প্রসঙ্গ বৃষ্টি: রিকশা-উবারের অর্থনৈতিক ব্যবচ্ছেদ

৯৬ পঠিত ... ১৮:১১, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৪

38

সকাল থেকে ঝিরঝির করে বৃষ্টি নামছে। রাস্তায় বাস থেকে নেমে অফিসে যাবার জন্য রিকশা নিতে চাইলে ভাড়াটা প্রত্যাশিতভাবে বেশিই চাইল রিকশাওয়ালা মামা। এই ঝুম বৃষ্টিতে ৩০ টাকার রিকশা ভাড়া ৫০ চাওয়া খুব একটা অস্বাভাবিক না। রিকশায় উঠে হুড তুলে, সামনে পলিথিন নিয়েও খানিকটা ভিজেই যাচ্ছিলাম। একে তো ভাড়া দ্বিগুণ, তার ওপর শরীরও ভিজে যাচ্ছে। মেজাজ এমনিতেই তুঙ্গে। 

অফিস শেষে বাসায় যাবার সময়ও ঝুম বৃষ্টি। রিকশা কিংবা বাসে করে ভিজে ভিজে বাসায় গেলে রাতে জ্বর ঠান্ডা বাধবে ভেবে উবার দিয়ে যাবার প্ল্যান করলাম।

বৃষ্টি হলেই উবারের চাহিদা বেড়ে যায়, আর চাহিদার সমানুপাতিক হারে বাড়ে ভাড়া। ওঠার আগেই দেখছিলাম ভাড়া অন্য দিনের চেয়ে ২০০ টাকা বেশি। উবারে দামাদামি করার সুযোগ নেই বলে কমানোও যায় না।   

হঠাৎ মনে হলো, রিকশাওয়ালারা কি বৃষ্টির দিনে আসলেই ভাড়া বেশি চায়? বৃষ্টির দিনে ওরা আমাদেরকে আসলে কী কী সেবা দেয়? চলেন দেখি। নিজে বৃষ্টিতে ভিজে আপনাকে শুকনা রেখে, নিরাপদে গন্তব্যে নিয়ে যায়। আপনি যেন না ভেজেন সেজন্য একটা প্লাস্টিকের পর্দা দেয়।

বৃষ্টিতে ভেজার কারণে তার স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয়। বেশিরভাগই জ্বরে ভোগে। দেখা যায়, একবেলা বৃষ্টিতে ভিজে পরের তিনদিন সে আর রিকশা নিয়ে বেরই হতে পারেনি। এই ঝুঁকি নিয়েই কিন্তু সে আমাদেরকে গন্তব্যে নিয়ে যায়, নিরাপদে, না ভিজিয়েই।

এই যে তারা অসুস্থ হয়, ডাক্তার কোথায় দেখায় জানেন? বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ডাক্তার না দেখিয়েই নাপা খেয়ে নেয়। অথবা খুব বেশি শরীর খারাপ হলে হাতুড়ে ডাক্তারের কাছে যায়।

খায় কোথায়? ফুটপাতে। বাসি, তৈলাক্ত। যখন যা পায়। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে এই পেশাদার শ্রেণিটি আমাদেরকে রোমান্টিসিজমে ভাসায়। আমাদেরকে রোমান্টিসিজমে ভাসাতে ভাসাতে ওদের গড় বয়স হয়ে গেছে ৩৮ থেকে ৪৫। সেজ পাবলিকেশনে শরীফা বেগম ও বিনায়ক সেনের একটা গবেষণা পেপারে এমনটাই বলা হয়েছে।

এর বাইরে তো পুলিশের পিটানি, আমাদের যাবতীয় রাগ ঝাড়ার ভার, বাইক-সিএনজি-বাস-কারওয়ালাদের গালি। খেয়াল করলে দেখবেন, দেশে সবচেয়ে সহজে যে পেশাজীবী শ্রেণির ওপর আমাদের হাত উঠে যায়, সেই পেশাজীবী শ্রেণিটি এরাই। রিকশাওয়ালারাই।

নিজেদের জীবন এভাবে এই শহরের জন্য উৎসর্গ করে, এই শহরের সেবায় নিয়োজিত করে রিকশাওয়ালা মামারা একটু বেশি ভাড়া চাইলে আপনাদের গায়ে লাগে। আমার মনে প্রশ্ন জাগে, এই শহরের জন্য নিজের জীবন দেওয়া এই রিকশাওয়ালাদের প্রভিডেন্ট ফান্ড কই? সেটা তো দিলেন না কেউ।

শ্রমের প্রকৃত মূল্য হিসেব করলে এই শহরের সবাই রিকশাওয়ালাদের কাছে ঋণী।

যাই হোক, এইসব ভাবনা চলেন বাদ দেই। আরেকটা উবার ডাকি।

৯৬ পঠিত ... ১৮:১১, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৪

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top