বিশ্বজুড়ে অদ্ভুত সব নির্বাচনী ইশতেহার!

১৪৪৫ পঠিত ... ১৭:৪২, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৮

নির্বাচনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবার পাশাপাশি ইশতেহার একটি জাদুকরী ব্যাপার। আপনি যে দল বা প্রার্থীর ইশতেহারই পড়ুন না কেন, আপনার সবাইকেই ভোট দিতে ইচ্ছা করবে। আবার মেয়াদ শেষে আপনি ইশতেহার নিয়ে মেলাতে গেলে সংকটে পড়ে যেতে পারেন। ইশতেহার কিংবা অঙ্গীকার যাই বলি না কেন, পৃথিবীজুড়েই নির্বাচনের আগে সকল দল এবং প্রার্থী ইশতেহার এবং নির্বাচনী অঙ্গীকার করে থাকেন। সব ইশতেহারই কমবেশি সাইন্স ফিকশন মুভি আর ইউটোপিয়ান সমাজের একটা মিশেল। তবে তার মাঝেও কেউ কেউ অদ্ভুত সব অঙ্গীকার করে বসেন, কোন কোন দলের ইশতেহারে থাকে অভাবনীয় সব কথাবার্তা। বিশ্বজুড়ে এমনই কিছু অদ্ভুত নির্বাচনী ইশতেহারের গল্প থাকছে আপনাদের জন্য।

 

১# চাঁদের বুকে বানাব তোমাদের বাড়ি

নিউট গিংগ্রিচ ছিলেন আমেরিকান রিপ্রেজেন্টেটিভ হাউজের স্পিকার। সেই কাজ থেকে অবসর নিয়ে একটা সময় তিনি রিপাকলিকান রাজনীতি শুরু করেন। ২০১২ সালের আমেরিকান প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী হবার দৌড়ে তিনি বেশ জোরেশোরেই ছিলেন মিট রমনির প্রতিপক্ষ হিসেবে। তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট ছিল কি না তা জানা না গেলেও একটি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল, তিনি আমেরিকান প্রেসিডেন্ট হলে ২০২০ সাল নাগাদ চাঁদে আমেরিকান কলোনি তৈরি করে দিবেন তিনি।

চাঁদের স্বপ্ন দেখিয়েও লাভ হয়নি। প্রেসিডেন্ট হওয়া তো দূরের কথা, মিট রমনির কাছে হেরে গিয়ে সেই নির্বাচন পর্যন্তও যাওয়া হয়নি নিউটন লিরয় গিংগ্রিচের।

২# ব্যবসায়ী মাত্রই ক্লাউন! 

 

সান ফ্রান্সিসকোর এক ব্যান্ড ‘ডেড কেনেডিস’-এর ভোকাল জেলো বায়াফ্রা হতে চেয়েছিলেন শহরটির মেয়র। ১৯৭৯-৮০ সালের মেয়র নির্বাচনে তার ছিল এক অদ্ভুত প্রতিশ্রুতি। তিনি নির্বাচিত হলে, সান ফ্রান্সিসকোর সকল ব্যবসায়ীর জন্য ক্লাউনের পোশাক পরার নিয়ম করা হবে। এমন অদ্ভুত প্রতিশ্রুতির ফলাফল একেবারে খারাপ কিছু ছিল না। দশজন প্রতিদ্বন্দ্বীর মাঝে চতুর্থ হয়েছিলেন তিনি। সাড়ে তিন শতাংশ ভোটও তিনি পেয়েছিলেন। এই সাড়ে তিন পার্সেন্ট লোকজন নিশ্চয়ই ব্যবসায়ী ছিলেন না। 

৩# লেটস বিল্ড দ্য ওয়াল এগেন! 

২০১৭ সালের জার্মান সাধারণ নির্বাচনে ডাই পার্টেই (দ্য পার্টি) নামের এক রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল আমূল পরিবর্তনের কথা বলে। পরিবর্তনটা সত্যিতেই অদ্ভুত ছিল। তাদের প্রতিশ্রুতি ছিল তারা নির্বাচিত হলে, আবারও বার্লিন দেয়াল বানানো হবে। দেয়ালের পুরো খরচ নেওয়া হবে পূর্ব জার্মানির কাছ থেকেই। শুধু তাই নয়, প্রয়োজনে একটি মিথ্যা ক্যু-ও মঞ্চায়িত করা হবে।

৪# লক্ষ্য যখন উদোম হওয়া

২০১৭ জার্মানি সাধারণ নির্বাচনে এক ছোটখাটো বামপন্থী দলের প্রার্থী গ্রেগর গিসি করে বসেন এক অদ্ভুত প্রতিশ্রুতি। তার নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল জার্মানিতে ‘ন্যুডিজম’ বা নগ্নতা ফিরিয়ে নিয়ে আসার। গ্রেগর গিসি বলেছিলেন তিনি স্থানীয় সব প্রতিনিধির সাথে কথা বলে ‘ন্যুডিজম’-এর ব্যাপারটা নিশ্চিত করবেন। তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, তিনি নিজেও কি ‘ন্যুডিজম’ বৈধ করা হলে সর্বত্র নগ্ন হয়ে ঘুরবেন কি না! তার উত্তর ছিল ‘সবকিছুরই নিশ্চয়ই সীমা আছে। আমি এই চর্চা আমার নিজ বাড়িতেই করব।’

৫# সবুজ সড়কের অঙ্গীকার

১৯৭০ সালে আমেরিকার কলোরাডো রাজ্যের পিটকিন কাউন্টির শেরিফ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন হান্টার থম্পসন। তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল, অ্যাসপেন নামক শহরের রাস্তা একেবারে ভেঙে গুড়িয়ে ফেলবেন। ভাবছেন, এই ধ্বংস কীভাবে প্রতিশ্রুতি হয়? হান্টার থম্পসনের অঙ্গীকার ছিল, রাস্তার সব পাথর আর পিচ উঠিয়ে তাতে ঘাসের টার্ফ লাগিয়ে দিবেন। নগরের যাপনে সবুজের ছোঁয়া দিতে যেন বদ্ধপরিকর ছিলেন তিনি। আর এই তুলে ফেলা পাথর দিয়ে কী হবে? এই পাথর দিয়ে হবে শহরের বাইরে বিরাট বড় এক পার্কিং লট।

৬# আমাকে ছিপছিপে দেখতে চাও? তাহলে আমাকে ভোট দাও! 

১৯৮৬ সালে আমেরিকার ইলিনয় রাজ্যের কম্পট্রলার পদের নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী অ্যাডেলিন জে. জিও-ক্যারিস নির্বাচনী ক্যাম্পেইনে অভাবনীয় এক প্রতিশ্রুতি করেন। তার প্রতিশ্রুতি ছিল, নির্বাচিত হলে তিনি ৫০ পাউন্ড ওজন কমিয়ে ফেলবেন। ভদ্রমহিলার যুক্তি ছিল, ওজন কমে গেলে আরও সহজে তিনি বিভিন্ন রাজ্যে যেতে পারবেন এবং অন্যান্য রাজ্যের ব্যবসায়ীদেরকে ইলিনয়ে ব্যবসা করতে আসতে উদ্বুদ্ধ করতে পারবেন।

ইলিনয়ের মানুষজন অবশ্য এসবে খুব একটা আশ্বস্ত হয়নি। ৫০ পাউন্ড ঝরিয়ে ফেলা কি মুখের কথা? তাও বয়স যখন ৬৮! ফলে অ্যাডেলিন জিততে পারেননি।

 

১৪৪৫ পঠিত ... ১৭:৪২, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৮

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top