আয়নাঘরের অন্য গল্প

১০০ পঠিত ... ১৭:৩৯, জানুয়ারি ২৩, ২০২৫

9

লেখা: নাবিলা ইদ্রিস

গুম কমিশনে আমরা গোপন বন্দিশালাগুলোর আলামত ধ্বংসের মাত্রা দেখে ভীষণ কষ্ট পেয়েছি এবং এ কারণেই সেপ্টেম্বরের প্রথম প্রেস কনফারেন্স থেকে এ বিষয়ে সতর্ক করে আসছি। বিভিন্ন বাহিনী গত ১৫ বছরের অপরাধের প্রমাণ সিস্টেম্যাটিকালি ধ্বংস করেছে। এটি শুধু ৫ আগস্ট পর্যন্ত ক্ষমতাসীনদের দ্বারা ঘটেনি—যারা নিজেদের অপরাধ ঢাকতে চেয়েছিল—বরং কিছু ক্ষেত্রে তাদের দ্বারাও ঘটেছে যারা পরবর্তীতে এই পোস্টগুলোতে এসেছে। যারা অপরাধে সরাসরি জড়িত ছিলেন না তারাও যখন আলামত নষ্ট করেন, তা আসলে দায়মুক্তির সংস্কৃতির গভীর শিকড়ই ফুটিয়ে তুলে।

অনেক স্থানে টাইলস উপড়ে ফেলা হয়েছে (কিন্তু কর্নারে খুঁজলে ঠিকই ইন-ট্যাক্ট টাইলস পাচ্ছি), দেয়াল ভেঙে ফেলে সেলের আয়তন বড় দেখানো হয়েছে (কিন্তু সিলিঙে পূর্বের দেয়ালের চিহ্ন রয়ে গিয়েছে), এবং দেয়াল রঙ করে বন্দিদের সব লিখিত আকুল আর্তনাদ তো ঢেকে ফেলেছেই। আমি নিজ চোখে দেখেছি গুমের সত্যকে মুছে ফেলার দেশব্যাপী একটি সুপরিকল্পিত প্রচেষ্টা।

তবুও, ভুক্তভোগীদের অসীম সাহস ও ধৈর্যের জন্য আমরা সঠিকভাবে অনেক গোপন বন্দিশালার অবস্থান শনাক্ত করতে পেরেছি। যদিও অধিকাংশ সময় চোখ বাঁধা থাকত এবং অনেকেই হাতকড়া পরা ছিলেন, তারা তাদের আশপাশের পরিবেশ বোঝার অসাধারণ কৌশলও বের করেছিলেন। অনেকেই চোখের বাঁধনের নিচ দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখতেন, যদিও ধরা পড়লে আবার নৃশংস মার খেতেন। তাদের অসংখ্য সাক্ষ্যের জোরেই আমরা এই সুবিশাল জিগস পাজেলের অনেক টুকরো একত্রিত করতে পেরেছি। একজন একটি বিষয় বর্ণনা করতেন, অন্যজন আরেকটি। এভাবে শত শত সাক্ষ্য শোনার পর ধীরে ধীরে গোপন বন্দিশালাগুলোর মানচিত্র আমাদের মনে তৈরি করতে পেরেছি। এটি ছিল অত্যন্ত জটিল এবং সময় সাপেক্ষ কাজ। আমি এখনও মনে করতে পারি প্রথম কয়েক সপ্তাহে আমরা কীভাবে বিভ্রান্ত বোধ করতাম, ঘণ্টার পর ঘণ্টা সাক্ষ্য বিশ্লেষণ করতাম, যা এখন আমাদের জন্য মাত্র কয়েক মিনিটের কাজে পরিণত হয়েছে।  

কাজটি আরও জটিল ছিল কারণ এই বন্দিশালাগুলোর অবস্থান স্থির ছিল না। নানাবিধ কারণে এগুলো বারবার সংস্কার করা হয়েছে, পলিটিক্যাল হাওয়া বদলের সাথে গার্ডদের বিহেভিয়ারও বদল হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, CTTC বন্দিদের সাক্ষ্য ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হয়। এই সময়ে ওখানে একটি সম্পূর্ণ নতুন ভবন নির্মিত হয়েছিল, এবং কার্যক্রম ধীরে ধীরে বাইরের টিনের ঘরগুলো থেকে অভ্যন্তরের বিশেষায়িত সেলে স্থানান্তরিত হয়েছিল। বন্দিদের বর্ণনাও তাল মিলিয়ে পরিবর্তন হতে থাকে। ২০১৬ এর TFI গার্ডদের ব্যবহার আর ২০২০ এর ব্যবহার এক না। এই পার্থক্যগুলো বুঝতে সময় লেগেছে। স্পেশালি কারণ জবানবন্দিগুলো তো আর ক্রনোলজিকালি কালেক্ট হয় না!

যাহোক, দীর্ঘ পরিশ্রমের ফলে, আমরা গত ১৫ বছরে এই সেলগুলোর চেহারা ও অবস্থানের পরিবর্তনের একটি সময়ভিত্তিক মানচিত্র মোটামুটি ভাবে তৈরি করতে পেরেছি যা এখনও প্রতিনিয়ত আপডেট করছি। এই গোটা কাজটি বন্দিদের অসীম সাহসিকতা এবং কমিশনের কঠোর অধ্যবসায়ের এক জলজ্যান্ত সাক্ষ্য।

 

১০০ পঠিত ... ১৭:৩৯, জানুয়ারি ২৩, ২০২৫

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top