সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের আপোষহীন প্রতীক খালেদার বেঁচে থাকার প্রয়োজন রয়েছে

৪১৬ পঠিত ... ১৬:০৯, নভেম্বর ৩০, ২০২৫

খালেদা জিয়া অসুস্থ; তার শারীরিক অবস্থা সংকটজনক। দল-মত-নির্বিশেষে মানুষ তার সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করছে। এই ভালোবাসা তিনি অর্জন করেছেন সার্বভৌমত্বের প্রসঙ্গে আপোষহীন থেকে। যে কারণে বাংলাদেশের মানুষ খালেদা জিয়াকে আপোষহীনতার প্রতিশব্দ হিসেবে গ্রহণ করেছে।

চব্বিশের ৫ অগাস্টের পর ফেসবুকে যে নতুন বিএনপির বুদ্ধিজীবীদের আবির্ভাব ঘটল; দেশের সাধারণ মানুষের খালেদা জিয়ার জন্য ভালোবাসা থেকে তাদের ভালোবাসার পার্থক্য আছে। দেশের সাধারণ মানুষ খালেদা জিয়াকে ভালোবাসে নিঃস্বার্থভাবে। কিন্তু বিএনপির নতুন বুদ্ধিজীবীদের খালেদা জিয়ার প্রতি ভালোবাসার মূল্য চুকাতে হবে অর্থমূল্যে।

এই ঘটনা আমরা আগেও দেখেছি। দেশের সাধারণ মানুষ মুক্তিযুদ্ধকে স্মরণ করেছে; আত্মপরিচয় আর সার্বভৌমত্বের প্রতীক হিসেবে। কিন্তু ২০০৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগের নতুন বুদ্ধিজীবীদের আবির্ভাব ঘটে; তারা মুক্তিযুদ্ধের প্রতি তাদের ভালোবাসা অর্থমূল্যে তুলে নিয়ে গেছে। দেশের যে সাধারণ মানুষেরা শেখ মুজিবের পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তির জন্য রোজা রেখেছিলো; তাদের সে শুভ প্রত্যাশা ছিলো মুক্তি সংগ্রামের নেতাকে মুক্ত দেখবার নিঃস্বার্থ আকাংক্ষা। কিন্তু বঙ্গবন্ধু পূজার অর্ঘ্য সাজিয়ে যারা শব্দের মালা গেথেছে; তারা দেশলুন্ঠন করে সেসব স্তুতি অর্থমূল্যে তুলে নিয়েছে।

যে শ্রদ্ধা কিংবা ভালোবাসার মাঝে পার্থিব চাওয়া পাওয়ার হিসাব মিশে থাকে; সেটা কোন ভালোবাসা নয়। ঐ বঙ্গবন্ধু পূজা ছিলো স্বার্থপর শব্দ ও বাক্যের ব্যবসা। সেই প্রয়োজনে বঙ্গবন্ধু প্রতীককে ঘিরে ফ্যাসিজমের বিনির্মাণ। বঙ্গবন্ধুর ছবি অংকিত পকেট পিন লাগিয়ে সোয়াসটিকা অংকিত পিন লাগানো নাতসিদের মতো তারা ২০০৯-২৪ (৫ অগাস্ট সকাল) পর্যন্ত সাধারণ মানুষের জীবনের শুল্ক নিয়ে গেছে। সুন্দর সুন্দর শব্দের মানুষেরা কতটা অনুশোচনাহীন নৃশংস নরভোজি হতে পারে তার প্রমাণ ফেসবুকের পাতায় পাতায় রয়েছে।

বাংলাদেশের যে সম্পন্ন কৃষকের গৃহ জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু শ্লোগানের যুবলীগের আগুনে পুড়েছে; বাংলাদেশ জিন্দাবাদ, খালেদা জিয়া জিন্দাবাদ শ্লোগানের সিঁদুরে মেঘ দেখলে সে ভয় পায়; ঐ বুঝি স্বেচ্ছাসেবক দলের যুবাটি কিশোরী কন্যাকে জোর করে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসছে। ঐ বুঝি যুবদলের ছেলেটা এবারের ফসলের জিজিয়া কর নিতে আসছে। নিজেকে ঐ অসহায় ভ্যানচালক বা কৃষকের অসহায় বেঁচে থাকার বাস্তবতা দিয়ে ভাবলে; তবেই অনুভব করা যাবে; কিভাবে ভয়ের রাজনীতির মর্মন্ততদ বাস্তবতায় বেঁচে থাকে ছোটখাট মানুষ।

দাড়ি টুপিওয়ালা ধার্মিক মৌলানা ও তার সামনে বসে থাকা তৌহিদি জনতা যখন খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করছেন; তখন ভয়ের প্রতীক তৈরি হচ্ছে। ওলামা লীগ থেকে ওলামা দলে রুপান্তরের রঙ্গমঞ্চ নয় তো সেটা। এই দেশে স্বার্থ ছাড়া এক বিন্দু অশ্রু নেই, দোয়া নেই, সুরা নেই, প্রার্থনা নাই।

