যে কারণে করোনার সময়েও ত্রাণের চাল চুরির ঘটনায় চেয়ারম্যান-মেম্বারদের গালি দেবেন না

১৩৫২ পঠিত ... ২১:৫২, এপ্রিল ১২, ২০২০

 

এই করোনার মহামারির সময়েও বাংলাদেশে রিলিফ বা ত্রাণের চাল চুরি করছে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান- মেম্বররা। ঘটনা খুবই বিস্ময়কর। কিন্তু স্বাভাবিক।

আমি এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের সিভিল সার্ভিসে চাকরি করেছি। আমার অভিজ্ঞতা হলো সরকারি মাল চুরি করাটা হলো সিস্টেমের অংশ। একা চুরি করা যায় না করে দূর্নীতির দুষ্ট চক্র। আপনি ইচ্ছে করলেও চুরি না করে পারবেন না। যদি চুরি না করেন তবে আপনি পদে পদে বিপদে পড়বেন। সেটা সামলানো খুবই কঠিন।

উপজেলা পর্যায়ে ত্রাণ অফিস আছে। সেখানে কর্মরত আছে উপসহকারী প্রকৌশলী পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা। তার পদবী পিআইও। তিনি একা কাজ করতে পারেন না। তার সব কাজ করতে হয় ইউএনও বা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অধীনে। ইউএনও যেকোনো সরকারি কাজের খবরদারি করার অধিকারি হিসাবে পিআইওর কাছ থেকে একটা অংকের টাকা নেন। সেই টাকার অংশ আবার তার অফিসের ক্লার্ক নেন। এবং ডিসি বা জেলা প্রশাসককেও নির্ধারিত হারে সেই অবৈধভাবে পাওয়া টাকার একটা অংশ দিতে হয় ইউএনওকে। ডিসি আবার কমিশনারকে, কমিশনার আবার সচিবকে দেন।

টাকার আরেকটা অংশ দিতে হয় স্থানীয় এমপিকে। তিনি মন্ত্রীকে দেন। মন্ত্রী হয়তো তার বসকে দেন।

পিআইওর নিজের অফিসের ক্লার্ক টাকার অংশ পান। কারণ তিনিই তো কাগজপত্র তৈরি করেন। পিআইওর উর্ধতনকে দিতে হয়। এভাবে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং মন্ত্রী পর্যন্ত এই টাকার ভাগ যায়।

এরপরে আছে উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিস ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের নানাবিধ অডিট টিম। তাদের জন্য একটা পরিমাণ টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা রাখতে হয় পিআইওকে।

এই টাকাগুলো দিয়েই চেয়ারম্যান মেম্বররা ত্রাণ অফিস থেকে ত্রাণের মাল বরাদ্দপত্র ও গ্রহণের অনুমতিপত্র পান।

ত্রাণের চাল থাকে ফুড গোডাউনে। সেখানে ঘুষ না দিলে ফুড অফিসার ত্রাণের মাল ছাড় করতে ঝামেলা করেন। দেখা যায়, চালের বস্তা ফুটো করে চাল রেখে দেওয়া হয়। বস্তায় ৫০ কেজির জায়গায় ৪০ কেজি চাল থাকে। এজন্য ফুড অফিসারকে, তার ক্লার্ক পিওনকে ঘুষের টাকা দিতে হয় চেয়ারম্যান মেম্বরকে।

এরপর আছে পুলিশ। তাদেরকে টাকা না দিয়ে উপায় নেই। কারণ তারা জানে এই বেচারা চেয়ারম্যান বা মেম্বর নানা ঘাটে ঘুষ দিয়ে দিয়ে ত্রাণের মাল নিচ্ছেন। আবার মাল বিতরণের সময় ইউনিয়ন পরিষদে কর্মরত অন্যান্য লোকজনকে খুশি করতে ভাগ দিতে হবে। দিতে হবে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও মস্তানদেরকেও।

সর্বোপরি চেয়ারম্যান মেম্বার- নিজেদেরও একটা ভাগ রাখার দরকার হয়। ফলে ত্রাণ ১০ কেজির কথা থাকলে ১০ কেজি দেওয়া সম্ভব হবে না। ঘুষ না দিলে চেয়ারম্যান মেম্বরকে আটক করে ফেলতে পারে পুলিশ। ফলে পুলিশ ও দূর্নীতি দমন অফিসকে টাকা না দেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। সর্বোপরি সাংবাদিক ভাইদেরও খুশি করা লাগে। নইলে খবর আছে।

সো, ভাইলোক, যারা এই দুর্যোগেও চেয়ারম্যান মেম্বরগণ ত্রাণের চাল চুরি করছেন বলে অবাক হচ্ছেন, গালি দিচ্ছেন, তাদেরকে বলি- অবাক হওয়ার কিছু নেই। বাংলাদেশের সরকারের তৃণমূল থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে যে দূর্নীতির জাল ছড়ানো আছে, তার অংশ হিসেবে তাদেরকে চুরি-চামারি করা ছাড়া উপায় থাকে না।

১৩৫২ পঠিত ... ২১:৫২, এপ্রিল ১২, ২০২০

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top