১৯৯১ সালের ঘটনা। লন্ডনের স্যান্ডউইচ শহরের একটি গবেষণাগার--নাম 'ফাইজার'। গবেষক ইয়ান অস্টেরল খুব উত্তেজনাকর একটি সময় পার করছেন সেই গবেষণাগারে। তার অনেকদিনের পরিশ্রম সফলতার মুখ দেখেছে। তিনি উচ্চ রক্তচাপ এবং বুক ব্যথার (অ্যানজাইনা পেকটরিস) একটি নতুন ওষুধ আবিষ্কার করে ফেলেছেন।
তিনি দেখেছেন যে নতুন এই ওষুধটি কাজ করবে ভ্যাসোডায়ালেটর হিসেবে। রক্তনালীর উপর কাজ করে ওষুধটি নালীকে প্রসারিত করবে এবং রক্তচাপ কমে যাবে। একই প্রক্রিয়ায় ওষুধটি বুক ব্যথাও কমিয়ে ফেলতে পারবে।
আবিষ্কারের কিছুদিন পরেই লন্ডনের একটি হাসপাতালে পরীক্ষামূলকভাবে ওষুধটি দেয়া হলো। ইয়ান অস্টেরল খুব আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় থাকলেন ওষুধটির প্রভাব জানার জন্য।
এক মাস গেলো। ওষুধের ফলাফল নিয়ে বসলেন ইয়ান অস্টেরল। যা দেখলেন সেটার জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিলেন না ইয়ান। তিনি দেখলেন, এই ওষুধটি বুক ব্যথা বা উচ্চ রক্তচাপে খুব একটা কাজ করছেনা। কাজ করছে অন্য যায়গায়--যাদের ইরেকটাইল ডিসফাংশন ছিলো, দেখা গেলো এই ওষুধটি খাওয়ার পর তাদের আর ওই সমস্যাটি থাকছেনা।
মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লেন ইয়ান অস্টেরল। ওষুধ এ কী কাজ করলো! তিনি কি এটা চেয়েছিলেন!
পরীক্ষা-নিরীক্ষা চললো আরো কিছুদিন। দেখা গেলো বিষয়টা আসলেই ওইরকম। রক্তচাপ কমাচ্ছেনা, কিন্তু ইরেকটাইল ডিসফাংশনে চমৎকার কাজ করছে। ইরেকটাইল ডিসফাংশনের জন্য এর আগে যতো ওষুধ চেষ্টা করা হয়েছে এটি কাজ করছে ওগুলোর চেয়েও চমৎকারভাবে।
এর আগে যতো যতো ওষুধ বের হয়েছে সেগুলোর সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিলো--কাজ করতো খুব আস্তে আস্তে। দেখা যেতো কেউ ওষুধ খেলো বুধবারে, কাজ করলো পরের দিন বিকালের দিকে! কিন্তু ইয়ানের ওষুধটি কাজ করতে লাগলো খুব দ্রুত!
ওষুধটির নাম হচ্ছে 'সিলডেনাফিল সাইট্রেট'। আমরা যেটাকে চিনি 'ভায়াগ্রা' নামে।
ইয়ান অস্টেরল রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনের কয়েকটি ওষুধ উদ্ভাবনে অবদান রেখেছেন। কিন্তু তিনি বিখ্যাত হয়ে আছেন ভায়াগ্রা আবিষ্কারের জনক হিসেবে। সিলডেনাফিল নিয়ে তার প্রতিক্রিয়া ছিলো এরকম, 'আমি তাজ্জব হয়ে গিয়েছিলাম আসলে। ভাবিনি, এমন একটি ওষুধ আবিষ্কার করে বসবো যেটির সাইড ইফেক্ট পুরো পৃথিবীতে আলোড়ন তৈরী করে ফেলবে!'
১৯৯৮ সালের ২৭ মার্চ এফডিএ (ইউএস ফুড এন্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন) সিলডেনাফিলকে ইরেকটাইল ডিসফাংশন'এর ওষুধ হিশেবে অনুমোদন দেয়। বর্তমানে এটি পৃথিবীতে সবচেয়ে বিক্রি হওয়া ওষুধগুলোর একটি।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন