লাফটার কি আসলেই বেস্ট মেডিসিন? স্বাস্থ্য গবেষকরা কী বলেন?

৩৩৪ পঠিত ... ২২:০৭, জুন ১৭, ২০২০

লাফটার ইজ দ্য বেস্ট মেডিসিন, কথাটা অতিরঞ্জিত সন্দেহ নেই। আপনার অসুখ-বিসুখ হলে নিশ্চয়ই ডাক্তার না দেখিয়ে, ওষুধ না খেয়ে হাসতে থাকবেন না! কথাটা আসলে আক্ষরিক অর্থে বলাও হয় না। বলা হয় এই অর্থে যে, হাসি-ঠাট্টা আপনার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যে ইতিবাচক। প্রবাদবাক্য বা ফোক-উইজডমে একটু-আধটু অতিরঞ্জন তো থাকবেই। তবে হাসি আসলে উত্তম ঔষধ কিনা, এ ব্যাপারে ডাক্তার বা স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষজ্ঞরা কী বলেন? 

স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ মেডিসিনের নিউরোসার্জারি বিভাগের ক্লিনিক্যাল প্রফেসর, জেমস ডটি, এমডি রোগীদের সঙ্গে মেলামেশায় সবসময়ই হাসি-ঠাট্টার মুডে থাকেন। ডটি বলেন, 'আমি পেশাগত কারণে লোকজনকে শোচনীয় অবস্থায় নিয়মিত দেখি। খুব করুণ অবস্থায় দেখি। এই অবস্থায় মানসিক স্বাস্থ্য খুব দূর্বল থাকে। ফলে যদি হাসি-ঠাট্টা  বা লঘুতা নিয়ে আসতে পারেন এদের জীবনে, যোগাযোগের ক্ষেত্রে,  তবে তা সবার জন্যেই খুব ভালো।'

শিলা পেইন, পিএইচডি, ল্যাংক্যাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য গবেষক। তার মতে, হাস্যরসের সবচেয়ে বড় ভূমিকা হলো হাসি মানুষকে আরও বেশি মানবিক করে তোলে। তিনি নিয়মিত হাসির অনেকগুলো সুফলের কথা বলেছেন। নিচে সেগুলো উল্লেখ করা হলো। 

 

দেহের জন্যে হাসি উপকারী 

হাসি আপনার শরীরের জন্যে উপকারী। একটা চমৎকার আন্তরিক হাসি শারীরিক টেনশন ও স্ট্রেস কমায়। একবার মুখ ও মনখোলা হাসি হাসলে আপনার শরীরের পেশি প্রায় ৪৫ মিনিট রিল্যাক্সড থাকে।

হাসি আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে মজবুত করে। স্ট্রেস হরমোন কমায় আর রোগ প্রতিরোধী কোষ ও ইনফেকশনের সঙ্গে লড়াই করতে সক্ষম এন্টিবডি বৃদ্ধি করে। ফলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

নিয়মিত হাসিঠাট্টা আপনার শরীরে এন্ডোরফিনের ক্ষরণ ঘটায়। মানবদেহের ন্যাচারাল ফিল-গুড কেমিকেলের নাম এন্ডোরফিন। এন্ডোরফিন আপনার শরীরের ভালো-লাগার বোধ তৈরি করে, এমনকি সাময়িকভাবে বেদনাও দূর করতে পারে। 

হাসি হৃদযন্ত্রকে রক্ষা করে। ব্লাড ভেসেলের ক্রিয়াকর্মে উন্নতি ঘটায় এবং রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি করে, যা আপনাকে হার্ট-এট্যাক আর  হৃদযন্ত্রের অন্যান্য সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়।

হাসি শরীরের ক্যালরি খরচ করায়। হাসি অবশ্য নিয়মিত ব্যায়ামের বিকল্প, তা না। তবে এক গবেষণায় দেখা গেছে দিনে ১০-১৫ মিনিট হাসি আনুমানিক ৪০ ক্যালরি ক্ষয় হয়- অর্থাৎ বছরে হিসাব করলে আপনি ৩-৪ পাউন্ড ওজন কমাতে পারবেন।

হাসি আপনার রাগ-ক্ষোভ কমায়। দ্রুত রাগ কমাতে এবং সংঘর্ষ এড়াতে অনেকে একসাথে মিলে হাসির মতো জিনিস খুব কমই আছে। 

নিয়মিত হাসি-ঠাট্টার অভ্যাস মানুষের আয়ু বৃদ্ধি করে থাকতে পারে বলে গবেষকদের ধারণা। নরওয়ের এক গবেষনায় গবেষকেরা দেখেছেন, যাদের সেন্স অফ হিউমার বা রসিকতার বোধ ভালো তারা অন্যান্যদের তুলনায় বেশিদিন বাঁচে। আর এই বেশিটা অনেক বেশি, বিশেষ করে ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের জন্যে। 

 

মানসিক ও আবেগগত স্বাস্থ্যের জন্য হাসি 

হাসি আপনার মন চনমনে রাখে। এক ধরনের ইতিবাচকতার বোধ তৈরি করে৷ এই ইতিবাচকতা হাসার অনেকক্ষণ পরেও টিকে থাকে। কঠিন, খারাপ সময়েও হাস্যরস আপনাকে মানিয়ে নিতে সাহায্য করে। 

শুধু দুঃখ ও বিষণ্ণতা থেকে মুক্তি না, হাসি আপনাকে জীবনের কঠিনতম সময়ে আশা ও উপায় দেখাতে পারে। একটা হাসিও নিয়ে যেতে পারে অনেক দূর। আর মজার ব্যাপার হলো, হাসি কিন্তু সংক্রামক। অন্যের হাসি দেখে বা শুনেই আপনার মস্তিষ্ক আনন্দ লাভ করতে পারে। ঠিক এ কারণেই টিভি সিটকম লাফ ট্র‍্যাকস বা ক্যানড লাফটার ব্যবহার করে।

ডিস্ট্রেসিং আবেগ থামিয়ে দেয় হাসি-ঠাট্টা। হাসতে হাসতে কিন্তু একই সাথে আপনি রাগ, ক্ষোভ বা বিষণ্ন থাকতে পারবেন না। হাসি আপনাকে রিল্যাক্স করতে এবং এনার্জি বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে আপনি অনেক বেশি মনোযোগী হয়ে যেকোনো কাজ করতে পারেন৷ 

হাস্যরস বা হিউমার যেহেতু প্রায়ই পারস্পেক্টিভ বদলে দেয়, ভিন্নভাবে চিন্তা করতে সাহা্য্য করে। তাছাড়া হিউমারাস দৃষ্টিভঙ্গি একধরণের ঘটনা বা পরিস্থিতি থেকে এক ধরনের দূরত্ব তৈরি করে বলে, খুব বেশি আবেগে কাতর হয়ে ভুলভাল সিদ্ধান্ত নেয়া বা সংঘর্ষ জড়ানোর সম্ভাবনা কমে। 

একজন অপরিচিত ব্যক্তির সাথেও আপনি কাছাকাছি এসে গেছেন বুঝবেন কীভাবে? যখন তার সাথে একসঙ্গে আপনি হাসতে পারেন। খেয়াল করে দেখুন আপনার কাছের মানুষ বা বন্ধুদের কথা, যাদের সাথে আপনি যখন-তখন হাসিঠাট্টা করতে পারেন। এই মানুষগুলো আপনার আবেগগত ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যে খুব প্রয়োজনীয়। 

শৈশবে, আমরা দিনে শত শতবার হাসি। কিন্তু প্রাপ্তবয়স্কতার সাথে সাথে জীবন সিরিয়াস হয়ে ওঠে, আর হাসিও হয়ে যায় অনিয়মিত। কিন্তু বেশি বেশি হাসার চেষ্টা করে আপনি আপনার ইমোশনাল হেলথকে আর উন্নত করতে পারেন, সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও ভালো করা সম্ভব। তুলনামূলক সুখী ও আয়ুও বাড়াতে পারেন। 

এতো রকম ভালো দিক থাকায় নিয়মিত বেশি বেশি হাসিঠাট্টা করতে পারাটা তাই বিশাল যোগ্যতা, যা আপনার ব্যক্তিগত ও সামাজিক নানা সমস্যার সমাধানে কাজে আসে। সবচেয়ে বড় কথা, এই অমূল্য ওষুধ বিনে পয়সায় ব্যবহার করা যায় এবং সেটা আনন্দময়ও বটে।

৩৩৪ পঠিত ... ২২:০৭, জুন ১৭, ২০২০

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top