আমার দৃঢ় বিশ্বাস খালেদা জিয়া তার মনের শক্তিতে সুস্থ হয়ে উঠবেন। চব্বিশের ৫ অগাস্টের পর হাসিনা রাক্ষসের গুহা থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি যে জীবনের আলো হাওয়ায় মুক্তির প্রশ্বাস নিয়েছেন; সেখানে আরো কিছু সময় সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আপোষহীন প্রতীক হিসেবে তার বেঁচে থাকার প্রয়োজন রয়েছে।

কিন্তু প্রায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি ক্ষমতায় যেতে পারে; এই বসন্তে যে কোকিলেরা ক্ষমতা দুধের চারপাশে মাছির মতো ভন ভন করছে; হাসিনা বিরোধী অনুসন্ধানী সাংবাদিক বিএনপিকে তিনবার ক্ষমতায় দেখতে পাচ্ছে; তারেক রহমানের স্বপ্রণোদিত পরামর্শক হচ্ছে; এরা যে নতুন ফ্যাসিজম বিনির্মাণ করে আগামীর মোজাম্মেল বাবু ও শ্যামল দত্ত হতে চাইছে; এতে তো কোন সন্দেহ নেই।

খালেদা জিয়াকে মইনুল হোসেন রোডের গৃহ থেকে উচ্ছেদ; সেনাবাহিনীতে ভারতীয় মদতপুষ্ট জেনারেল তারেক সিদ্দিকির সাইডকিকদের দিয়ে সেই গৃহে মদের বোতল পাওয়ার গল্প সাজানো, খালেদাকে গুলশানের বাসায় বালির ট্রাক দিয়ে অবরুদ্ধ করে; গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে ক্ষমতা কলতলার হাসিনার সঙ্গে খালেদার কথোপকথন রেকর্ড করিয়ে একাত্তর টিভিতে আরো কিছু দলীয় সাংবাদিকের বাঁকা হাসি ও ভ্রু নাচানো নিয়ে গোবরডাঙ্গার গোবর ছোঁড়ার উতসব মাতিয়ে তোলা; কাল্পনিক দুর্নীতি মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে অন্যায়ভাবে খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠিয়ে "প্রশ্ন নয় প্রশংসা করতে এসেছি"র আসরে সারাজীবন খালেদার সুদর্শন, সুন্দর উচ্চারণকে ঈর্ষা করে আসা শেখ হাসিনা তার পরিপার্শ্ব থেকে শেখা সিপি গ্যাং কালচারে রগড় করলে চাকরস্য চাকর সাংবাদিকেরা অবদমিত পুলকে দুলে উঠেছিলো। অসুস্থ খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিতসায় বাধা দিতে স্বাধীনতার পক্ষের চিকিতসা পরিষদ কত না যুক্তি সাজিয়েছিলো। নারীকন্ঠের আইনমন্ত্রী তাকে বিদেশে না পাঠানোর পক্ষে কত অপযুক্তি দিয়েছিলো। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের তারুণ্য বাংলাদেশকে ভারতীয় ছায়ামুক্ত না করলে খালেদা জিয়ার জীবন হতো শেষ মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের মতো।

খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঘটে যাওয়া এতোগুলো অন্যায়ের সময় কোথায় ছিলো; আজকের বুদ্ধিজীবীদের শব্দ-বাক্য-মায়া-ভালোবাসা ও অশ্রুজল!

এ ভীষণ আত্মকেন্দ্রিক সমাজ। নিজের স্বার্থের বাইরে একটি শব্দও খরচ করে না এ সমাজের কথিত শিক্ষিত মানুষেরা।

বিএনপির যে নেতাকর্মীরা গুম-ক্রসফায়ার-কারাগার-আয়নাঘরের পীড়ন সহ্য করেও খালেদার হাত ছাড়েননি; তাদের কন্ঠগুলো চাপা পড়ে যাবে বসন্তের কোকিলের কুহুতানে। বিদেশে আরামে কাটানো পরিবারতন্ত্রের বিএনপি আর ৫ অগাস্টের পরে ঝলসে ওঠা ঠক প্রতারক বিএনপি ঢেকে দেবে জিয়াউর রহমানের সততার আর খালেদা জিয়ার আপোষহীনতা ও সংগ্রামশীলতার বিএনপিকে।

আমি সবসময় কাজলরেখার উপকথাকে স্মরণ করি বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায়। এখানে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন, পাকিস্তান বিরোধী আন্দোলন, ভারতের ছায়া উপনিবেশ বিরোধী আন্দোলনে রক্ত-ত্যাগ-ঘামে জীবন বাজি করে লড়াই করা মানুষেরা কাজল রেখার মতো। বাংলাদেশ রাজকুমারের শরীর থেকে সমস্ত সূঁচ তুলে দেবার পর; কাজলরেখার সমস্ত ত্যাগকে ঢেকে দিয়ে কাঁকন দাসী রাজকুমার বাংলাদেশের চোখের সূঁচটা তুলে রাজরাণী সেজে ঘুরতে থাকে। দেশটাকে কারও ঘরের দাসী বাঁদী করার বিনিময়েও ক্ষমতা পেতে যে কাঁকন দাসীর কোন অসুবিধা নেই।

৪১৬ পঠিত ... ১৬:০৯, নভেম্বর ৩০, ২০২৫

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top