ঢাবির প্রথম ভিসি ফিলিপ জোসেফ হার্টগ সম্পর্কে যে ৯টি তথ্য আপনি নাও জানতে পারেন

২১৭১ পঠিত ... ০৩:২০, ডিসেম্বর ০৫, ২০১৯

আগামী ৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫২তম সমাবর্তন। কনভোকেশন নিয়ে শিক্ষার্থীদের চঞ্চলতাও শুরু হয়ে গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে কিছু জানতে হলে যে কয়েকজন ব্যক্তির নাম জানতেই হয়, স্যার ফিলিপ জোসেফ হার্টগ তাঁদের মধ্যে অন্যতম। তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য। শীর্ষ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখন চলছে এক ভিসিত্র পরিস্থিতি! এই ভিসিত্র সময়ে চলুন জেনে নেয়া যাক, ঢাবির প্রথম ভিসি কেমন ছিলেন (চাইলে এখনকার ভিসি স্যার-ম্যাডামরাও লেখাটি পড়তে পারেন)। দেখুন তো, ঢাবির প্রথম ভিসিকে নিয়ে এই ৯টি তথ্য জানতেন কিনা? জলদি টুকে রাখুন, বিসিএস তো সামনেই!

১# দক্ষিণ এশিয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়, যার প্রথম উপাচার্য হার্টগ ছিলেন তাঁর সময়ের কমনওয়েলথ দেশগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংগঠক।

২# ঢাকা শহরে হার্টগ দম্পতির কোনো আত্মীয়স্বজন বা বন্ধু ছিল না। তাঁরা ধর্মীয় পরিচয়ে ছিলেন ইহুদি। এখানে তাঁদের কোন উপাসনালয় ছিল না। সেই নিঃসঙ্গতা তাঁরা ভরিয়ে দিয়েছিলেন কর্মব্যস্ততা দিয়ে। পাঁচটি বছর হার্টগ দিনে অন্তত ১৮ ঘন্টা কাজ করতেন বিশ্ববিদ্যালয়কে গড়ে তুলতে।

৩# তাঁর জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল 'গভর্নমেন্ট হাউস' (বর্তমান উপাচার্যের ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছিল 'পূর্ববঙ্গ ও আসাম' প্রদেশের গভর্নরের বাসভবন হিসেবে), কিন্তু তিনি সেই রাজকীয় প্রাসাদে থাকতে অস্বীকৃতি জানান এ জন্য যে তা নির্মীয়মাণ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে দূরে।

৪# ছাত্ররা ঠিকমতো ক্লাসের লেকচারে উপস্থিত থাকেন কি না সে খোঁজ নিতেন তিনি। হাজিরা খাতা দেখতেন। এই প্রশ্নে তিনি কঠোর ছিলেন। বিশেষ করে, বিজ্ঞানের ছাত্ররা ক্লাস না করলে তিনি তাঁদের পরীক্ষা দিতে দিতেন না। ১৯২২ এবং ২৩ সালে অনেক ছাত্র পরীক্ষায় অকৃতকার্য হন। এ নিয়ে কথা উঠলে তিনি নমনীয় হতে অস্বীকার করেন। ১৯২৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় সমাবর্তন ভাষণে তিনি বলেন: We have not hesitated to maintain a high examination standard from the first and we shall not hesitate to maintain it.

৫# সন্ধ্যারাতেই তিনি খাওয়াদাওয়া সেরে নিতেন। তারপর বের হতেন ঢাকা হলে বা অন্য কোনো হলে ছাত্ররা কী করছেন দেখতে। ছাত্রদের টেনিস ও ভলিবল খেলা উপভোগ করতেন। নিজে টেনিস খেলায় অংশ নিতেন অন্য শিক্ষকদের সঙ্গে।

৬# বাঙালি নারীর উচ্চশিক্ষাকে তিনি খুবই গুরুত্ব দিতেন। ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ সুরেন্দ্রনাথ মৈত্রের মেয়ে উমা মৈত্র ছিলেন খুবই মেধাবী। তাঁর ইচ্ছা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার, কিন্তু কোনো বিশেষ বিষয়ে নয়। বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস সব বিষয়ে তাঁর আগ্রহ। হার্টগ তাঁকে অনুমতি দেন, যেকোনো ক্লাসেই তিনি উপস্থিত থেকে লেকচার শুনতে পারবেন।

৭# তেজগাঁওয়ে যে কৃষি কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়, যা থেকে এলাকাটির নামকরণ হয় ফার্মগেট, তা হার্টগের সুপারিশেরই বাস্তবায়ন। সরকারকে তিনি বুঝিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ঢাকায় একটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন। বর্তমানের যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ, এটিও স্যার ফিলিপ হার্টগের পরিকল্পনার ফসল। আজ বাংলাদেশে অনেকগুলো কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কৃষি গবেষণার উচ্চতর প্রতিষ্ঠান রয়েছে--এসব কিছুরই সূচনা করেছিলেন এক ভিনদেশি স্বপ্নদ্রষ্টা ফিলিপ হার্টগ।

৮# তিনি স্টেটসম্যানসহ কয়েকটি ইংরেজি দৈনিক ও সাময়িকী রাখতেন। অন্য সবার টাকা পরিশোধ করে গেলেও স্টেটসম্যান-এর টাকা পাওনা থেকে যায় ভুলে। ১৯২৫ সালের ১৮ মে থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত ৫ টাকা ৪ আনা বকেয়া ছিল। সেই টাকা লন্ডন থেকে তিনি উপাচার্য ল্যাংলির কাছে পাঠিয়ে দেন স্টেটসম্যান-এর স্থানীয় এজেন্টকে বুঝিয়ে দিতে।

৯# বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চলে গিয়ে তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়কে ভুলে যাননি। তিরিশ ও চল্লিশের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক যাঁরাই লন্ডনে গেছেন, তিনি তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা জানতে চেয়েছেন।


তথ্যসূত্র: স্যার ফিলিপ হার্টগ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য, সৈয়দ আবুল মকসুদ।

২১৭১ পঠিত ... ০৩:২০, ডিসেম্বর ০৫, ২০১৯

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top