আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেছেন, এই এলাকায় কোনও সমস্যা হলে গোটা রংপুর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে বাংলাদেশের থেকে।
২০২৪-এর ৫ অগাস্ট দিল্লির মনপছন্দ ফ্যাসিস্ট শাসক শেখ হাসিনা জন আন্দোলনের মুখে দিল্লিতে পালিয়ে যাবার পর থেকে; ভারতের রাজনীতিক, সেনাপ্রধান, পররাষ্ট্রমন্ত্রক, মিডিয়া বাংলাদেশকে এভাবে নানারকম হুঁশিয়ারি দিয়ে চলেছে।
১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের পরে বাংলাদেশ পূর্ববঙ্গ ও আসাম মিলিয়ে একটি বড় ভূখণ্ড পেয়েছিলো। বৃটিশ কোলাবরেটর জমিদারের ছেলেরা এর বিরুদ্ধে দৃঢ় বাম আন্দোলন গড়ে তুলে ও কবিতায় গানে বাঙালি জাতীয়তাবাদের আলেয়া দেখিয়ে বঙ্গভঙ্গ রদ করে। পরে কলকাতার হিন্দুত্ববাদী নেতারা যুক্তবঙ্গ স্বতন্ত্র রাষ্ট্র হবার পরিকল্পনা ভেস্তে দেয়; পশ্চিমবঙ্গকে হিন্দুভারতের সঙ্গে যুক্ত রাখার অভিপ্রায়ে।
হিন্দুভারতের মথ এইভাবে আসাম ও পশ্চিমবঙ্গ খেয়ে নিলে পূর্ব বঙ্গ বাধ্য হয় পাকিস্তানের সঙ্গে যেতে। কিন্তু বৃটিশ কোলাবরেটর হিন্দু জমিদারেরা পূর্ববঙ্গের জমিদারি হারানোর বেদনা কিছুতেই ভুলতে পারে না।
পূর্ববঙ্গের স্বাধীনতা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করে; স্বজনের ছদ্মবেশে হাজির হলেও; উদ্দেশ্য তখন তাদের বাংলাদেশকে পাপোষ হিসেবে ব্যবহার করে উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলো শাসন।
বাংলাদেশের প্রতি ভারতের মনোভাব, যদি তুমি করোদ থাকো, তবে তুমি বেশ; যদি তুমি মুক্ত হও, তবে তুমি শেষ।
পৌরাণিক সব শ্রেষ্ঠত্বের গল্পে ম্যাগালোম্যানিয়ায় ভুগে ভারত দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বেসর্বা হয়ে ওঠার কল্পনা লালন করতে থাকে। মালদ্বীপ, শ্রীলংকা, নেপাল, ভুটান সর্বত্র তাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নাক গলাতে গিয়ে বাড়ি খেয়ে ফিরে আসে। পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে লাগতে গিয়ে বেইজ্জত হয়। তাই তার বাহাদুরি দেখানোর একমাত্র ক্ষেত্র বাংলাদেশ। দিল্লিতে ব্যাপ্টিজম করে বাংলাদেশে পাঠায় শেখ হাসিনা ও হোসাইন মুহম্মদ এরশাদকে। একমাত্র সে বাগে আনতে পারেনি খালেদা জিয়াকে। খালেদা জিয়াকে তার মূল্য চুকাতে হয়েছে, ২০০৭-২৪ ( ৫ অগাস্ট)। এবার খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক দলটিকে বাগে আনতে পারলেই ৫ অগাস্টের আগের পাপোষটা ফেরত পাওয়া যায়।
মালদ্বীপ, শ্রীলংকা, হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ট নেপাল এমনকি ভুটানের ছেলেমেয়েরা শিক্ষিত হলেই মনে করে না যে, সাংস্কৃতিক হতে গেলেই ভারতিক হতে হয়। ফলে জনপরিসরে ভারতকে ‘এসো এসো সুরে করুণ মিনতি মাখা’ কথিত শিক্ষিত জনগোষ্ঠী নেই সেখানে। ফলে কি আঁচল বিছায়েছো বলে অশ্রু বিসর্জন করার মতো কালচারাল উইং সেখানে ভারতের জন্য বরণডালা নিয়ে দাঁড়িয়ে নেই। নেই মীরজাফর, ঘষেটি বেগম, জগতশেঠ, মহীন্দ্র রায়দুর্লভের মতো কোলাবরেটর ডিএনএ-র থকথকে কাদা।
যেহেতু বাংলাদেশ সীমান্তে বাংলাদেশী কিশোরি ফেলানিকে হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখলেও; কালচারাল উইং ব্যস্ত থাকে কাব্যপাঠে, প্রণব মুখার্জি (কোয়ালিশন ইয়ারস গ্রন্থে বর্ণিত) হাসিনাকে ক্ষমতায় আনতে সেনা প্রধান মঈন উ আহমেদকে ঘোড়া উপহার দিয়ে পূর্ব বঙ্গের জমিদারি ফেরত নিলে গোমস্তা ও খাজাঞ্চিরা ভারতীয় দূতাবাসে গিয়ে জমিদার বাবু প্রণবকে চেয়ারে বসিয়ে তাকে মাগন ঠাকুরে পর্যবসিত করে। সামান্য কিছু ব্যক্তিগত প্রাপ্তির লোভে মীরজাফর, ঘষেটি, জগতশেঠ, রায়দুর্লভের পুনর্জন্ম ঘটে।
যৌথনদীতে বাঁধ দিয়ে বাংলাদেশ মরুকরণে, বাঁধের স্লুইস গেট খুলে বাংলাদেশ প্লাবিত করে ভারত তার দাদাগিরি দেখাতে থাকে। ভারতের মিডিয়ায় কতগুলো কট্টর হিন্দুত্ববাদী সাংবাদিক সেজে সানাই বাজাতে থাকে, হাসিনা না থাকলেই জামায়াত এসে পড়ে।
হাসিনাতসির শাসনামলে অখণ্ড ভারতের পরিবেশ পেয়ে বাংলাদেশের হিন্দুত্ববাদীরা জায়নিস্টদের মতো প্যালেস্টাইন শাসনের স্বপ্ন দেখেছিলো। ৫ অগাস্টের পর সেই খুনে হিন্দুত্ববাদীদের দুই তিনজন আওয়ামী লীগ কর্মী হিসেবে জনরোষে পড়লে ভারতীয় মিডিয়া তাদের ক্ষেত্রে মাইনরিটি কার্ড খেলে অসহায় হিন্দু বলে চিহ্নিত করে। ভারতের আবদারগুলো অদ্ভুত। গুজরাটে মুসলিম গণহত্যার পুরস্কার হিসেবে যে দেশে হিন্দুত্ববাদী দল ভোটে জিতে নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হলো, মুসলিম অধ্যুষিত কাশ্মীরের আধা স্বায়ত্তশাসনের মর্যাদা কেড়ে নিয়ে সেই কৃতিত্বে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এলো হিন্দুত্ববাদীরা, গোরক্ষকরা ফ্রিজে গোমাংস পাওয়ার অভিযোগে মুসলিম নিধন করলো, প্রাচীন মসজিদের নীচে মন্দির ছিলো, এই স্বপ্ন দেখে একের পর এক মসজিদ ভাংতে থাকলো মোদি সমর্থকরা; মোদির কট্টর হিন্দুত্ববাদী শাসনে ভারতের মুসলমানের ট্র্যাজেডি প্যালেস্টাইনের নির্যাতিত মুসলমানদের সঙ্গে তুলনীয়। হিন্দুত্ববাদীদের ভারতে মুসলিম নির্যাতন করে শখ মেটেনা; তারা ইজরাইলের খুনে শাসক নেতানিয়াহুর ইজরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে প্যালেস্টাইনের মুসলমান বধে অংশ নেয়।
এইরকম মুসলমান বিদ্বেষী হিন্দু ভারত গত দশমাস ধরে যখন মিথ্যা প্রচারণা চালায়, বাংলাদেশ মৌলবাদীদের খপ্পরে! শুনতে ভীষণ পরাবাস্তব শোনায়। বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী ড ইউনূস দায়িত্ব নেবার পরেই বলেছেন, বাংলাদেশের নাগরিক এই পরিচয়টুকুই যথেষ্ট। একে ধর্ম গোত্র দিয়ে বিভাজিত করা অর্থহীন। বাংলাদেশের বহুত্ববাদী সমাজ চট্টগ্রামে হিন্দুত্ববাদী নেতা গ্রেফতারকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সহিংসতায় নিহত মুসলিম আইনজীবীর শোকাহত পিতা যখন, সবাইকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার আহবান জানান, সেখানেই বাংলাদেশ সমাজের ঔদার্য্যের ঠিকানা খুঁজে পাওয়া যায়।
কিন্তু বাংলাদেশে ‘ঢাকা টু কলকাতা’ কালচারাল সিটিং সার্ভিসের লোকেরা ৫৪ বছর সংসদে মাত্র দুটি আসন পাওয়া জামায়াত জুজু দেখিয়ে; ৫ অগাস্টের পর মুসলিম ব্রাদারহুডের জুজু হাজির করেছে। লো বর্ন লোকেরা একটু সংস্কৃতি করে কাল্পনিক আর্যতার আবেশে; আন্তর্জাতিক লিবেরেল জগতে আদৃত ড ইউনূসকে যত্রতত্র মৌলবাদী বলে বেড়ায়। শেখ হাসিনা এই থিওরি ম্যাকিয়াভেলির কাছ থেকে পেয়েছিলেন, লো বর্ণদের রিক্রুট করে ডার্টিজব করাও, আর নিজে আবির্ভুত হও মেসিয়াহ হিসেবে।
ভারত ৫ অগাস্টের পর থেকে বাংলাদেশ বিরোধী যে প্রচারণা চালাচ্ছে; তাকে সাবস্ট্যানশিয়েট করাই এই নতুন সংস্কৃতির লোকেদের কাজ। সংস্কৃতি করা মানেই কুঁচ কুঁচ করে ইউনুসের গীবত করা। ভারতেরও তেমনি, যুদ্ধ টুদ্ধ করার মুরোদ যতটুকু তার চেয়ে বেশি মুরোদ কুঁচকুঁচানি গীবতের।
আর রয়েছে শেখ হাসিনার পালিত কিছু ইসলামপন্থী যারা ভারতের মিডিয়ার নির্দেশনা অনুসরণ করে ইসলামি পেশীশক্তির শো ডাউন করে। ভারত যখন তাদের বাহুবলী বলে সার্টিফিকেট দেয়, তখন তারা রাতারাতি ব্যাঙ থেকে ফুলে হাতিতে রুপান্তরের স্বপ্ন দেখে। তারা মাজার ভাঙ্গলে, নারীদের অশ্লীল গালাগাল করলে তাদের জমজ ভাই সংস্কৃতি দাদা ঐগুলোকে টক অফ দ্য টাউন করে ভারতের গুজবের বাগানে ফুল ফোটায়।
ভারতের সেনাপ্রধান বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অনভিপ্রেত নাক গলিয়ে দ্রুত নির্বাচন চাইলে; বাংলাদেশে মঈনের ঘোড়াগুলি নির্বাচন নির্বাচন করে একসার হয়। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দ্রুত নির্বাচন চাইলে, বাংলাদেশের কালচারাল উইং মুঠো পাকিয়ে বলে, ব্যাস অনেক হয়েছে, এবার নির্বাচন দিয়ে চলে যান। ভারতের হলুদ সাংবাদিক চন্দন নন্দী গালে সুপোরি পুরে কুঁচ কুঁচ করে গুজব বানালে, বাংলাদেশে ভারতীয় দূতাবাসের মাসোহরায় শার্টের হাতায় কাফলিং লাগিয়ে ঘোরা লোকেরা ইনডিরেক্ট ফ্রি কিক নেয়। উদ্দেশ্য একটাই, ইউনূসকে ফেলে দিয়ে ঢাকায় আবার বজরং বাজার বসানো।
ড ইউনুসের পারসোনালিটিকে কোনভাবেই ক্রস করতে পারছে না নরেন্দ্র মোদি, পশ্চিমা মিডিয়া ভারতের মিডিয়ার ইয়েলো জার্নালিজমে হাসছে; সুতরাং বাংলাদেশের অভ্যন্তরের মীরজাফর, ঘষেটি বেগম, জগতশেঠ, রায়দুর্লভ দিয়ে, বিএনপিকে ক্ষেপিয়ে তুলে, সিভিল মিলিটারি এডমিনিস্ট্রেশনে উস্কানি দিয়ে, কোন রিফর্ম নয়, যেভাবে চলছিলো সেভাবেই চলুক; ‘ ইউনূস আপনি যান’ গানের পুনঃপ্রচার চলতে থাকে।
ভারত বসে থাকে না, সীমান্তে পুশ ইন করে শিশুদের ঢুকায়, রোহিঙ্গাদের বঙ্গোপসাগরে ছুঁড়ে ভয় দেখায়, তোমাদের সঙ্গেও এমন গাজা গাজা খেলতে পারি। আসামের মুখ্যমন্ত্রী ভয় দেয়, রংপুর নিয়ে নেবে, মিডিয়ায় ভীতি দেখায় চট্টগ্রামকে হিন্দু রাজ্য করবো! এইসব ঘেউ ঘেউ হুঁশিয়ারি ও হুমকি আসলে ছায়া উপনিবেশ হারিয়ে ক্ষুধিত পাষাণের উন্মাদের পুনরাবৃত্তিকর সংলাপ, সব ঝুট হ্যায়।
পাঠকের মন্তব্য