কৃষকের সাথে সরকারের প্রতারণা

১৬৭ পঠিত ... ১৭:১০, এপ্রিল ১২, ২০২৫

27

লেখা: মাহা মির্জা

আর এক সপ্তাহ পরেই বোরো ধান উঠবে। সরকারিভাবে ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা এবার অর্ধেক কমিয়ে দেওয়া হয়েছে! ৬ লাখ টনের পরিবর্তে সরকার কিনবে মাত্র সাড়ে ৩ লাখ টন!

দেখুন অবস্থা, ধান উঠবে ৩ কোটি টন, আর তারা কিনবে মাত্র ৩ লাখ টন। মজুদ সক্ষমতা আছে ২১ লাখ টনের (মজুদ সক্ষমতা এত বছরেও বাড়ল না কেন এই আলাপ আমরা বহুবার করেছি গোটা আওয়ামী আমলে)।

নতুন বাংলাদেশের 'নতুন' আদর্শে উজ্জীবিত নীতিনির্ধারক, সচিব, উপসচিবগণ কৃষকের ধানটা কিনবেন না তো কিনবেই না। তারা কৃষকের ধান না কিনে কিনবে মিলারদের চাল!

এই যে কৃষি মন্ত্রণালয়-খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে প্রভাবশালী চালকল মালিকদের আজীবনের আঁতাত, এই যে কৃষকের স্বার্থ না দেখে, মিলারদের স্বার্থ দেখা, এই যে কৃষকের ঘাম নিংড়ানো ফসলের ন্যায্য মূল্য নিয়ে এই দেশের রাজনীতিতে কেউ টু শব্দ করে না, এই যে শত শত সংস্কারের ডামাডোলে কৃষক অচ্ছুৎ, কৃষক পরিত্যক্ত, কৃষক তৃতীয় শ্রেণির নাগরিক, সবকিছুর সংস্কার হবে, কিন্তু কৃষি খাত সংস্কারযোগ্য না, এই যে কৃষকের গল্পটায় কারও কোনো আগ্রহ নেই, এই যে যুগের পর যুগ ধরে একটা গোটা জনপদকে ভাত খাওয়াতে আধপেটা কৃষকের ভর্তুকি, এই যে একটা নির্মম সুসংগঠিত শোষণ—এসব বারবার মনে করিয়ে দেয়, এই দেশের মাটির সঙ্গে মিশে থাকা স্থানীয় বিনিয়োগ, স্থানীয় অর্থনীতি, স্থানীয় পুঁজি, স্থানীয় বেসরকারি খাত, স্থানীয় উদ্যোক্তা, স্থানীয় স্টার্টআপ, স্থানীয় উদ্যোগ, স্থানীয় ঘাম, স্থানীয় শ্রমের আসলে কোনো মূল্য নেই, কদর নেই, সম্মান নেই।

এই দেশে কৃষকের উৎপাদন আর কৃষকের রক্ত নিংড়ানো বিনিয়োগের জন্য কোনো সম্মেলন নেই, অবকাঠামো নেই, কোনো স্মার্ট উপস্থাপনা নেই।

প্রত্যেকটা অর্থনৈতিক অঞ্চল, ইপিজেড, টেক সিটিতে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রতিশ্রুতি আছে, কিন্তু কৃষকের সেচকে সহজ করার জন্য কোনো প্রতিশ্রুতি নেই। সেচের পানি না পেয়ে এই দেশের কৃষক উদ্যোক্তাকে তাই আত্মহত্যা করতে হয়।

কিন্তু ধানের গুদাম সক্ষমতা বাড়ানো, শীতকালীন সবজি সংরক্ষণের জন্য কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণ করা, সেচের পানি সহজলভ্য করা, সরকারি প্রতিষ্ঠানের বীজ সরবরাহের পরিমাণ বাড়ানো—এইসব গরিব ইস্যু নিয়ে আজকাল কথা বলতেও অস্বস্তি হয়। এগুলোতে হাইপ নেই, আগ্রহ নেই, হার্ভার্ড, অক্সফোর্ড নেই।

আমি তো মনে করি দেশের আড়াই কোটি কৃষকের জীবনকে নরক বানিয়ে রাখার দায় নিতে হবে 'নতুন' বাংলাদেশের প্রত্যেকটা স্টেকহোল্ডারকে।

গতকাল দেশের ৪৩ নাগরিক সরকারের এই 'খয়রাতি'র মতো চাল কেনার ঘোষণাকে 'উপহাস' বলে বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিটা পড়লে কৃষকের সঙ্গে সরকারের প্রতারণার একটা চেহারা পাওয়া যাবে।

নিউজ-১

নিউজ-২

১৬৭ পঠিত ... ১৭:১০, এপ্রিল ১২, ২০২৫

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top