পদ্ম আলম-এর ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে
গতকাল দেখলাম একটা মেয়ে পোস্ট করেছে রাস্তায় ক্যাটকলিং কি পরিমাণে বেড়েছে ইদানিং। সেই পোস্টে দেখি হাহা রিঅ্যাক্টে ভরে গেছে। সেটা দেখে মনে পড়লো কদিন আগেই আমার সাথে রাস্তায় একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটে। আমি আর আম্মু বাজার করছিলাম। ওই বাজার করাটা আমার জন্য খুবই স্পেশাল ছিলো। কাউকে আজ পর্যন্ত জানাইনি। কিন্তু, আমার এ বছরের জন্মদিনে আমি নিজের টাকায় বাজার করে, নিজে রান্না করে কিছু স্ট্রিটকিডকে খাওয়াই। সেই বাজারই করছিলাম। আমি এত খুশি ছিলাম… সেজেগুজে বাজার করতে গেছি। আমার পরিচিতরা জানে আমার সাজ মানে কপালে একটা ছোট্ট টিপ থাকবেই। সেদিনও ছিল। বাজারের মধ্যে হুট করে আমার কাঁধে হাত পড়ে একটা। ফিরে দেখি এক দাড়িওয়ালা লোক আমার গায়ে হাত দিয়ে আমাকে ডাকছে। তারপর আমাকে জিজ্ঞেস করে, তুমি হিন্দু না মুসলমান? আমি কোনো উত্তর না দিয়ে হেঁটে চলে যেতে নেই। সে আমাকে আবার আটকায়। এরপর বলে, কপালে এটা কি তোমার? তুমি জানো না এগুলো কারা পরে?
আমি কোনো জবাব না দেয়ায় পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আমার আম্মুকে সে জেরা করতে থাকে যে আম্মু কেন খেয়াল রাখে না এসবের? আমি আম্মুর হাত ধরে টেনে নিয়ে আসি। আমার মনটা পুরো ভেঙে যায়। যে আনন্দ নিয়ে বাজার করতে গেছি তার ছিঁটেফোঁটাও থাকে না। আম্মু কী বলবে বুঝতে না পেরে ডিমের প্যাকেট আমার হাতে দিয়ে বলে, এগুলো নিয়ে ঘুরলে ভাঙবে। তুমি এগুলো নিয়ে বাসায় চলে যাও। বাকি বাজার আমি নিয়ে আসছি।
যাই হোক। এই ঘটনা আমি এতদিন শেয়ার করিনি। এর কারণ, এই ঘটনায় আমার পাশে আমি কাউকেই পাবো না। সবার কাছেই আমার টিপ পরাটা মুখ্য হবে। অথচ আমার অনুমতি ছাড়া আমার গায়ে হাত দেয়া, আমার স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা লোকটার পক্ষে কথা বলার মানুষের অভাব থাকবে না। কারণ, ওইযে দিনশেষে মেয়েমানুষ অতটুকুই স্বাধীন যতোটুক তাকে স্বাধীন থাকতে দেবে, ততটুকু নয় যতটুক সে থাকতে চায়। আমার একটা গোটা সুন্দর দিন নষ্ট হয়ে গেলো ওই একটা ঘটনায়। এই দুঃখ আমি পুষে রেখেছি আরও সহস্র দুঃখের মতোন। মেয়ে হয়ে জন্মেছি আর দুঃখ পুষব না তা কী করে হয়?
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন