বেলজিয়ান অরণ্যে যে দৈত্যাকার ‘ট্রোল’ আপনাকে চমকে দিতে পারে

৬৩৯ পঠিত ... ১৯:২৫, ডিসেম্বর ০৫, ২০১৯

হয়তো এক ছুটির সকালে আপনি হাইকিং এ বেরিয়েছেন বেলজিয়ামের এই জঙ্গলে। অনেকদূর হেঁটে এসে ক্লান্ত হয়ে এক ঘাসের চাদরে এলিয়ে দিয়েছেন গা, এমন সময় দেখলেন জঙ্গলে সারি সারি পাইন গাছের পাতার আড়াল থেকে সলজ্জ্বে উঁকি দিচ্ছে এক বিশাল বাদামি দৈত্য। ভয় পাবেন না কিন্তু, তাকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এই দৈত্যাকার ‘ট্রোল’ আর তার সাত বন্ধু বহুকাল ধরেই বাস করছে এ তল্লাটে। বেলজিয়ান আর্টিস্ট থমাস ডাম্বোর ফেইরিটেল প্রোজেক্ট ' দ্য সেভেন ট্রোলস অ্যান্ড দ্য ম্যাজিকাল টাওয়ার' এর অধীনেই এই সুবিশাল সাত ট্রোলরূপী সুবিশাল ভাস্কর্যের দেখা মিলেছে ইউরোপের এসব জঙ্গলে (এই ট্রোল মানে কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ার 'ট্রল করা' না, 'ট্রোল' বলতে বুঝায় প্রাচীন স্ক্যান্ডিনেভিয়ান লোকগল্পের অতিপ্রাকৃত জাদুকরী ক্ষমতা অধিকারী বিশালদর্শন ভৌতিক প্রাণিবিশেষ)।

তার আগে চলুন পড়ে ফেলা যাক একটি রূপকথা-

‘অনেক অনেক কাল ধরে, এই পৃথিবীর ভীষণ সব অরণ্যে ঘুরে বেড়াতো সাত বন্ধু। দৈত্যাকার এই সাত ট্রোল একেকজন পাইন গাছের চেয়েও উঁচু, তবে দৈত্যাকার হলেও তারা কিন্তু ভারি মিশুক। বাহারি নাম তাদের একেকজনের। কেউ ঘাসে শুয়ে থাকতে ভালোবাসে, কেউ পছন্দ করে মুখোশ বানাতে, আবার কারো কাছে মালা গাঁথাটাই খুব প্রিয় কাজ। বহু বহু বছরে বহু সভ্যতার ভাঙা গড়া, বহু পাহাড়-পর্বত-সাগর-মরুভূমির তৈরী ধ্বংস সবটাই আপন চোখে দেখা এই সাত বন্ধু একদিন খেয়াল করলো, পৃথিবীতে খুব ছোট ছোট আর ভীষণ বুদ্ধিমান এক প্রাণী ঘুরে ফিরে বেড়াচ্ছে, তারা মানুষ। এই ছোট মানুষদের বড় বুদ্ধি যেন আবার বিপদ ডেকে না আনে, সেজন্য সেই সাত ট্রোল এক পর্বতচূড়ায় তৈরি করলো একটা ম্যাজিক টাওয়ার। যেন মানুষেরা সেই টাওয়ারে উঠে সারা পৃথিবী আর আকাশ দেখে বুঝতে পারে যে, পুরো পৃথিবীর সবাই যে আসলে একই প্রাণ। তারা যেন বুঝতে পারে, বহু বহু বসন্ত দেখে আসা বুড়ো এই পৃথিবী আরও বহু বসন্ত দেখে যাবে, আর পৃথিবীর এই অতীত আর ভবিষ্যৎ বুঝতে পেরে মানুষেরাও যেন এই পৃথিবী আর প্রকৃতির সাথে আরও নিবিড় হয়।’

ছোটবেলা থেকে রূপকথার পাঁড় ভক্ত থমাস ডাম্বো নিজে লিখেছেন এই রূপকথা। ছড়ায় ছড়ায় তিনি একটি বার্তা পৌঁছে দিতে চেয়েছেন সবার কাছে । কিশোর বয়সে নিয়মিত র‍্যাপিং করার অভিজ্ঞতা থেকে র‍্যাপ ভার্সে তুলে এনেছেন এই জাদুর দুনিয়া। আর এই মিথের উপর ভিত্তি করেই ট্রোলরূপী ভাস্কর্য তৈরির প্রজেক্ট হাতে নেন থমাস।

আর্টিস্ট থমাস ডাম্বো, ছোটবেলা থেকেই যিনি রূপকথার পাঁড় ভক্ত!

নিজেকে তিনি পরিচয় দেন রিসাইকেল আর্টিস্ট হিসাবে। বিভিন্ন কাঠের দোকানের ফেলে দেওয়া কাঠের তক্তা, কাঠের বেড়া, ব্যবহার অযোগ্য ফার্নিচার ইত্যাদি থেকেই তিনি গড়ে তুলেছেন এতোগুলো ট্রোলের অনিন্দ্যসুন্দর ভাস্কর্য। ২৩ থেকে ৫৯ ফিট উঁচু একেকটা ট্রোল বানাতে ডাম্বো আর তার দলের ১৫ জনের সময় লেগেছে ২৫ সপ্তাহ।

থমাস চান, মানুষ যেন তাদের ছোট ছোট স্ক্রিন থেকে চোখ ফিরিয়ে অরণ্যের দিকে তাকায়, সবুজের দিকে তাকায়। তাই প্রযুক্তিতে বুঁদ মানুষকে আবারও অরণ্যের সৌন্দর্যে ভুলাতে থমাসের এই প্রজেক্ট। ইতোমধ্যে অসংখ্য প্রশংসা কুড়িয়েছে থমাসের এই প্রজেক্ট। আমাদের লেখকদের মধ্যে সবচেয়ে অরণ্যপ্রেমী বিভূঁতিভূষণ বোধহয় খুব খুশি হতেন থমাসের এই চেষ্টা দেখে, কে জানে, বেলজিয়ামের এই অরণ্য নিয়ে হয়তো একটা বইও লিখে ফেলতেন!

 

৬৩৯ পঠিত ... ১৯:২৫, ডিসেম্বর ০৫, ২০১৯

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top