শত বছর আগের ঢাবি যেমন ছিল: ১০টি ঐতিহাসিক তথ্য

১৩৯২ পঠিত ... ১৯:৩৬, জুলাই ০১, ২০২০

আজ ১ জুলাই, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। শতবর্ষের চেয়ে এক বছর কম অর্থাৎ ৯৯ বছর আগে যাত্রা শুরু করে পরবর্তীতে একটি জাতির ইতিহাস বদলে দেয়া এই বিশ্ববিদ্যালয়টি। চলুন আজ জেনে নেয়া যাক প্রতিষ্ঠাকালের কিংবা শুরুর দিনগুলোর ঢাবি নিয়ে কিছু ঐতিহাসিক তথ্য।

১# ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য এই অঞ্চলের মানুষের দাবি ছিল, পূর্ব বাংলার মুসলমানদের তরফে চাপ ছিল, কিন্তু কেমন হবে সেই বিশ্ববিদ্যালয়, কী রকম হবে তার শিক্ষাব্যবস্থা, সে ধারণা কেউ দিতে পারেননি। সেই কাজটি করে স্যাডলার কমিশন এবং বিশেষভাবে ড. হার্টগ। কমিশন বলে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো পরীক্ষাসর্বস্ব বিশ্ববিদ্যালয় হবে না, এখানে টিউটোরিয়ালের ব্যবস্থা থাকবে, তাতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঘটবে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ এবং পারস্পরিক আদান-প্রদান, যা স্বাধীন চিন্তা বিকাশের সহায়ক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যারা পাস করে বেরোবেন তারা শুধু প্রশাসনের কেরানি ও কর্মকর্তা হওয়ার শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জন করবেন না, তারা 'উন্নত' মানবিক গুণসম্পন্ন মানুষ হবেন, যাঁরা সমাজে অবদান রাখতে পারবেন। 

১৯৫২ সালের কার্জন হল

 

২# এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্পের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছিলেন এইচ ই স্টেপলটন। তিনি বলেন, 'আমরা চেয়েছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি অটোনমাস বা স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানরুপে গড়ে তুলতে। যদিও অর্থনৈতিক ব্যাপারে এর প্রধান অবলম্বন হবে সরকারি অনুদান, তবু আমরা চাই না এটি একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান হোক।' 

৩# রমনার নতুন বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাটিকে মনোরম করে গড়ে তোলার জন্য ইংল্যান্ড থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল কিউই গার্ডেনের একজন উদ্যান-বিশারদকে। পরিকল্পনা এমনভাবে করা হয়েছিল, যাতে রমনার বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কোনো-না-কোনো বৃক্ষে সারা বছরই এবং সব ঋতুতেই ফুল থাকে। সেভাবেই নির্বাচন করে বৃক্ষ রোপণ করা হয়। 

পুরাতন চারুকলা

 

৪# ১৯২১ সালের ১ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়। তবে কার্জন হলে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি যতটা আনন্দঘন ও উৎসবমুখর পরিবেশে এবং উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যে হতে পারত, তা হয়নি। সেদিনের ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানটি ছিল আনন্দ ও বেদনায় মিশ্রিত। পূর্ব বাংলার ও ঢাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের অনেকেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত ছিলেন। 'বন্দে মাতরম' ও 'আল্লাহু আকবর' ধ্বনিতে তখন ঢাকার প্রতিটি পাড়া-মহল্লা মুখরিত। চলছিল তখন অসহযোগ আন্দোলন। 

আগেরকালের শহীদুল্লাহ্ হল

 

৫# ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকের চেয়ে সরকারি কলেজের ইন্ডিয়ান এডুকেশন সার্ভিস ও বেঙ্গল প্রভিন্সিয়াল এডুকেশন সার্ভিসের অধ্যাপকদের বেতন বেশি ছিল। যে কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু শিক্ষক ইস্তফা দিয়ে সরকারি কলেজের অধ্যাপক হয়েছিলেন। 

৬# প্রথম অনেক বছর ক্লাসরুমে একদিকে হিন্দুরা আর এক পাশে মুসলমানরা বসতেন। ঢাবিতে টিউটোরিয়াল ছিল বিখ্যাত। সেখানে শিক্ষকদের সামনে ছাত্রদের ঘনিষ্ঠ হয়ে বসতে হতো। সেখানে হিন্দু-মুসলমান দূরত্ব ধীরে ধীরে ঘুচতে থাকে। পারিবারিক দিক থেকে যার যে সংস্কারই থাকুক, সতীর্থ হিসেবে অনেকেই তা থেকে বেরিয়ে আসতে থাকেন। অখণ্ড বঙ্গদেশে, বিশেষ করে পূর্ব বাংলায়, ঢাবি তরুণসমাজ ধর্মনিরপেক্ষ আচরণ করতে শেখায়।    

১৯৬৯ সালে সাইকোলজি বিভাগের মাস্টার্সের কয়েকজন ছাত্রী

 

৭# আজকের ছেলেমেয়েরা জেনে রাখুন, শুরুর দিকে কোনো ছেলের সাথে কোনো মেয়ের কথা বলতে হলে, প্রক্টরের অনুমতি নিয়ে তার পাশের একটি কক্ষে ৫ মিনিট কথা বলতে হতো! অনুমতি বাদে কথা বললে ছিল জরিমানার নিয়ম।

৮# তিনটি অনুষদ ও ১২টি বিভাগ নিয়ে একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এর যাত্রা শুরু হয়। ঢাকা কলেজ ও জগন্নাথ কলেজের (বর্তমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) ডিগ্রি ক্লাসে অধ্যয়নরত ছাত্রদের নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করে।

ভাষা আন্দোলন কালীন আমতলা, কলাভবন

 

৯# ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রী লীলা নাগ। ১৯২১ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যাল়য়ে ইংরেজি বিষয়ে এমএ ভর্তি হন। ১৯২৩ সালে তিনি দ্বিতীয় বিভাগে এমএ ডিগ্রী লাভ করেন। তিনিই ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম এমএ ডিগ্রীধারী। তখনকার পরিবেশে সহশিক্ষার কোনও ব্যবস্থা ছিল না বলে লীলা রায়ের মেধা ও আকাঙ্খা বিচার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভাইস চান্সেলর ডঃ হার্টগ তাকে পড়ার বিশেষ অনুমতি প্রদান করেন।

১০# প্রথমদিকে সকল ছাত্রকে কোন না কোন হলে আবাসিকভাবে থাকতে হতো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম তিন বছরের অনার্স চালু হয়, যা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু ছিল দুই বছরের কোর্স হিসেবে।

 

তথ্যসূত্র: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা, সৈয়দ আবুল মকসুদ; উইকিপিডিয়া।     

১৩৯২ পঠিত ... ১৯:৩৬, জুলাই ০১, ২০২০

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top