কোকাকোলা যেভাবে মার্টিন লুথার কিং-এর জন্য 'হ্যাপিনেস' নিয়ে এসেছিল!

৮২৬ পঠিত ... ১৬:১৬, জানুয়ারি ১৫, ২০১৯

আমেরিকায় অহিংস বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের জন্য ১৯৬৪ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছিলেন আটলান্টার সন্তান মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র। পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্র্যান্ড কোকাকোলার সদর দপ্তরের জন্যেও এই শহর বিখ্যাত। নোবেলজয়ীর সাথে কোকাকোলার কথা টেনে আনার কারণটা বলছি, শুনুন।

গত শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ের কথা। তখনো পশ্চিমা বিশ্ব বিশেষ করে আমেরিকায় বর্ণবাদ বেশ গুরুতর অবস্থায়। পাবলিক বাসে কৃষ্ণাঙ্গদের বসতে হতো একেবারে শেষ দিকে। কোন শ্বেতাঙ্গ দাঁড়িয়ে থাকলে তার জন্য সিট ছেড়ে উঠে দাঁড়াতে হতো। অ্যালাবামা রাজ্যের মন্টগোমরি শহরে একদিন রোজা পার্কস নামক এক কৃষ্ণাঙ্গ নারী একজন শ্বেতাঙ্গের জন্য সিট ছেড়ে দাঁড়াতে অস্বীকৃতি জানালেন। গ্রেফতার হতে হলো তাকে। ব্যস, সেখানকার কৃষ্ণাঙ্গরা সিদ্ধান্ত নিলেন বাস বয়কটের। আর এই অহিংস প্রতিবাদের সম্মুখভাগে ছিলেন আটলান্টায় জন্ম নেওয়া তরুণ মার্টিন লুথার কিং।

বর্ণবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ছিলেন সবসময়। তারই ফলস্বরূপ নোবেল শান্তি পুরস্কার পেলেন তিনি। এই আনন্দে নিজ তার জন্মস্থান আটলান্টায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো ঘরের ছেলেকে সম্মান জানানোর জন্য একটি ভোজের আয়োজন করা হবে। শহরের একজন মানুষের এত বড় প্রাপ্তিতে স্বভাবতই সবার উচ্ছ্বসিত হবার কথা। কিন্তু বেঁকে বসলেন আটলান্টার বড় ব্যবসায়ীরা। সংবর্ধনার বিষয়টাকে নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি তারা প্রায় সবাইই এতে অংশগ্রহণে অস্বীকৃতি জানায়। তাদের ভয় ছিল পুরো ব্যাপারটি হয়ত তাদের ব্যাবসার ক্ষেত্রে ভালো প্রভাব ফেলবে না। তখনো আমেরিকায় বর্ণবাদ বেশ শক্তিশালী অবস্থানেই ছিল।

যারা এই সম্মানে ভোজের আয়োজন করেছিলেন, তারা পরে গেলেন মহাবিপদে। শহরের হর্তাকর্তা প্রতিষ্ঠানগুলোর এমন বৈরী আচরণের পর সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আদৌ আয়োজন সম্ভব? তাই বলে কি মার্টিন লুথার কিং-এর নোবেল পুরষ্কার প্রাপ্তি নিয়েও কিছু করা হবে না? কোন কূলকিনারা না করতে পেরে শেষে তারা চিঠি লিখলেন শহরের সবচেয়ে (ততদিনে বিশ্বেও কোকাকোলার নামডাক ছড়িয়ে পড়েছে) প্রভাবশালী কোম্পানীর কাছে। কোকাকোলা কোম্পানির ব্যারন রবার্টের কাছে পাঠানো চিঠিতে অনুরোধ করা হয়েছিল, তিনি যেন তার প্রভাব খাটিয়ে কিছু একটা করেন।

তারা কোনো সাড়া না পেয়ে আবার চিঠি পাঠান আয়োজকরা। চিঠিটা ব্যারন সাহেবের কাছে যেদিন পৌঁছায় সেদিনই খবরের কাগজে ছাপা হয়েছিল সংবর্ধনা নিয়ে সৃষ্ট সংকটের খবর। ব্যারন রবার্ট দেখলেন যে, বিষয়টি তার শহর ও কোকাকোলা উভয়ের জন্য লজ্জাজনক।  

আটলান্টার মেয়র অ্যালেন ও কোকাকোলার চেয়ারম্যান পল অস্টিন সকল ব্যবসায়ীদের নিয়ে বসলেন। অ্যালেন ঘোষণা দিলেন, যারা যাবে না, তাদের নাম তিনি নোট করে রাখবেন। কিন্তু বিস্ফোরক ঘোষণাটা এলো পল আস্টিনের কাছ থেকে। তিনি বললেন 'নোবেলজয়ীকে সম্মান দিতে চায় না, এমন শহরে কোকাকোলার হেডকোয়ার্টার থাকাটা লজ্জার। আমাদের ব্যবসা বিশ্বব্যাপী। আটলান্টা শহরের জন্য কোকাকোলার দরকার আছে কি না জানি না কিন্তু কোকাকোলার জন্য আটলান্টার কোন প্রয়োজন নেই। আপনারা সিদ্ধান্ত নিন, এই শহরে কোকাকোলা থাকবে কি থাকবে না!’

অত বড় একটা প্রতিষ্ঠান শহর থেকে চলে গেলে অন্য ব্যবসায়ীদের ক্ষতিটাই আসলে বেশি হবে। তাই কথাটা কাজ করে ম্যাজিকের মতো। যে অনুষ্ঠানের আয়োজন নিয়েই এতো অনিশ্চয়তা ছিল পলকেই সেটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়ে। মাত্র দুই ঘন্টার ভিতরেই সব টিকেট বিক্রি হয়ে যায়। ২৭ জানুয়ারী, ১৯৬৫ সালে ১৫০০ মানুষ যোগ দেয় মার্টিন লুথার কিং এর সম্মানে আয়োজন করা সেই ভোজে!

৮২৬ পঠিত ... ১৬:১৬, জানুয়ারি ১৫, ২০১৯

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top