেটর গুলিয়াউমে রনদেলে সাক্ষরিত নথি কিন্তু এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে টিকে আছে৷ 

 

২# নস্ত্রাদামাসের 'লাভ জ্যাম'

ভবিষ্যদ্বাণীর পাশাপাশি নস্ত্রাদামাস কুকবুকও লিখেছেন। 

নস্ত্রাদামাসের প্রথমদিকের একটা বইয়ের নাম 'ট্রিটিজ অন কসমেটিক্স এন্ড কনসার্ভেস'। কিভাবে ব্লন্ড হেয়ার ডিয়া, ল্যাক্সেটিভ, টুথপেস্ট এবং প্লেগের আক্রান্তদের জন্যে 'রোজ' পিল বানানোর নির্দেশনার পাশাপাশি বইয়ে মার্জিপ্যান পেস্ট, অরেঞ্জ ক্যান্ডি, চেরি জ্যাম, পিয়ার মোরব্বা বানানোর বিস্তারিত প্রক্রিয়া। 

ওহ হো, 'লাভ জ্যাম' একটা জিনিসের রেসিপিও আছে 'যাহা সেবনে', নস্ত্রাদামাসের ভাষায়, 'নারীর হৃদয় কামের আগুনে প্রজ্জ্বলিত হইয়া উঠিবে'। এই 'লাভ জ্যাম' বা কুদরতি হালুয়া টাইপ জিনিস বানাতে লাগবে অনেক কিছুর সঙ্গে প্রধান উপাদান হিসেবে লাগবে 'আপেল, চড়ুইয়ের রক্ত, অক্টোপাসের শরীরের কিছু বিশেষ অংশ। তবে নস্ত্রাদামাস কিন্তু এও বলে দিয়েছেন, এটা কাজ করবে তখনই যখন চুমু খাওয়ার পরে প্রেমিকার স্যালাইভার মাধ্যমে শরীরে মিশে যাবে৷ 

 

৩# তার ভবিষ্যদ্বাণী অতীতের ঘটনাসমূহের উপর নির্ভর করে করা 

যদিও ১৬ শতাব্দী থেকে একজন ভবিষ্যৎদ্রষ্টা হিসেবে নস্ত্রাদামাসের নাম প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। গবেষকরা এখন বিশ্বাস করেন তার কোনো অতিলৌকিক ক্ষমতা ছিলো না ভবিষ্যৎ দেখার। বরং অতীতের ঘটনার আলোকেইল সম্ভাব্য ভবিষ্যতের ব্যাপারে কথা বলার ক্ষমতা ছিলো। 

পিটার লেমেসুরিয়ের ক্যাম্ব্রিজের সাবেক ভাষাবিদ ও পেশাদার অনুবাদক। তিনি নস্ত্রাদামাসের উপরে দশটিরও বেশি বই লিখেছেন। পিটার মনে করেন, নস্ত্রাদামাস আসলে জ্যোতিষী ছিলেন না, দ্রষ্টাও ছিলেন না। নস্ত্রাদামাস নিতান্ত বিশ্বাস করতেন ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে। এই কাজে একটা পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন নস্ত্রাদামাস যে পদ্ধতি বাইবেলের যুগ থেকেই চালু ছিলো। পদ্ধতিটির নাম বিব্লিওম্যান্সি৷ নস্ত্রাদামাস বিভিন্ন প্রাচীন উৎস থেকে দৈবচয়নের ভিত্তিতে ছোট ছোট অংশ নিয়ে তার জ্যোতিষিবিদ্যার গণনার ভিত্তিতে সম্ভাব্য  ভবিষ্যতের ছবি এঁকেছেন। তার বিখ্যাত বই 'দ্য প্রফেসিজ' এর একটি প্রধান উৎস  হলো, ১৫২২ সালে প্রকাশিত 'মিরাবিলিস লিবের' নাম সংকলন, যা  তৎকালীন ভবিষ্যতদ্রষ্টাদের ভবিষ্যতবানীর সংগ্রহ। অন্যদিকে, নস্ত্রাদামাস জ্যাতিষচর্চা বিষয়ক ধারণাসমূহ নিয়েছেন মূলত রিচার্ড রুশো লিখিত Livre de l’estat et mutations des temps নামক বই থেকে। 

 

৪# জীবদ্দশায় জ্যোতিষবেত্তা হিসেবে সমসাময়িকদের কাছে অত্যন্ত সমালোচিত ছিলেন 

১৫৫৫ সালে 'দ্য প্রফেসিজ'- এর প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হয়। ততদিনে তার পঞ্জিকা নানা কারণে বিতর্কিত ও আলোচিত। পঞ্জিকাগুলো এক বছর পর পর প্রকাশ করতেন তিনি। প্রফেসিজ প্রকাশের আগে ৫ বছর ধরে  পঞ্জিকা প্রকাশ করে এসেছেন নস্ত্রাদামাস। এগুলোতে কৃষকদের জন্যে আবহাওয়া বিষয়ক তথ্য, আগামী বছরের জন্যে কিছু ভবিষ্যদ্বাণী ইত্যাদি থাকতো। এই ভবিষ্যদ্বাণীগুলো ফ্রান্সের রানী ক্যাথরিন দে মেদিচির নজরে পডে। রানী নস্ত্রাদামাসকে প্যারিসে ডেকে পাঠান তার ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যতবানী জানতে চান।

অবশ্য এই সময় থেকে পেশাদার জ্যোতির্বেত্তাদের কাছ থেকে নস্তাদামাসের প্রতি সমালোচনার তীর আসতে থাকে। তার গণনা পদ্ধতি ও অজ্ঞানতা বিষয়ক অনেক গল্প চালু হয়। ১৫৫৮ সালে লরেন ভিন্ডেল একটা চটি বই লিখলেন, যারা শিরোনাম, Declaration  of the abuses, ignorances and seditions of Michel Nostradamus!

বইটিতে নস্ত্রাদামাসের ভুল প্রেডিকশন, জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ে অজ্ঞতা ইত্যাদি কথা বলা হয়। এবং অনেকে 

মনে করেন সেগুলো অনেকাংশে ঠিক ছিলো। 

 

৫# দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নস্ত্রাদামাসের ভবিষ্যদ্বাণীগুলো প্রোপাগান্ডায় ব্যবহৃত হয়েছিলো 

১৯৩৯ সালে জার্মানির পোল্যান্ড দখলের কিছুদিনের মাথায়, হিটলারের প্রোপাগান্ডা বিষয়ক মন্ত্রী গোয়েবলসের স্ত্রী মাগদা গোয়েবলসের নজরে আসে নস্ত্রাদামাসের বই 'মিস্ট্রিজ অফ দ্য সান এন্ড সোল' এর একটা অংশ। এই অংশটাতে, লোকের বিশ্বাস, নস্ত্রাদামাস এমন এক মহাসংকটের কথা বলেছেন যা উদ্ভুত হবে ইংল্যান্ড ও পোল্যান্ডে। গোয়েবলস অর্ডার দিলেন নস্ত্রাদামাসের টেক্সটকে ব্যবহার করে এমনভাবে খবর  সাজাতে যাতে নিরপেক্ষ দেশগুলোতে বাস করা লোকদের মনে হয় নাৎসিদের বিজয় অনিবার্য, পূর্বনির্ধারিত। ভয়ের কারণে বিপক্ষের মিত্রশক্তি আক্রমণ জোরদার করে, জার্মান অধিকৃত অঞ্চলগুলোতে আরও বেশি করে বোমারু বিমান পাঠাতে থাকে, সাথে তারাও খবর ছড়ায় যে নস্ত্রাদামাস আসলে জার্মানদের পরাজয়ের ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। যোদ্ধাদের মনোবল বাড়াতে তখন আমেরিকানরা নস্ত্রাদামাসকে নিয়ে অনেকগুলো শর্ট ফিল্মও বানিয়েছিলো! 

৮৭২ পঠিত ... ২২:৪৮, জুলাই ০২, ২০২০

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top