মাইকেল জ্যাকসনের জীবনের অদ্ভূত ১০টি ঘটনা

৪৯১৫ পঠিত ... ২০:২২, জুন ২৫, ২০২০

 

১.

মাইকেল জ্যাকসনের বাবা জোসেফ জ্যাকসন ভুতুড়ে মাস্ক পরে মাইকেলের বেডরুমের জানালা বেয়ে উঠে চিৎকার করে মাইকেলকে ভয় দেখিয়েছিলেন। তার দাবি, তিনি তার সন্তানদের বেডরুমের জানলা খোলা না রেখে ঘুমানো শেখাচ্ছিলেন। এই ঘটনা মাইকেলকে দীর্ঘদিন ট্রমার মধ্যে রেখেছে।

মাইকেল জ্যাকসনের শৈশব সুখকর ছিলো না। মনে করা হয়, মাইকেল ও তার ভাইবোনেরা সবাই তাদের বাবা জোসেফ জ্যাকসনের দ্বারা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়৷ মাইকেল জ্যাকসন প্রথম অপরাহ উনফ্রের সঙ্গে একটা ইন্টারভিউতে ব্যাপারটা খোলাখুলি বলেন। জোসেফ জ্যাকসন রিহার্সালের নাম করে  সন্তানদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন। মাইকেলকে তিনি ডাকতেন 'বিগ নোজ' বলে, একবার পা উপর মাথা নিচে রেখে শুন্যে ঝুলিয়েও পিটিয়েছিলেন৷ 

বাবা-মায়ের সঙ্গে পিচ্চি মাইকেল জ্যাকসন

 

২.

সাঙ্গীতিক ভাষা লিখতে ও পড়তে না জানা সত্ত্বেও মাইকেল তার গান রচনা করতেন নিজে নিজেই। গানের প্রত্যেকটা কর্ড, হারমনি, মেলডি, ব্যাস এমনকি রিদম সবকিছু সে নিজের গলায় তুলতেন। মাইকেল ছিলেন সত্যিকারের 'মিউজিকাল জিনিয়াস', কাগজে লেখার আগেই তিনি পুরো গান গলায় তুলে নিতেন। 

 

৩.

মাইকেল জ্যাকসন এলভিস প্রিসলির মেয়ে লিসা মেরি প্রিসলিকে বিয়ে করেছিলেন। রক এন্ড রোল কিংবদন্তী এলভিস প্রিসলির মেয়ে লিসা মেরি প্রিসলি নিজেও ছিলেন সঙ্গীতশিল্পী ও গীতিকার। লিসা একসময় ছিলেন মাইকেল জ্যাকসনের স্ত্রী। 

মাইকেল জ্যাকসনের একটা গানের ভিডিও 'ইউ আর নট এলোন'- এ লিসাকে দেখাও গিয়েছিল। তারা পরস্পরের প্রেমে পড়েন। ইমোশনাল সাপোর্টের জন্যে মাইকেল লিসার উপ্প্র নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। লিসা তাকে ড্রাগ এবিউজ থেকে মুক্তি পেতে রিহ্যাবে ভর্তি করতে রাজি করায়। প্রিসলির মতে, তাদের বিবাহবিচ্ছেদের পরেও তারা চার বছরেরও বেশি সময় ধরে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে চেয়েছিল। 

লিসা প্রিসলির সঙ্গে মাইকেল

 

৪.

মাইকেল জ্যাকসনের অনেক অদ্ভূত স্বভাবের একটি ছিল, তিনি প্র‍্যাংক কল করতে পছন্দ করতেন। একবার তিনি অভদ্র এক হোটেল ম্যানেজারের কন্ঠ নকল করে অভিনেতা রাসেল ক্রোকে ফোন করেছিলেন। এরপর থেকে রাসেল ক্রো যে হোটেলেই উঠুক না কেন, মাইকেল কমিক ভয়েসে তাকে ফোন করতেন। 

মাইকেল জ্যাকসনের এই প্র‍্যাংক কল করার কথা রাসেল ক্রো বলেন গ্রাহাম নর্টনের ইন্টারভিউতে৷ যে হোটেলেই থাকুক না কেন রাসেল, মাইকেল তাকে ফোন করতো। অথচ বাস্তবে তাদের কখনই দেখা হয়নি। যখন রাসেল ক্রো মাইকেলের বন্ধুদেরকে এই প্র‍্যাংক কলের কথা জানান, তারা অবাক তো হয়ই না বরং বলে, মাইকেল সবসময়ই এরকম একে ওকে প্র‍্যাংক কল করে থাকে। 

 

৫.

মাইকেল জ্যাকসনের সিগনেচার স্টাইল 'এন্টি-গ্র‍্যাভিটি লিন' করা হয়েছে বিশেষ ধরণের জুতার সাহায্য। এই জুতা মাইকেল নিজেই ডিজাইন করেছেন এবং কপিরাইট নিয়ে নিয়েছেন। 

১৯৮৭ সালে মিউজিক ভিডিও 'স্মুথ ক্রিমিনাল'-এর জন্য জ্যাকসন এক ধরনের ডান্স রুটিন ঠিক করেন, যাতে তাকে ৪৫ ডিগ্রি কোণে সামনের দিকে খুঁজতে হয়, আপাতভাবে যা দেখে মনে হয় অভিকর্ষ বলকে তার শরীর অস্বীকার করছে। 

 

৬.

আশির দশকে তারকাশিল্পী, রক ব্যান্ড কুইনের ভোকাল ফ্রেডি মার্কারির সঙ্গে যৌথভাবে মাইকেল জ্যাকসনের একটা অ্যালবাম হওয়ার কথা ছিলো। তারা তিনটা গানও রেকর্ড করেন। তবে মার্কারি চুক্তি বাদ দিয়ে সেই কাজ ভন্ডুল করে দেন, কারণ জ্যাকসন তার পোষা লামাকে স্টুডিওতে নিয়ে আসতেন। 

১৯৮৩ সালে গানগুলো রেকর্ড করা হয় এনরিকো, ক্যালিফোর্নিয়ায় মাইকেলের বাসার স্টুডিওতে। তখন মাইকেল ও মার্কারি দুজনই তাদের খ্যাতির চূড়ায়। কথা ছিলো গানগুলো তাদের দুজনের একটা ডুয়েট অ্যালবামে থাকবে। 

অবশ্য মূলত তাদের মতপার্থক্যের কারণেই অ্যালবামটা তারা কখনো শেষ করতে পারেননি। মার্কারি রেকর্ডিংয়ের সময় স্টুডিওতে মাইকেলের লামা নিয়ে আসাটা পছন্দ করতেন না৷ আর মাইকেলের লিভিং রুমে মার্কারির প্রচুর পরিমাণে কোকেইন নেয়াটাও মাইকেল ভালো চোখে দেখেননি। দুই তারকার মৃত্যুর পর, ২০১১ সালে গান তিনটি রিলিজ দেয়া হয়। 

ফ্রেডি মার্কারির সঙ্গে মাইকেল জাকসন

 

৭.

মাইকেল জ্যাকসন ছিলেন কমিক্সের মহাভক্ত। এমনই ছিল তার কমিক্স প্রীতি তিনি স্পাইডারম্যান চরিত্রে অভিনয়ের চেষ্টা করেছিলেন। একবার তো মার্ভেলকে কিনেই নিয়েছিলেন...

মার্ভেলের চেয়ারম্যান এবং মার্ভেলের অনেকগুলো সুপারহিরোর স্রষ্টা স্ট্যান লির মতে, মাইকেল জ্যাকসন কমিক্স কোম্পানিটি কিনতে চেয়েছিলেন৷ কারণ মাইকেল মনে করেছিলেন, কোম্পানিটি কিনে নিলেই কেবল তিনি স্পাইডারম্যান চরিত্রে অভিনয় করতে পারবেন। যদিও লি একমত যে, মাইকেলকে স্পাইডারম্যান চরিত্রে হয়তো মানাতো, তবে চরিত্রটির জন্যে টবি মাগুরেকেই উপযুক্ত মনে করেছেন স্ট্যান লি। লি'র মতে, মাইকেল কিনে নিলে মার্ভেল নিশ্চয়ই খুব ভিন্ন কিছু হতো, হয়তো এতটা সফল হতো না। কারণ, স্ট্যান লি মনে করেন, জ্যাকসন ব্যবসায়ী হিসেবে খুব একটা সুবিধার না।

 

৮.

মাইকেল জ্যাকসনের মৃত্যুর পর তার ভল্টে শত শত আনরিলিজড গান পাওয়া গেছে। মাইকেলের মৃত্যুর পর, তার বোন লা টয়া জ্যাকসন দুটি হার্ড ডিস্ক পেয়েছেন যেখানে এক হাজারেরও বেশি গান ছিলো। এই গানগুলো কখনও রিলিজ করা হয়নি, এমনকি কোনো এজেন্সির সাথে রেজিস্ট্রেশনও করা ছিলো না। বলা হয়ে থাকে, মাইকেল তার জীবদ্দশায় প্রায় ৫০ হাজার গান রেকর্ড করেছেন। 

হ্যাঁ, প্রিয় পাঠক, আপনি ঠিক পড়েছেন, ৫০ হাজার!

 

৯.

মাইকেলে জ্যাকসনকে নিয়ে সেই প্রচলিত কাহিনীটা হয়তো জানেন, যেখানে বলা হয় মাইকেল জ্যাকসন বয়স বৃদ্ধি ঠেকাতে অক্সিজেন চেঞ্জারের মধ্যে বাস করছেন। এইটা যে একটা বানোয়াট গল্পম সেটাও অনেকেই জানেন। তবে মজার ব্যাপার হলো, এই গল্প মাইকেল জ্যাকসন নিজেই বানিয়েছেন আর নিজেই প্রেসে সত্যি বলে ফাঁস করেছেন। 

 

১০. 

২৫ জুন ২০০৯ সালে মারা যান মাইকেল জ্যাকসন। তার মৃত্যুর পর গুগলে জ্যাকসনকে নিয়ে এতো সার্চ হয়েছিলো যে গুগল ভেবেছিলো এটা তাদের সার্চ ইঞ্জিনের সার্ভারে আক্রমণ। ফলে গুগল ২৫ মিনিটের মতো সার্চ অপশন বন্ধ রেখে ছিলো। পরে তারা ভুল বুঝতে পেরে তাদের সেবা স্বাভাবিক রাখে৷ ইয়াহু মাইকেলের মৃত্যুর খবর বিষয়ে একটা লিড স্টোরি করে সেদিন, যা রেকর্ড পরিমাণ ১৬.৪ মিলিয়ন ইউনিক ভিজিটর পায়। 

জ্যাকসনের মৃত্যুর দিনে উইকিপিডিয়া, টুইটার ও এওএল সবগুলো একই সঙ্গে ক্র‍্যাশ করে বিকেল ৩.১৫ মিনিটে! 

৪৯১৫ পঠিত ... ২০:২২, জুন ২৫, ২০২০

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top