জনসংযোগের লক্ষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সমন্বয়করা দেশের বিভিন্ন বিভাগে, জেলায় উপজেলায় সফর করছেন। সেখান তারা ছাত্র-জনতার সাথে মত বিনিময় করবেন, তাদের কথা শুনবেন।
গতরাত থেকে ফেসবুকে একটা নোটিশ ঘুরতে দেখা যায়। ফেসবুকে পাওয়া নোটিশটিতে ৮ সেপ্টেম্বর হতে সমন্বয়কদের বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে সফরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। নোটিশটিতে স্বাক্ষর করেছেন, বাংলাদেশ পুলিশের অ্যাডিশনাল ডিআইজি (ওভারসিজ অ্যান্ড ইউএন অপারেশনস)।
নোটিশটি নিয়ে রাত থেকে ফেসবুকে নানান সমালোচনা-আলোচনা চলছে। আরিফুজ্জামান তুহিন নামের এক বাংলাদেশি সাংবাদিক নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা করেন।
নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে তিনি লেখন—
জনগণের টাকায় সমন্বয়কেরা প্রটোকল পাবে!!
বৈষম্যবিরোধীতা করে দেশে একটি গণ-অভ্যুত্থান হয়ে গেল। এখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতাদের সরকারি খরচে প্রটোকল দেওয়া হবে। তারা সারা দেশে সরকারি খরচে দেশ সফর করবেন। আর প্রটোকল দেবেন ডিসি সাহেবরা, এসপি সাহেবরা।
এটা তো এই আন্দোলনের স্পিরিটের সাথে বেঈমানি। এটা তো পরিষ্কার বৈষম্য। এই কারণে মানুষ অকাতরে জীবন দিয়েছিল?
এটা কত বড় প্রহসন ভাবতে পেরেছেন? আমাদের ট্যাক্সের টাকায় ওনারা কেন সরকারি প্রটোকল নেবেন? কেন? ওনারা দেশ সফর করবেন, দল গঠন করবেন ভালো কথা। সারা দেশ ঘুরেন, প্রয়োজনে দুনিয়া ঘুরেন কিন্তু জনগণের টাকায় কেন?
দেশ কি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন উপদেষ্টারা চালাচ্ছেন? নাকি সমন্বয়কেরা চালাচ্ছেন? এটা তো দেখছি সরকারের প্যারালালে আরেকটা সরকার। সেই প্যারালাল সরকারের খরচ আবার সরকার থেকে দিচ্ছে? এর থেকে বড় বৈষম্য কী আর হতে পারে? এসব কী হচ্ছে দেশে?
এরকম চলতে থাকলে পরিস্থিতি যেদিকে যাবে তা তো কারও নিয়ন্ত্রণে থাকবে না। এমনিতে বোঝা যাচ্ছে অন্তবর্তীকালীন সরকারের নিয়ন্ত্রণে অনেক কিছু নেই।
রাতে চিন্তক ও লেখক ফরহাদ মজহারকেও আরিফুজ্জামান তুহিনের স্ট্যাটাসটি নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে শেয়ার করতে দেখা যায়। যদিও সকালে ফরহাদ মজহারের আইডিতে গিয়ে সেটি আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা করে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লেখেন, বাংলাদেশ অর্থনীতিবিদ ও লেখক জিয়া হাসান। এই ঘটনাকে তিনি ‘অ্যাবসুলেটলি রিডিকুলাস’ বলে মন্তব্য করেন।
সমন্বয়ক ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এখনও অফিশিয়াল কোনো মন্তব্য না পাওয়া গেলেও জিয়া হাসানের পোস্টে বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।
তিনি বলেন—
জিয়া ভাই,আমরা কোনো রাষ্ট্রীয় সফরে আসিনি।
আমরা রাষ্ট্রের সাধারণ নাগরিক হিসেবে ছাত্র-জনতার কাছে এসেছি। একজন সাধারণ নাগরিক যেমন নিরাপত্তা পায়, আমরাও তেমন নিরাপত্তা চাই। এর বেশি নয়। এই নোটিশের বিষয়ে আমরা অবগত নই; কিংবা সরকারের কাছে আমি এমন কিছু চাইনি।
এই ঘটনায় ফেসবুকে মন্তব্য করেছেন নির্মাতা আশফাক নিপুনও। জিয়া হাসানের স্ট্যাটাসের একটা অংশ কোট করে সেটি নিজের প্রোফাইলে শেয়ার করেন আশফাক নিপুন।
সমন্বয়কদের সফর ও প্রটোকোলের নোটিশকে রেগুলার ক্রাইম প্রিভেনশন বলছেন নুরুজ্জামান লাবু নামের এক সাংবাদিক। নিজের ফেসবুক আইডিতে তিনি লেখেন—
সমন্বয়কদের নিরাপত্তা জনিত চিঠিটা নিয়ে হুদাই হাউ কাউ করতেছে বেহুদা বাঙালি। এইটা নিয়মিত নিরাপত্তা ব্যবস্থার একটা অংশ মাত্র। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ব্যক্তি বা অনুষ্ঠানের সেনসিটিভিটি ও ঝুঁকি বিবেচনা করে। সমন্বয়কদের জেলা সফরের মতবিনিময় সভাগুলোর সেনসিটিভিটি ও ঝুঁকি আছে। তাই আগেভাগে নিরাপত্তা জোরদার করা ক্রাইম প্রিভেনশনের একটা পার্ট।
আজাইরা এই বিষয় নিয়ে হাউ কাউ না করে বরং সমন্বয়কদের কেউ কেউ যে একাত্তরের আকাঙ্ক্ষা বা ইতিহাস বাদ দিয়া আলোচনা ওঠানোর চেষ্টা করছে, সেইটার সমালোচনা করেন। দ্বিমত প্রকাশ করেন। কারণ একাত্তরই বাংলাদেশ। পরিষ্কার বলে দেন, ৭১ বাদ দিয়ে কোনো কিছুই এই দেশে করতে দেওয়া হবে না। ন্যায়ের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন, সঙ্গে আছি।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন