চার্টার্ড বিমানের ব্যাপারে আপনি যা নাও জানতে পারেন

২৫০২ পঠিত ... ১৯:৪৩, মে ৩০, ২০২০

বিশ্বজুড়ে দরিদ্র লোকের সংখ্যার পাশাপাশি অতিধনীদের সংখ্যা যেমন বাড়ছে, প্রাইভেট  বিমানের বাজারও তত বড় হচ্ছে। তবে অদ্ভুত ব্যাপার হলো ক্রমবর্ধমান এই প্রাইভেট বিমান বাজারের বড় অংশ কিন্তু ধনী ব্যক্তিরা প্রাইভেট বিমান কিনছেন বলে নয়। যদিও বিল গেটস, ডোনাল্ড ট্রাম্প, এলন মাস্ক, এমনকি টেইলরসুইফট বা টাইগার উডসের মত তারকা ব্যক্তিরা ব্যক্তিগত বিমান ব্যবহার করেন; বেশিরভাগ ধনী ব্যক্তি কিন্তু প্রাইভেট জেট/প্লেন ব্যবহার করেন না। 

তবে কি তারা সাধারণ মানুষের মতো সাধারণ বিমানে চলাচল করেন? তাও না। ধনী তারকারা সাধারণের জীবন যাপন করেন না। সেই ষাটের দশকে বিটলসের পল ম্যাককার্টনি প্রাইভেট বিমানে দলবল নিয়ে যাতায়াত করতেন। এখনও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। ধনীদের বিমান ভ্রমণের জন্যে সারাবিশ্বে এখন আরও অনেক বেশি বৈচিত্রময় ও তুলনামূলক 'সুলভ' নানা রকম প্যাকেজ।  

তাছাড়া অনেক মাল্টিমিলিয়নিয়ারও চাইলেই কিন্তু গেটস বা ট্রাম্পদের মতো ব্যক্তিগত বিমান কিনতে পারেন না। কারণ ব্যক্তিগত বিমানের লাইসেন্স, ইন্সুরেন্স  জটিলতার বাইরেও, ভাব বা খান্দান দেখানো ছাড়া, মেইনটেইনেন্স খরচ খুব বেশি হওয়ায় অনেক ধনীর সামর্থ থাকলেও তারা ব্যক্তিগত বিমান কেনেন না। কেনেন না তার একটা কারণ তাদের নানা রকম বিকল্প আছে। 

আর ধনী ব্যক্তিরাও তাই  ব্যক্তিগত বিমান ভ্রমণের জন্য আরও হিসাবি বিকল্প উপায় বেছে নিচ্ছেন। এই বিকল্পের নাম চার্টার্ড ফ্লাইট বা চার্টার্ড বিমান। 

 

চার্টার্ড বিমান কী? 

বিমানযাত্রায় নির্দিষ্ট সিটের টিকিটের পরিবর্তে পুরো বিমানটাই নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে ভাড়া নেয়াকে বলে চার্টার্ড বিমান বা এয়ার চার্টার। এয়ার ট্যাক্সি নামেও এগুলো পরিচিত। চার্টার কথাটার আক্ষরিক অর্থে কোনো কিছু ভাড়া নেয়া/কেনা বা নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে ব্যবসায়িক  চুক্তি বা দলিল।  

আপনি একা সিএনজি বা ট্যাক্সি ব্যবহার করে যে যাতায়াত করেন এমনকি ঘন্টা হিসেবে রিকশায় গার্ল/বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে যদি ঘোরেন, সেটাও আসলে এক ধরনের চার্টার্ড সেবাই। সেক্ষেত্রে বলা যাবে চার্টার্ড সিএনজি বা চার্টার্ড রিকশা। 

সাধারণ বিমানের সঙ্গে এই চার্টার্ড বিমানের পার্থক্য হলো যাত্রী তার পছন্দমতো সময়ে যাত্রা করতে পারে। নিজের পছন্দমতো এয়ারপোর্ট ও শহর চুজ করতে পারে। সাধারণ বিমানের চেয়ে চার্টার বিমানের অবতরণের জন্যে এয়ারপোর্টের সংখ্যা অনেক বেশি। তাছাড়া সাধারণ বিমানের বিজনেস ক্লাসের তুলনায় এই চার্টার বিমান অনেক বেশি আরাম-আয়েস ও বিলাসবহুলতার সুযোগ দেয়। 

 

নানা রকম চার্টার্ড ফ্লাইট

নানা ধরণের ব্যক্তিগত বিমানযাত্রা চালু আছে। এর মধ্যে তিন ধরণের চার্টার বিমানসেবা জনপ্রিয়।  

১. আংশিক মালিকানায় বিমান কেনা 
কিছু লোকেরা মিলে একটা বিমান কিনে নির্দিষ্ট সময় ভাগ করে বিমান ব্যবহার। বিমানের ক্ষেত্রে অনেকটা কয়েকজন মিলে নেটফ্লিক্সের একাউন্ট শেয়ার করার মতো ব্যাপার। 

২. জেট কার্ড মেম্বারশিপ প্রোগ্রাম 
যেখানে যাত্রীরা নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে এবং নির্দিষ্ট তারিখের বিমানের ফ্লাইট ভাড়া করে নেয় আগেভাগে।  

৩. অন-ডিমান্ড চার্টারিং 
এই সার্ভিসে আপনি শর্ট নোটিশে প্রাইভেট বিমান ভাড়া করতে পারেন। এই সার্ভিসটা অনেকটা আকাশযাত্রায় উবার টাইপ। বলা বাহুল্য পয়সাওয়ালাদের জন্যে আকাশের উবার।  

 

চার্টার্ড বিমানের ইতিহাস 

বিমান যাত্রার  ইতিহাসের সমান্তরালেই ব্যক্তিগত বিমান ভ্রমণের ইতিহাসে হেটেছে। 

বিমানের ইতিহাসে বিখ্যাত স্টিয়ারম্যান ও চেসনা খুব পরিচিত নাম। আকাশযাত্রার প্রাথমিক যুগে স্টিয়ারম্যান আর চেসনা নানা রকম উদ্ভাবন ও নতুন নতুন চমকের কারণে স্মরণীয় হয়ে আছে। চার্টার বিমানের ইতিহাসেও তাই স্টিয়ারম্যান আর চেসনা পাইওনিয়ার। এরাই প্রথমে ধনীদের জন্যে এই চার্টার বিমান চালু করেছিলো। যদিও  তারা এখান থেকে পরবর্তীতে সরে আসে। তাদের জায়গায় আসে অন্য অনেক কোম্পানির বিমান।

যেমন, ট্রাভেল এয়ারের ডিজাইনার ছিলেন ল্প্যেড স্টিয়ারম্যান আর ক্লাইড চেসনা। ট্রাভেল এয়ারের প্রথম উড্ডয়ন হয় ১৯২৬ সালে। হ্যা আপনি ঠিকই পড়েছেন, ১৯২৬ সালে। কিছুদিনের মধ্যেই বাণিজ্যিকভাবে এটি চালু হয়। ন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট এন্ড রয়্যাল এয়ারওয়েজ -এর নাম দেয় হয় এয়ার টাক্সি প্লেন। 

তবে এই উদ্যোগগুলো অনেক বেশি জনপ্রিয়তা পায়নি ব্যয়বহুলতার কারণে। মাঝে ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই সার্ভিসগুলো বন্ধ থাকলেও বিশ্বযুদ্ধের পরপরই এই খাতে জোয়ার আসে। বিশেষজ্ঞরা সবাই মোটামুটি একমত যে বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী দিনগুলোতেই আসলে চার্টার সার্ভিল পুরোদমে পথ চলতে শুরু করে। কারণ হিসাবে বলা হয়, ২য় বিশ্বযুদ্ধের পরে   অনেক বিমান যাত্রীবিহীন পড়ে থাকতো। বিশেষত যুদ্ধে ব্যবহৃত বিমানগুলো। যেহেতু বিমানে রক্ষণাবেক্ষণের খরচ অনেক, সেই খরচ পুষিয়ে নিতে বিমানমালিকরা ধনীদের ইচ্ছা ও প্রয়োজনমাফিক ভ্রমণের জন্য ভাড়ায় চলা শুরু করে। এই সার্ভিসগুলোর জনপ্রিয়তা দেখে বাজারে আসে অনেকগুলো কোম্পানি যারা চার্টার সার্ভিসের কথা মাথায় রেখেই বিমান নির্মান ও সেবাপ্রক্রিয়া সাজাতে শুরু করে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো  নিত্য নতুন সেবার ও সুযোগ সুবিধা যুক্ত করে চার্টার্ড বিমান যাত্রার ইতিহাসকে বদলে দেয়। বর্তমানে এতো বিচিত্র, নানা অর্থনৈতিক সীমার চার্টার্ড বিমান সারা বিশ্বজুড়ে চালু আছে তা বলে শেষ করা কঠিন। অতিবিত্তবানদের জন্যে আছে অকল্পনীয় সুযোগ সুবিধা সম্বলিত চার্টার্ড বিমান সেবা। 

 

বাংলাদেশে চার্টার্ড ফ্লাইট

এমন না যে শুধু ধনী দেশগুলোতে চার্টার্ড বিমান সেবা চালু আছে। বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশগুলোতেও অনেকগুলো কোম্পানি এই ধরণের সেবা দেয়। দেশে সাধারণত ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও উচ্চবিত্তদের বরযাত্রায় হেলিকপ্টারের বেছে নেওয়া হয় বেশি। এছাড়া ঘুরে বেড়ানো, রোগী বহন ও শুটিংয়ের কাজে এই বিভিন্ন রকম আকাশযান ব্যবহার করা হয়ে থাকে। 

১৯৯৯ সালে বেসরকারি উদ্যোগে প্রথম বাণিজ্যিক হেলিকপ্টার সেবা চালু করে সাউথ এশিয়ান এয়ারলাইনস। বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে বর্তমানে দেশের ৮টি সংস্থা এই সেবা দিচ্ছে। সম্প্রতি শিকদার ভাতৃদ্বয়সহ বেশ কয়েকজন বিত্তবান ও প্রভাবশালী ব্যক্তি চার্টার্ড বিমানে করে কোভিড-১৯ এর মধ্যেও দেশ ছেড়ে বিদেশে যাওয়ায় চার্টার্ড বিমান কথাটি নতুন করে আলোচনায় আসে। 

২৫০২ পঠিত ... ১৯:৪৩, মে ৩০, ২০২০

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top