কাজী নজরুল ইসলামের ‘বিদ্রোহী’ কবিতা তখন সদ্য প্রকাশ পেয়েছে। বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চারদিকে কবিতাটির জয়জয়কার। সবাই উচ্ছ্বসিত কবিতাটি নিয়ে। একমাত্র অসন্তুষ্ট কবি মোহিতলাল মজুমদার। সর্বত্র তিনি প্রচার করে বেড়াচ্ছিলেন, ‘বিদ্রোহী’ আদতে তাঁর ‘আমি’ শীর্ষক একটি ব্যক্তিগত রচনার পদ্যরূপ মাত্র। একদিন সন্ধ্যায় সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, হেমেন্দ্রকুমার রায়, নলিনীকান্ত সরকারসহ আরও কয়েকজন সাহিত্যিক মিলে আড্ডা দিচ্ছিলেন। মোহিতলাল সেখানে হঠাৎ হাজির হয়ে নজরুল কীভাবে তাঁর লেখা ‘মেরে দিয়েছেন’ তা বয়ান করতে শুরু করেন। বিশেষ করে তাঁর নিবন্ধের দুটি শব্দের কথা তিনি বললেন, ‘শব্দ দুটি হচ্ছে “মহামারী” আর “উন্মাদ”। আমার রচনার ওই দুটি শব্দ আছে নজরুলের “বিদ্রোহী”র মধ্যে। বলুন আপনারা এ চুরি কি না?’
বিরক্ত নলিনীকান্ত সরকার হঠাৎ বলে বসলেন, ‘ও রকম চুরি রবীন্দ্রনাথের লেখাতেও আছে!’ এ কথায় সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত চটে গিয়ে বললেন, ‘কোথায় দেখলেন আপনি?’ নলিনীকান্ত বললেন, ‘ঐ খ্যাপা শ্রাবণ ছুটে এলো আশ্বিনেরি আঙিনায় গানটি রবীন্দ্রনাথের চুরি।’
সত্যেন্দ্রনাথ রাগে চোখ লাল করে ফের বললেন, ‘কোত্থকে চুরি করেছেন?’
নলিনীকান্ত বললেন, ‘গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা থেকে। ওর মধ্যে শ্রাবণ আর আশ্বিন দুটো শব্দই আছে।’ সত্যেন্দ্রনাথসহ বাকিরা এবার হেসে উঠলেন। আর মোহিতলাল হয়ে পড়লেন গম্ভীর।
[তথ্যসূত্র: শতদল গোস্বামীর ‘সাত পুরুষের রম্য জগৎ’]
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন